অপ্রিয় ছুটির দিন শুক্রবার

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে যখন আমরা দিনের আলো বাঁচানো সময় থেকে আবার বাংলাদেশ মান সময়ে ফিরে যাব তখন রবিবার ছুটির দিন ঘোষিত হলে খুশি হব। ‘সাফটা’র সম্ভাবনা যখন দিনে দিনে একটু একটু এগোচ্ছে এবং অনেকদিন থেকে পূবের ‘আসিয়ান’-এর সঙ্গে আমাদের ভালো ব্যবসা হচ্ছে তখন, এই দুই ব্যবসা-অক্ষের মধ্যে একমাত্র ‘শুক্রবার’ বন্ধ থাকা দেশ হয়ে থেকে যে আমাদের কত ক্ষতি হচ্ছে তা অনেক ব্যবসায়ী ও তাদের কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রতিনিয়তই টের পাচ্ছেন। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস শুক্রবারের একটি সিদ্ধান্ত আমরা পাচ্ছি শনিবার বা রবিবার, এবার সেই সিন্ধান্তের সাথে জড়িত ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বা নানা সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজগুলো যদি আমরা রবিবারে শেষ করতে পারি তাহলে আমাদের বিদেশের ব্যবসা সহযোগীরা তা জানতে পারছেন তারপর দিন সোমবার। কিন্তু কোনো কারণে যদি শুক্রবারে নেয়া সিদ্ধান্তটির বাস্তবায়নে আরো আলোচনার প্রয়োজন হয় তাহলে তো সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকে না।এতো গেল ব্যবসার দিক, ছুটির দিকেও একটি পুরো ছুটির দিন হিসেবে আমরা শুক্রবারকে পাচ্ছিনা। দুপুরের খাবার দাবার সেরে দিবানিদ্রা সাঙ্গ করে তবে আমাদের ছুটি, কারণ বেশির ভাগ লোকেরই নামাজ, নামাজের প্রস্তুতি, সকালের একটু বেশি ঘুম এসবেই দিনের বেশির ভাগ সময় চলে যায়। সেই যে স্কুলে থাকতে রবিবারের ছুটিগুলো আজো স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে তার কারণ সেই ছুটি ছুটিই ছিল, স্কুলে থাকতেই যখন শুক্রবার ছুটির ঘোষনা এলো, তখন থেকে প্রতিটি ছুটির দিনকে আর ছুটির দিন মনে হয়নি, মনে হয়েছে স্কুলে যেতে হয় না এমন একটি দিন, বিকেলে স্কুল জীবনে তো আমরা কাজের দিনেও মুক্ত ছিলাম। এবং সেই থেকে শুক্রবার ছুটির দিনটাকে আমি ঘৃণা করে আসছি, হ্যাঁ, আসলেই এই ছুটির দিনটাকে আমি ঘৃণাই করি। আজ ব্যবসায়িক স্বার্থের কথা ভেবেও যদি আমার পুরনো ছুটির দিন রবিবারকে, সরকারের সিদ্ধান্তে ফিরে পাই, তাহলে আমার সামাজিক জীবনে এ এক চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে, আমি আমার প্রিয় ছুটির দিন রবিবারকে ফিরে পাব অপ্রিয় ছুটির দিন শুক্রবার কে বিদায় দিয়ে।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৯ comments

  1. বিনয়ভূষণ ধর - ৭ আগস্ট ২০০৯ (১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ)

    মাসুদ করিম’কে অনেক……অনেক ধন্যবাদ এরকম একখানা সময় উপযোগী লেখা পেশ করার জন্য। আসলে ব্যাপারগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে সাম্প্রদায়িক চিন্তা-ভাবনা থেকে, যেভাবে আমাদের পহেলা বৈশাখের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। সামনে আরো এ ব্যাপারে লেখার ইচ্ছে আছে…………

  2. রায়হান রশিদ - ৭ আগস্ট ২০০৯ (১২:২৭ অপরাহ্ণ)

    পুরোনো একটা অস্বস্তির কথা মনে পড়ে গেল পোস্টটি পড়ে। মনে পড়ছে শুক্রবার এলেই সবখানে কেমন একটা ধর্মীয় ধর্মীয় আবহ, মুসল্লিদের আতর পাঞ্জাবী গোলটুপি লাগিয়ে মসজিদের দিকে ছুটাছুটি! মাইকে ইমাম সাহেবের খুতবা ভেসে বেড়াতো পাড়ায় পাড়ায় যার এক অক্ষরও বুঝতে পারতাম না। দেশটা কেমন আরব দেশ হয়ে যেত এক দুপুরের জন্য! আর সেই সাথে জুম্মার নামাজ থেকে পালানোর জন্য একশো একটা ছুতো নাতা করে ঘরের এবং পাড়ার বাকীদের নজর যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা! “এই তুমি নামাজ পড়তে যাচ্ছো না?” – ধর্মীয় নীতিবলে বলীয়ান মানুষের এসব অবাক জিজ্ঞাসার সামনে কেমন যেন কুঁকড়ে থাকতো হোতো। প্রস্তুত উত্তরগুলো কিংবা উপলদ্ধিগুলো খুলে বলতে গেলে এঁদের মনে/ধর্মবোধে আঘাত দিতে হয় তাই এটা সেটা বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলাটাই সর্বোত্তম পন্থা মনে হোতো। আর পুরো সময়টা ছাদ বা পাড়ার কোনো কোণে সিগারেট ফুঁকে ফুঁকে আর নানা আকাশ পাতাল কল্পনা করে কাটিয়ে দেয়া – সে অনেক কথা . . .

  3. মোহাম্মদ মুনিম - ৮ আগস্ট ২০০৯ (২:২১ অপরাহ্ণ)

    “তুমি নামায পড়ো না? তোমার বাবা মা কিছু বলেন না?” আমার এক দুরসম্পর্কের খালা প্রশ্ন করলেন। এর আগে অসংখ্যবার আমার বাবা আমাকে ঈদের নামায আর জুমার নামায না পড়ার জন্য বকাঝকা করেছেন। আমি খুব একটা গা করিনি। কিন্তু আমার খালার প্রশ্নটি আমাকে বেশ ধাক্কা দিলো। আমি নিজে নামায পড়ি না, তবে নামায পড়াটাকে অপরাধ বা নিম্ন সাংস্কৃতিক মানের কিছুও মনে করিনা। কিন্তু নামায পড়াটা যদি social acceptance এর মাপকাঠি হয়ে দাঁড়ায়, সেটা খুব একটা ভাল লক্ষন নয়। ধর্মীয় বিশ্বাস বা আচরন একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার, নামায পড়া না পড়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করাটা যে একটা সভ্য নাগরিক আচরন নয়, সেটা আমাদের দেশের মধ্যবিত্তদের অনেকেই জানেন না।
    শুক্রবারে ছুটির দিন হওয়াতে জুমার নামায নিয়ে যে সাজ সাজ রব, সেটা নামাযের ব্যাপারটিকে আমাদের নাগরিক জীবনের একটি অংশ করে ফেলেছে। শুক্রবারে ছুটির ব্যাপারটি করেছিলেন এরশাদ সরকার (যদ্দুর মনে পড়ে)। এটি করে কি ঘোড়ার ডিম হয়েছে কে জানে, লোকে কি আগে জুমার নামায পড়েনি? গোটা ব্রীটিশ আমলে পড়েছে, পাকিস্তান আমলে পড়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশে কি এমন হল যে জুমার নামাযের জ়ন্য পুরোদিনের ছুটি লাগে? একটা ব্যাপার হয়তো হয়েছে, পশ্চিমা বিশ্বে moderate Muslim nation এই জাতীয় একটা খেতাব পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ এমন এক অদ্ভুত দেশ যেখানে লোকে নামায পড়ে, আবার কবিতাও পড়ে, আবার মোটামূটি একটা গনতন্ত্রও আছে। আমেরিকায় আসার পরে আমাকে বেশ কয়েকবার মুসলিমরা কটা বিয়ে করতে পারে অথবা চাইলেই বউ মেরে ফেলতে পারে কিনা এই জাতীয় অদ্ভুত প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে। আমার দেশটি যে রুপকথার মত একটি মুক্তি্যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে, যেখানে মেয়েরা লাল পাড়ের শাড়ী পরে পহে্লা বৈশাখ পালন করে, যেখানে কিশোরেরা গভীর আবেগে খেলার মাঠে লাল সবুজ পতাকা উড়ায়, সেটা নিয়ে কেউ কখনোই প্রশ্ন করেননি।

  4. রায়হান রশিদ - ২১ আগস্ট ২০০৯ (১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ)

    শুক্রবার নিয়ে ভিন্ন মেজাজের একটি পোস্ট

  5. Aero - ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১১:০৭ অপরাহ্ণ)

    সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ এছাড়া আর কিই বা বলার আছে?

  6. মাসুদ করিম - ১২ জুন ২০১১ (১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ)

    সরকার শুক্রবারকে সরকারি কার্যদিবস হিসাবে ঘোষণা দিয়ে একটি দিনকে অন্তত হরতালের আওতা থেকে বের করে আনতে পারে। আমার মনে হয় না বাংলাদেশে কেউ শুক্রবারে হরতাল ডাকবে। তার মানে এখনকার পাঁচ কার্যদিবসের সর্বোচ্চ পাঁচ দিনই হরতালের আওতায় চলে আসতে পারে — কিন্তু শুক্রবারকে কার্যদিবস ঘোষণা করে রবিবারকে ছুটির দিনে নিয়ে গেলে পাঁচ কার্যদিবসের সর্বোচ্চ চার দিন হরতালের আওতায় থাকবে।

  7. মাসুদ করিম - ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ (৬:০০ অপরাহ্ণ)

    মাঝে মাঝে এসব উটকো স্মৃতি মনে পড়লে বেশ হাসি পায়, আহা, আমরা এভাবেও ভেবেছি। আজ আমার এক প্রয়াত বন্ধুর কিছু কথা মনে পড়ল। মায়েখেদানো বাপেখেদানো এতিমখানাখেদানো মেকানিকনবিশ বস্তিবাসী ফুটবলখেলার বন্ধুটি আমার খুব আপত্তি করেছিল, রবিবারের ছুটি শুক্রবারে গেলে তোর ক্ষতি কী (তখন সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল রবিবার, শুক্রবারে নেয়ার তোড়জোড় চলছিল)? ওরা কি ওদের রবিবারের গির্জায় যাওয়ার দিনের ছুটি পাল্টে শুক্রবারে আনবে? আমি বলেছিলাম, তাহলে চল সারা পৃথিবী আমরা সোম মঙ্গলবারে ছুটি নিয়ে যাই বুধবার থেকে কাজ শুরু হবে। বন্ধুটি বলেছিল, আমরা জাতিসংঘে যাব?

  8. মাসুদ করিম - ২৩ জুন ২০১৩ (১০:১২ অপরাহ্ণ)

    উত্তোরত্তর শিল্পায়নের জেরে বিশ্বের অর্থনীতির সাথে সময়ের আরো সামঞ্জস্য রক্ষার তাগিদে সৌদিআরবের সাপ্তাহিক ছুটি খেলাফতি বৃহষ্পতি-শুক্র থেকে বাংলাদেশের মতো শুক্র-শনিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে আমাদের বিশ্বের অর্থনীতির সাথে সময়ের আরো সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য শনি-রবি সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ার সম্ভাবনাটা যুক্তিগত দিক থেকে যদিও বাড়ল কিন্তু আবেগগত দিক থেকে শূন্যের কোঠায় চলে গেল — কারণ এখন মুসলমানের মন ফুরফুর করবে, সৌদিআরব আর আমাদের সাপ্তাহিক ছুটি একই, শুক্র-শনিবারে!

  9. মাসুদ করিম - ৩১ আগস্ট ২০১৬ (৯:২৫ পূর্বাহ্ণ)

    হ্যাঁ তিনদিন ছুটি হোক – শুক্র শনি রবি – এতে কর্মক্ষমতাই শুধু বাড়বেনা বৈশ্বিক বাণিজ্যের অনেক সমস্যাও মিটে যাবে।

    সপ্তাহে তিনদিন ছুটি থাকুক

    সপ্তাহে কতদিন অফিস থেকে ছুটি পান?‌ কেউ একদিন। কেউ বা শনিবার এবং রবিবার এই দু’‌দিন। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন এটা যথেষ্ট নয়। ‌সুস্থ দীর্ঘজীবন পেতে দরকার সপ্তাহে কমপক্ষে তিনদিনের ছুটি। সিটি ইউনিভার্সিটি লন্ডনের সমাজবিদ্যার গবেষক অ্যালেক্স উইলিয়ামস। তাঁর দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং উপমহাদেশে পেশাগত চাপ সবচেয়ে বেশি। ফলে সেখানে সপ্তাহে অন্তত তিনদিন ছুটি ঘোষণা করা উচিত। কী করে কাটাবেন এই তিনটি দিন?‌ সেটাও বলে দিচ্ছে অ্যালেক্স। তাঁর পরামর্শ, ছুটির একটা দিন কাটান পরিবারের সঙ্গে। পারলে একসঙ্গে সিনেমা দেখুন। কিংবা হোক নিখাদ আড্ডা। কখনও বাইরে ঘুরতেও যেতে পারেন। একটা দিন রাখুন নিজেকে সময় দেওয়ার জন্য। ছবি আঁকা, বই পড়ার মতো পছন্দের কাজ করুন। আর তৃতীয় দিনে সমস্ত চাপ ভুলে একেবারে বিশ্রাম। এতে কর্মক্ষমতা ২০ শতাংশেরও বেশি বাড়বে বলে মনে করেন অ্যালেক্স। ‌‌

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.