মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দিতে গুরুচাপ লঘুচাপ দুটোই সমান শক্তিশালী – সভ্যতাকে ঘাড় ধরে টেনে নামাতে, লেখক শিল্পীর নির্বাসন নিশ্চিত করতে, তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে ‘মৌলবাদের মুখ, তার ভাষা এবং মতলব’ সমান সক্রিয়।[...]

মুহম্মদ হাবিবুর রহমান তার ‘বাংলাদেশের তারিখ’ বইয়ে ১৯৯৪ সালের ৯ আগস্ট তারিখে ‘তসলিমা নাসরিনের দেশত্যাগ’ কথাটি ঠিক লেখেননি। এটা ছিল মোটা দাগের নির্বাসন দণ্ড : নিশ্চিত গলাধাক্কা। মৌলবাদের কাছে পরাজিত রাষ্ট্র ও সরকার সেদিন তসলিমা নাসরিনকে বাংলাদেশ থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিল। সেসাথে দেশের পত্রপত্রিকা ও প্রকাশকরা তার কলাম ও বই প্রকাশও বন্ধ করে দিয়েছিল।

১৯৯৮ সালে তসলিমা নাসরিন একবার বাংলাদেশে আসার সুযোগ পান এবং মাস তিনেক থাকার পর মৌলবাদীদের চাপে রাষ্ট্র ও সরকার আবার তাকে বাংলাদেশ ত্যাগে বাধ্য করে। ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার তসলিমার পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে, তখন সুইডেন তাকে সেদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে।

সুইডিশ পাসপোর্টে ভারতের রেসিডেন্সি ভিসা নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে তসলিমা কলকাতায় থাকতে শুরু করেন। তার ভারতে পদার্পনের পর থেকেই ভারতীয় মুসলিম মৌলবাদীরা বোম্বে হায়াদ্রাবাদ ও কলকাতায় তার ভারতে অবস্থানের বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২০০৭ সালে কলকাতায় মুসলিম মৌলবাদীদের তাণ্ডবের পর আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার তসলিমাকে তার বাসস্থান ত্যাগে বাধ্য করে ও প্রাথমিকভাবে রাজস্থানে অজ্ঞাতবাসে পাঠিয়ে দেয়। এরপর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তাকে রাজস্থান থেকে সরিয়ে দিল্লিতে অজ্ঞাতবাসে নিয়ে যায়। ৭/৮ মাস অজ্ঞাতবাসের পর ভারত ত্যাগের শর্তে তসলিমার ভারতের রেসিডেন্সি ভিসার নবায়ন করে তাকে ভারত ত্যাগে বাধ্য করা হয়।

২০০৮ সালে তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাসপোর্টের আবেদন করলে তার আবেদন যথারীতি প্রত্যাখ্যাত হয়। তখন তসলিমা তার ইউরোপিয়ান পাসপোর্টে ‘বাংলাদেশ ভ্রমণে ভিসার প্রয়োজন নেই’ এই ছাপ মারতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন, এতেও প্রত্যাখ্যাত হয়ে তিনি সাধারণ টুরিস্ট ভিসার আবেদন করেন এবং তাতেও প্রত্যাখ্যাত হন। আর এসব কিছুর পর ২০০৮ সালেই বাংলাদেশ সরকার তার ‘কালো তালিকা’য় তসলিমা নাসরিনের নাম অর্ন্তভুক্ত করে।
২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত নতুন করে বেশ কয়েকবার তিনি বাংলাদেশে এসে বসবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করেন, কিন্তু সরকার থেকে এখনো কোনো আশ্বাস বা অনুমতি তসলিমা পাননি।
এরমধ্যে ২০১০-এর ফেব্রুয়ারিতে তিনি আবার দিল্লির অজ্ঞাতবাসে ফিরে আসেন, এখনো তিনি অজ্ঞাতবাসেই সিদ্ধান্তহীনভাবে দিন কাটাচ্ছেন।

তসলিমা হয়তো একমাত্র দৃষ্টান্ত যিনি পাশাপাশি দুটি দেশের সংখ্যাগুরু মৌলবাদী ও সংখ্যালঘু মৌলবাদীদের হুমকিতে জীবনযাপন করেছেন। মুসলিম মৌলবাদীরা যেমন তাকে বাংলাদেশছাড়া করেছে, ভারতের মুসলিম মৌলবাদীরাও তাকে অজ্ঞাতবাসে নিয়ে যেতে ও ফলশ্রুতিতে ভারত ছাড়তে বাধ্য করতে পেরেছে। নারীবাদীর শত্রু অনেক, কিন্তু তার সবচেয়ে বড় শত্রু মৌলবাদীরাই। এবং এই মৌলবাদীরা সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের হোক বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হোক, তাদের উন্মত্ততার প্রতিক্রিয়াশীলতা সমান ক্ষুরধার। কারণ সরকারের কাছে সংখ্যাগুরুরা স্বাভাবিকভাবেই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলেও সংখ্যালঘুরা আবার ভোটে হারজিতের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। তাই মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দিতে গুরুচাপ লঘুচাপ দুটোই সমান শক্তিশালী – সভ্যতাকে ঘাড় ধরে টেনে নামাতে, লেখক শিল্পীর নির্বাসন নিশ্চিত করতে, তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে ‘মৌলবাদের মুখ, তার ভাষা এবং মতলব’ সমান সক্রিয়।

সমালোচকরা আমার স্বাধীনতাকে চিহ্নিত করতে চাইছেন স্বেচ্ছাচারিতা বলে। আসলে আমাদের সুরুচি কুরুচি বোধ, পাপ পুণ্য বোধ, সুন্দর অসুন্দর বোধ, সবই যুগ-যুগান্ত ধরে পিতৃতন্ত্রের শিক্ষার পরিণাম। নারীর নম্রতা, নতমস্তকতা, সতীত্ব, সৌন্দর্য, সহিষ্ণুতা সেই শিক্ষার ফলেই নারীর বৈশিষ্ট হিসেবে স্বীকৃত। আমাদের সুনিয়ন্ত্রিত চেতনা কোনো রূঢ় সত্যের মুখোমুখি হতে তাই আতঙ্ক বোধ করে। কোনো নিষ্ঠুর বাক্য শুনলে কানে আঙুল দিতে ইচ্ছে করে, ঘৃণায় ঘিনঘিন করে গা, অনেক সমালোচকেরও বাস্তবে তাই হচ্ছে। আমি লেখক কি না, আমার আত্মজীবনী তাও আবার ধারাবাহিকভাবে লেখার অধিকার আছে কি না, এমন প্রশ্নও তুলেছেন। বস্তুত সবার, যে কোনো মানুষেরই আত্মকথা লেখার অধিকার আছে। এমনকী আত্মম্ভর সেই সাংবাদিকেরও সেই অধিকার আছে যিনি মনে করেন আমার হাতে কলম থাকাই একটি ঘোর অলুক্ষণে ব্যাপার। আমাকে দোষ দেয়া হচ্ছে এই বলে যে, আমি চরম দায়িত্বহীনতার কাজ করেছি। আমি দায়িত্বহীন হতে পারি, যুক্তিহীন হতে পারি, তবু কিন্তু আমার অধিকারটি ত্যাগ করতে আমি রাজি নই। জর্জ বার্নার্ড শ বলেছিলেন, A reasonable man adopts himself to the world. An unreasonable man persists in trying to adopt the world to himself. Therefore, all progress depends upon the unreasonable man. বুদ্ধিমান বা যুক্তিশীল লোকেরা পৃথিবরি সঙ্গে মানিয়ে চলে। নির্বোধ বা যুক্তিহীনরা চেষ্টা করে পৃথিবীকে তার সঙ্গে মানিয়ে চলতে। এতএব সব প্রগতি নির্ভর করে এই যুাক্তহীনদের ওপর। আমি তসলিমা সেই যুক্তিহীনদেরই একজন। আমি তুচ্ছ একজন লেখক, এত বড় দাবি আমি করাছ না যে পৃথিবীর প্রগতি আমার উপর সামান্যতম নির্ভর করে আছে। তবে বিজ্ঞদের বিচারে আমি নির্বোধ বা যুক্তিহীন হতে সানন্দে রাজি। নির্বোধ বলেই তো মুখে কুলুপ আঁটিনি, যে কথা বলতে মানা সে কথা বলেছি, পুরো একটি সমাজ আমাকে থুথু দিচ্ছে দেখেও তো সরে দাঁড়াইনি, নির্বোধ বলেই পিতৃতন্ত্রের রাঘব বোয়ালরা আমাকে পিষে মারতে আসছে দেখেও দৃঢ় দাঁড়িয়ে থেকেছি। আমার মূর্খতাই, আমার নির্বুদ্ধিতাই, আমার যুক্তিহীনতাই সম্ভবত আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
ধর্মের কথাও উঠেছে। আমি, যাঁরা আমাকে জানেন, জানেন যে, সব ধরনের ধর্মীয় দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলি। ধর্ম তো আগাগোড়াই পুরুষতান্ত্রিক। ধর্মীয় পুরুষ ও পুঁথির অবমাননা করলে সইবে কেন পুরুষতন্ত্রের ধারক ও বাহকগণ! ওই মহাপুরুষেরাই তো আমাকে দেশছাড়া করেছেন। সত্যের মূল্য আমি আমার জীবন দিয়ে দিয়েছি। আর কত মূল্য আমাকে দিতে হবে।

বাংলা ভাষায় সাম্প্রতিক কালে অনেক নারীবাদীর লেখাই পড়েছি, দেহহীন নারীবাদীদের প্রাধান্যের মধ্যে হাতে গোনা কয়েক জন দেহী নারীবাদী আছেন – এর মধ্যে সবচেয়ে স্বতঃস্ফূর্ত আমাদের তসলিমা নাসরিন। আমাদের দূর্ভাগ্য আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় এতোই পশ্চাদপদ ও স্বাধীন মত প্রকাশে অভ্যস্ত কারো প্রতি এতোই প্রতিশোধ পরায়ণ, যে, আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ নারীবাদীকে আমরা হত্যা করতে চেয়েছি, আমরা তাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছি – হয়তো বা চিরকালের জন্য বিতাড়িত করেছি। আর এটা এমন এক বিতাড়ন, যা, আমাদের দেশকে শুধু নারীপ্রগতিতেই পিছিয়ে দেবে না, আমাদের দেশে মানবতার স্ফূরণকেও ব্যাহত করছে ও করবে।

আমি চাই তসলিমা নাসরিনকে তার প্রিয় স্বদেশ ফিরিয়ে দেয়া হোক – দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ নারীবাদী তাকে অন্যরা বলুক – আমরা তাকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নারীবাদী হিসেবে বাংলাদেশে উদযাপিত দেখতে চাই। আর সবার আগে চাই অচিরেই দেশের প্রধান পত্রিকাগুলো তার লেখা ছাপাক – অন্তত, দুয়েকটি পত্রিকা তার লেখা ছেপে দেখাক মত প্রকাশের স্বাধীনতার সংগ্রামে বাংলাদেশের দুয়েকটি পত্রিকা শামিল আছে।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৭৭ comments

  1. বিনয়ভূষণ ধর - ৩ এপ্রিল ২০১০ (৩:২৭ অপরাহ্ণ)

    @মাসুদ ভাই!

    আমি চাই তসলিমা নাসরিনকে তার প্রিয় স্বদেশ ফিরিয়ে দেয়া হোক – দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ নারীবাদী তাকে অন্যরা বলুক – আমরা তাকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নারীবাদী হিসেবে বাংলাদেশে উদযাপিত দেখতে চাই। আর সবার আগে চাই অচিরেই দেশের প্রধান পত্রিকাগুলো তার লেখা ছাপাক – অন্তত, দুয়েকটি পত্রিকা তার লেখা ছেপে দেখাক মত প্রকাশের স্বাধীনতার সংগ্রামে বাংলাদেশের দুয়েকটি পত্রিকা শামিল আছে।

    আপনার সাথে আমারও খুব আশাবাদী হতে ইচ্ছে হয় কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে ‘বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাঁধবে কে?’

  2. মুয়িন পার্ভেজ - ৩ এপ্রিল ২০১০ (৫:৩১ অপরাহ্ণ)

    আমি চাই তসলিমা নাসরিনকে তার প্রিয় স্বদেশ ফিরিয়ে দেয়া হোক – দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ নারীবাদী তাকে অন্যরা বলুক – আমরা তাকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নারীবাদী হিসেবে বাংলাদেশে উদযাপিত দেখতে চাই।

    বেগম রোকেয়ার (১৮৮০-১৯৩২) জন্ম না হলে তসলিমা নাসরিনকে (জ. ১৯৬২) হয়তো ‘বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নারীবাদী’ বলা যেত! যুক্তিশাণিত ভাষায় রোকেয়া ‘অবরোধবাসিনী’দের যে-মুক্তির কথা লিখে গেছেন উনিশ শতকে, তা পড়লে শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে মুখ আর তসলিমার উপন্যাসোপম জীবনচরিত পাঠ করলে বিবমিষা জাগে কখনও-কখনও! লজ্জা উপন্যাসটি মৌলবাদীদের ‘নেকনজরে’ পড়ার পর আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলাম কৈশোরান্তে, প’ড়ে আমার দুঃখ হল তসলিমার জন্য নয় — মৌলবাদীদের জন্যই। অদ্ভুত একরৈখিক মিল আছে এসব বইয়ের ‘দুর্ভাগ্যে’ : সালমান রুশদির The Satanic Verses, তসলিমা নাসরিনের লজ্জা, হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ — সবই তো উপন্যাস। উপন্যাসের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়া আর ছায়ার উপর কোপ মারা তো একই ব্যাপার!

    তসলিমার নিষিদ্ধ আত্মচরিত -এর একটি মলাটহীন সংস্করণ সংগ্রহ করেছিলাম পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে। কিয়দংশ পড়ার পর শুধু যে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম তা নয়, তসলিমার আর কোনো বই না কেনারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যে-নারী কেবল অর্থবিত্ত বা বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে দেহদান করেন, তাঁকে বারাঙ্গনা বলা হয়; তসলিমার ‘কৃতিত্ব’ এটুকু যে তিনি শয্যাকক্ষকে হাটের মাঝখানে এনে বসিয়ে দিয়েছেন!

    কয়েক বছর আগে ‘তসলিমার ভালোমন্দ’ নামের একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে তসলিমার বিরুদ্ধে ‘হঠকারিতা’ ও ‘সংকীর্ণ স্বার্থপরতার’ অভিযোগ তুলেছিলেন গোলাম মুরশিদ; দৈনিক প্রথম আলো-র ‘সাহিত্য সাময়িকী’র পৃষ্ঠা থেকে অংশবিশেষ পড়া যাক :

    ফতোয়াবাজরা তসলিমাকে মারতে পারলেন না। কিন্তু তার আসল পথ থেকে তাকে বিচলিত করলেন। কখন যে তিনি তার পথ এবং লক্ষ্য থেকে সরে গেলেন, বোধ হয় তসলিমা নিজেও তা টের পেলেন না। ধর্মীয় রাজনীতির শিকার হয়ে তসলিমা দেশ ছাড়লেন। যাদের জন্য কাজ করতে শুরু করেছিলেন, তাদের থেকে দূরে ছিটকে পড়লেন। যাদের জন্য লিখছিলেন, সেই লেখা নিষিদ্ধ হয়ে তাদের কাছে আর পৌঁছল না। এমনকি, তার হঠকারিতায় বাংলাদেশের সাধারণ নারীদের উন্নতির মন্থর গতিও বোধ হয় আরো মন্থর হয়ে গেল। আর, বনবাসে গিয়ে তসলিমা স্বয়ং তার লক্ষ্য হারিয়ে ফেললেন। তিনি নারীদের সবার কথা না লিখে, নিজের কথা লিখতে শুরু করলেন। ধর্মনিরপেক্ষতার জেহাদ বন্ধ করে, বরং এমন সব কথা বলতে আরম্ভ করলেন, ধর্ম ও নৈতিকতা থেকে যা অনেক দূরের।

    কিন্তু তিনি যেসব কথা বলতে শুরু করলেন, তার উৎস ছিল আপাতদৃষ্টিতে তার নিজেরই পরিবারে। ‘৯৩ সালে অতভাবে প্রশ্ন করেও যেসব কথা বের করতে পারিনি, সেই কথা তসলিমা নিজেই অকাতরে বলতে শুরু করলেন মহাকাব্যের মতো সর্গে সর্গে। আত্মজৈবনিক উপন্যাস লিখলেন তসলিমা। কিন্তু তার থেকেও সিরিয়াস — প্রচণ্ড চিৎকার করে একেবারে নিজের জীবনের কথা লিখলেন। তার প্রথম দিকের উপন্যাসগুলো উপন্যাস হিসেবে যেমনই হোক, অন্তত তার মধ্যে এক ধরনের শিল্প সৃষ্টি করার প্রয়াস ছিল। একটা causeও ছিল। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা ছিল, নিপীড়িত মানবতার কথা ছিল। নারীদের ওপর অত্যাচারের কথাও ছিল। কিন্তু নির্বাসনে গিয়ে তিনি যা লিখলেন, তার মধ্যে এসব তেমন দেখা যায় না। যে তসলিমা নিজেকে বলেন ফেমিনিস্ট, অর্থাৎ নারীবাদী, সেই তসলিমা নারীদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা দূরে থাক, নারীদের জন্য লিখলেনও না। বরং আত্মরতিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেন। তার আত্মজীবনীগুলো দেশ অথবা দশের জন্য নয়। তার আত্মজীবনী সংকীর্ণ স্বার্থপরতারই স্বাক্ষর।

    (‘সাহিত্য সাময়িকী’, ১২ মার্চ ২০০৪, পৃ. ২১ ও ২৩)

    শরীফা বুলবুলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হুমায়ুন আজাদ বলেছেন যে নব্বইয়ের দশকে তসলিমা নিজেই নিজের বিরুদ্ধে মিছিল করিয়েছিলেন মোল্লা জুটিয়ে! এ যদি সত্যি হয়, তাহলে তসলিমার নারীবাদের শিকড়েই টান লেগে যায়। তবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কারও মিছিল করানোর অধিকার তো থাকতেই পারে।

    • কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৩ এপ্রিল ২০১০ (১১:১০ অপরাহ্ণ)

      মাসুদ করিম কর্তৃক তসলিমা নাসরিনকে শ্রেষ্ঠ নারীবাদী বলাটা যেমন সমর্থনযোগ্য নয় তেমনি মুয়িন পার্ভেজ কর্তৃক তসলিমার প্রতি এত তুচ্ছতাচ্ছিল্যও সঠিক বলে মনে হয় না। তসলিমা নাসরিন মোল্লাদের জুটিয়ে মিছিল করিয়েছিলেন বলাটা রীতিমতো হাস্যকর। কারণ এসব আমরা নানাভাবে তখন সরাসরিই জানতে পারছি, ওইসময় তসলিমার উপর কতধরনের নির্যাতন যে ঘটৈ যাচ্ছিল!
      মুয়িনকে আবারও ধৈর্যসহযোগে আবারও ‘ক’ পড়তে অনুরোধ করব। তিনি কেবল অর্থবিত্তের জন্য দেহদান করছিলেন, এটি একেবারেই সঠিক নয়। তাহলে তাকে অনুরোধ করব, তা প্রমাণসহ উল্লেখ করার জন্য।
      লজ্জা উপন্যাস শিল্পমানের দিক থেকে একেবারেই সাধারণ মানের; কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নানাবিধ জান্তব নিপীড়নের যে শব্দচিত্র তাতে আছে তা কি সঠিক নয়? মুসলিম প্রাবল্যের এই দেশে হিন্দু সম্প্রদায় যেভাবে মানসিক-শারীরিক-বৈষয়িকভাবে অত্যাচারিত, তার এক জলজ্যান্ত দলিল হচ্ছে লজ্জা

      • মুয়িন পার্ভেজ - ৪ এপ্রিল ২০১০ (১১:০৫ পূর্বাহ্ণ)

        কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

        তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে সবই বলেছি বইপত্রের ভিত্তিতে — তাঁকে ‘তুচ্ছতাচ্ছিল্য’ করার অভিপ্রায়ে মনগড়া কিছুই বলিনি। এ-মুহূর্তে আমার হাতের কাছে নেই ব’লে উদ্ধৃতি দিতে পারছি না; আপনার সংগ্রহে থাকলে জনৈক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে তসলিমার ঘনিষ্ঠতার বিবরণটুকু আরেকবার পড়ার জন্য অনুরোধ করছি। তসলিমা নিজেই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন দেহদানের বিনিময়ে ‘বিশেষ সুবিধা’ (যেমন : ফ্ল্যাটে থাকার সুব্যবস্থা) গ্রহণ করার কথা। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরও ‘নির্যাতনকারী’ (তসলিমার বর্ণনা) প্রথম স্বামীর আহ্বানে সাড়া দিতে তসলিমার অরুচি হয় না, অন্যদিকে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ্‌র (১৯৫৬-১৯৯১) সঙ্গে তসলিমার দৈহিক সম্পর্ক আন্তর আবেগে সংরঞ্জিত হয়ে আছে — দ্বৈতসত্তার এই টানাপোড়েন তো থাকতেই পারে, কিন্তু পূর্বোক্ত ‘বিশেষ সুবিধা’র প্রসঙ্গ আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

        বার্ট্রান্ড রাসেলের (১৮৭২-১৯৭০) মতো আত্মচরিত লিখতে পারবেন না ব’লে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন হুমায়ুন আজাদ, ‘অকপট’ তসলিমার অন্তত সেই খেদ নেই, মনে হয়!

  3. নিরাভরণ - ৪ এপ্রিল ২০১০ (২:১৩ পূর্বাহ্ণ)

    তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহ খুব মনোযোগ দিয়ে অনুসরন করা হয়নি। আর তার লেখাও পড়া হয়নি সে ভাবে। কিন্তু অল্পবিস্তর যা পড়েছি, তাতে প্রগতিচিন্তার সাথে মেধার সংযোগের যে সহজ আকাংখা তা পূর্ণতা পায়নি তসলিমার লেখায়। একটু সরলিকরন হলেও আমার পর্যবেক্ষনে মনে হয়েছে প্রগতি বা নারীবাদকে ব্যবহার করে সুনাম কূড়ানোর চেষ্টা হয়ত তার মধ্যে প্রবল ছিল। ভাল সাহিত্য বা সমাজবীক্ষনের চেয়ে এই মাত্রাটাই হয়ত বেশি প্রকট ছিল তাঁর ক্ষেত্রে। যে নারীবাদকে তিনি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলেন সেটাকে সংবেদনশীল ভাবে উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলেই আমার অভিমত। ফলে নিজে জর্জরিত হয়েছেন এই অস্ত্রের অসতর্ক নাড়াচাড়ার ফলস্বরূপ। তার কিছু নিবন্ধ পড়েছিলাম। একজন ডাক্তার হলেও তাঁর যে বিজ্ঞানবীক্ষা তা আমার হাইস্কুল জীবনে সীমিত বিজ্ঞানের সাধারন জ্ঞানের সাথেই সাংঘর্ষিক ছিল। তাই লেখিকা হিসাবে তার বিশ্লেষনের প্রতি আস্থার ক্ষেত্রটি তৈরি হতে পারেনি। তবে এটা আমার ব্যর্থতাও হতে পারে। এটা পুরো চিত্রটির একটা দিক।

    মূলপোস্টে বার্নার্ডশ থেকে তসলিমার যে উদ্ধৃতি এটা অনেকটা একটা নারীবাদি লেখার নিচে আলাদাভাবে টীকা দিয়ে ‘এটা কিন্তু নারীবাদি লেখা’ বলার মত শোনাল। তিনি কি করেছেন সেটা আসলে তার লেখারই মধ্যেই স্পষ্ট হবার দরকার ছিল। আলাদা টীকার দরকার পড়ল কেন সেটা ভেবে দেখা দরকার?

    An unreasonable man persists in trying to adopt the world to himself.

    বার্নার্ড শ এর এই ‘আনরিজনেবল ম্যান’ কি একজন জীবনবীক্ষাশুন্য মানুষ? আমি মনে করিনা। তসলিমা কি সেই অর্থে একটা বিকল্প পৃথিবীর খোঁজ দিয়েছিলেন তার লেখায় না কি প্রচলিত সমাজের সমালোচনাই সার ছিল তার লেখার। যারা তাকে অনেক বেশি পড়েছেন তারা ভাল ভাবে বলতে পারবেন। কিন্তু কৌশলগত দিক দিয়ে এটা একজন সাহিত্যিক বা সমাজবীক্ষকের সাফল্যের বা গ্রহন যোগ্যতা অনেকাংশে বেড়ে যায় যদি সে একটা বিকল্প পৃথীবি বা সমাজের চিত্রকল্প তুলে ধরতে পারে পাঠকের সামনে।

    তিনি যা লিখেছেন তা পাঠককে কিভাবে টেনেছে সেটা বিবেচনা আনলেও প্রশ্ন দাঁড়ায় তিনি যে নির্বাসিত হলেন এটা কি তার প্রাপ্য ছিল? উত্তর হচ্ছে, না। কিন্তু এটা কি অবধারিত ছিল? উত্তর ‘অনেকটা’। সে কারনেই অনেকে হয়ত বলতে চাচ্ছেন তিনি মোল্লা জুটিয়ে তার বিরুদ্ধে মিছিল করিয়েছেন। মন্তব্যটি একপেশে সন্দেহ নেই। তবে এখানে আমি রাষ্ট্রের ব্যর্থতার একটা চিত্র দেখি। দেখি রাষ্ট্র তাকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে পারেনি। এখনো এই দায়িত্বটি এড়িয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্র অথবা রাষ্ট্রের পেছনে থাকা রাজনৈতিক নেতৃত্ব। কারন গনতন্ত্রের একটা পরিনতি হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বা বেশি ক্ষমতাশালী সামাজিক গোষ্ঠীদের প্রতি ক্ষমতাকামীদলগুলোর একধরনের বোঝাপরা। এখানে এসে রাষ্ট্র হয়ত ব্যর্থ হয়েছে বারবার।তসলিমার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বক্তব্য কি আমি জানি না। আবার তসলিমাকে এটা বলতেও বাঁধে যে আপনি সমঝোতা করুন। কারন তিনি যা লিখেছেন সেটা হয়ত তার ব্যক্তিগত অনুভুতি আর বিশ্বাস থেকেই লিখেছেন। হয়ত ভালমত আর্টিকুলেট করতে পারলে তিনিও রোকেয়ার মত বা আরো বড় কেউ হয়ে উঠতেন। কিন্তু তিনি যে রোকেয়া হয়ে ওঠেননি তার কারন হচ্ছে তার ব্যক্তিগত জীবনের প্যাথলিজি। রোকেয়া ছিলেন প্রচন্ড রকমের আশাবাদি। বাঁধার জঞ্জাল পেড়িয়ে তিনি দেখিয়েছেন অথৈ সাগরের মধ্যে সাতরিয়ে তীরে পৌছে অন্যদের ডেকে জাগান সহজ। মেয়েদের জন্য তিনি ছিলেন আশাবাদিতার আদর্শ চিত্র। এভাবে আস্তে আস্তে পৃথীবি আগায়। আর তসলিমা হয়ত ব্যক্তিগত ব্যর্থতার দায় সমাজের কাঁধে চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন। লড়াই না করে হয়ত কর্কশভাবে সমালোচনার তীর ছুড়েছেন এলোপাথারি ভাবে। অন্ধকারে ছোড়া ঢিল হয়ত এমন সব যায়গায় গিয়ে আঘাত করেছে যেটা আসলে আঘাতের উপযুক্ত লক্ষ্য ছিলনা। নৈরাশ্য আর অন্ধকারের ব্যপারে নালিশ করতে গিয়ে তিনি হয়ত টানেলের শেষপ্রান্তের আলোর ক্ষীণ রেখাটি দেখতে পাননি। এটা সাহিত্যের অঙ্গনে তার অসারতাকে, অগ্রহনযোগ্যতাকে হয়ত ব্যখ্যা করে, কিন্তু নির্বাসনকে জাস্টিফাই করে না।
    বিষয়টিকে সামনে তুলে ধরবার জন্য মাসুদ করিমকে ধন্যবাদ। আরো আলোচনা আশা করছি।

  4. নীড় সন্ধানী - ৪ এপ্রিল ২০১০ (২:০৬ অপরাহ্ণ)

    তসলিমা নাসরিনের সবচেয়ে বড় সাফল্য সম্ভবতঃ তার বিতর্কিত হবার ক্ষমতা। তাঁর নারীবাদী চরিত্রের চেয়েও তাঁর নারীত্বকে পরীক্ষামূলক অবমাননার মুখে ঠেলে দেয়ার ক্ষমতাকে প্রধান মনে হয়। এটা একান্তই ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষন আমার। তার আত্মজীবনীগুলি পড়েই সেই ধারনা হয়েছে।

  5. মোহাম্মদ মুনিম - ৬ এপ্রিল ২০১০ (৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ)

    তসলিমা নাসরীন নব্বই দশকের শুরু থেকে লিখছেন। সে সময়ে তিনি মুলত ঈভ টিজিং নিয়ে লিখতেন, মফস্বল শহরে সিনেমা দেখে ফেরার সময় কেউ একজন অযথাই তাঁর বাহুতে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেন, এই জাতীয় অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের মেয়েরা প্রতিনিয়ত এই জাতীয় হয়রানীর শিকার হয়, কেউ কিছু বলে না, মেয়েরাও মেনে নেয়। সম্ভবত তসলিমা নাসরীন প্রথম এই ‘তুচ্ছ’ ব্যাপারগুলোকে এভাবে হাইলাইট করা শুরু করেন। বেগম রোকেয়া নিজেও radical লেখা লিখেছেন, তবে সে আমলে কটা লোকই আর লিখতে পড়তে পারতো? আর সে আমলের মোল্লারাও ব্রীটিশদের লাঠির ভয়ে তেমন কিছু বলার সাহস পেতেন না। তবে বেগম রোকেয়া বেজায় কষ্ট করে মুসলমান মেয়েদের জন্য স্কুল দিয়েছেন, তাদের নিজের পায়ে দাড়াঁনোর পথ দেখিয়েছেন। তো মুসলমান মেয়েরা তো লেখাপড়া শিখছে, ডাক্তার হচ্ছে, উকিল হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা তো সেই মেয়েই থেকে গেলো, মানুষ হিসাবে প্রাপ্য সম্মান তো বাংলাদেশের মেয়েরা পেলো না। এই ব্যাপারগুলো তসলিমা নাসরীন তাঁর ধারালো লেখায় তুলে আনছিলেন।

    সে পর্যন্ত ব্যাপারগুলো ঠিকই ছিল। কিন্তু তিনি নারী স্বাধীনতার ইস্যুতে ধর্মকে, মুলত ইসলামকে টেনে আনলেন। ইসলাম প্রবর্তনের আগে আরবের মহিলারা স্বাধীন ছিলেন, ইসলাম এসে মহিলাদের পরাধীন কে ফেলেছে, এইসব সেন্সিটিভ কথাবার্তা। ইসলামপূর্ব আরবে নারীরা কেমন ছিলেন, আর ইসলাম এসে নারীদের উপকার না অপকার করেছেন, এটা বেজায় জটিল আলোচনা (এই সম্পর্কিত একটি লিঙ্ক এখানে)। ইসলামের আগে মেয়ে শিশুদের জীবন্ত কবর দেয়া হতো, ইসলাম এসে সেটা বন্ধ করে দুনিয়া উদ্ধার করেছে, এ জাতীয় উক্তিও যেমন অতি সরলীকৃত, নারীকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য ইসলামই মূলত দায়ী, এ সিদ্ধান্তও তেমনি সরলীকৃত। এসব কথা বাজারে ফেলে দিলে হৈ চৈ হবেই, তাঁর উপরে তসলিমা আবার আনন্দ পুরষ্কার পেয়েছেন। সব কিছু মিলে হৈ চৈ মাত্রা ছাড়িয়ে গেল, তিনি দেশছাড়া হলেন। দেশছাড়া হয়ে তিনি বিশ্ববিখ্যাত হয়ে গেলেন। তাঁর লজ্জা বইটি অনেকগুলো ভাষায় রুপান্তরিত হলো। এসব করে বাংলাদেশের নারীকুলের কি উপকার হয়েছে সেটা বোঝা মুশকিল, তবে তসলিমা ইউরোপ আমেরিকার বুদ্ধিজীবি মহলে তাঁর অবস্থান পাকা করে নিয়েছেন বলাই বাহুল্য। ইউরোপে সব সময় বসে থাকলে তো হবে না, তাতে তাঁর বাজার পরে যাবে। তাই তিনি কয়েক মাসের জন্য কলকাতায় আসেন, কলকাতার মুসলমানদেরও খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, তিনি একটা কিছু বললেই মিছিল মিটিং দাঙ্গা হাঙ্গামা। তাতে দশটা গরিবের দোকান পুড়ে, দু তিনটা লাশ পড়ে, নির্বাসিত তসলীমা আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে নিরাপদ ইউরোপে ফিরে যান। গত পনের বছর ধরে তিনি এই করছেন, আর ‘বাজার’ ধরে রেখেছেন।
    তসলীমা সাহসী বটে, তবে তিনি সম্ভবত পাকিস্তানের মুখতারান বিবির মত সাহসী নন। আফগান তরুনী মালালাই জয়া, যিনি মাত্র আঠার বছর বয়সে তালিবানদের ফাঁকি দিয়ে আফগান বালিকাদের ইংরেজী শিক্ষা দিয়েছেন, তিনিও সম্ভবত তসলীমার চেয়ে অনেক বেশী সাহসী। এমন আরও অনেক সাহসী নারী আছেন পৃথিবীতে, কেউই তসলীমার মত বিখ্যাত নন, বিখ্যাত হবার কোন ইচ্ছাই নেই তাঁদের, ফালতু শখের নারীবাদের কোন মূল্যই তাঁদের কাছে নেই। তরুনী তসলীমা শুরু করেছিলেন এঁদের মত সাহস আর সততা দিয়ে, সেই সাহস আর সততার কিছুমাত্র তাঁর মধ্যে অবশিষ্ট নেই।

  6. তানবীরা - ১০ এপ্রিল ২০১০ (৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ)

    আলোচনাটা ভালো লাগছে। পৃথিবী খুব দ্রুত বদলাচ্ছে। যখন দশ বছর আগে ঢাকার রাস্তায় কোন তরুনী জীন্স পরে হাটতো তখনকার মানুষদের যা প্রতিক্রিয়া ছিলো আজকে নিঃসন্দেহে সেই প্রতিক্রিয়া আর নেই। তাই আজ থেকে একশ বছর পরে, তাসলিমা বাংলাদেশের মেয়েদের কাছে আর্দশের প্রতীক হবেন না এটা জোর করে বোধ হয় আর বলা যাবে না। বেগম রোকেয়া যখন পড়াশোনা করেছেন তখন তাকেও হয়তো তাসলিমার মতোই কটু পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই যেতে হয়েছিল।
    ভবিতব্যই তার স্থান ঠিক করবে। শুধু সেদিন আমি কিংবা তাসলিমা আরো অনেকেই হয়তো দেখবেন না।

  7. মাসুদ করিম - ১১ এপ্রিল ২০১০ (১২:৩০ অপরাহ্ণ)

    মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে আজকের প্রথম আলোতে দৃক গ্যালারির সাম্প্রতিক ‘ক্রসফায়ার’ প্রদর্শনীর উদ্বোধনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশের বাধাদানে গণতান্ত্রিক সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের কলাম : আলোকচিত্রের স্বাধীনতা। প্রসঙ্গক্রমে সেখানে তিনি আলোচনা করেছেন ‘স্বাধীন মত প্রকাশের অপরাধে’ নির্বাসিত দুই বাঙালি লেখক দাউদ হায়দার ও তসিলমা নাসরীন বিষয়ে।

    দাউদ হায়দার ও তসলিমা নাসরীন
    বাংলাদেশের দুজন লেখক দাউদ হায়দার ও তসলিমা নাসরীন দীর্ঘদিন ধরে বাধ্যতামূলকভাবে বিদেশে। শুধু ‘মত প্রকাশের’ ‘অপরাধে’ তাঁরা আজ বাধ্যতামূলকভাবে মাতৃভূমি থেকে নির্বাসিত। বিদেশে নানা রকম বৃত্তি ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সত্ত্বেও বছরের পর বছর মাতৃভূমি, মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সাহচর্য না পাওয়া যে কত কষ্টকর ও অমানবিক, তা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ তেমন অনুভব করতে পারে না। দীর্ঘদিন এই দুজন সাহিত্যশিল্পী এই নিদারুণ কষ্ট সহ্য করে প্রবাসজীবন যাপন করছেন। যখন তাঁদের রচনা প্রকাশিত হয়েছিল তখনকার বাংলাদেশের সমাজ ও এখনকার সমাজের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন অনেক কিছু বাংলাদেশের সমাজ গ্রহণ করতে পারছে। এখন আমাদের সমাজ অনেক আন্তর্জাতিক আবহে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধ এখনো প্রায় আগের মতো দৃঢ় থাকলেও মানুষ এখন অনেক বেশি সহনশীল, গণতান্ত্রিক ও পরমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দাউদ হায়দার ও তসলিমা নাসরীনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো কি পর্যালোচনা করা যায় না? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করে একটা সুপারিশ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে না?
    বাংলাদেশের এই দুজন বিশিষ্ট লেখকের বিদেশে নির্বাসনে থাকা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তির জন্য সহায়ক নয়। ‘ধর্মান্ধ শক্তিই বাংলাদেশে ক্ষমতাশালী’—এ রকম একটি ধারণা বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। অথচ সবাই জানে, তা সত্য নয়। বাংলাদেশে উগ্র ধর্মান্ধ শক্তি বিএনপি-জামায়াত আমলে যতটা প্রশ্রয় পেয়েছিল, মহাজোট আমলে সে রকম পায়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ সম্পন্ন হলে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর প্রভাব অনেকটাই হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা যায়। এ রকম পরিস্থিতিতে দাউদ হায়দার ও তসলিমা নাসরীনের বিষয়টি আবার বিবেচনা করার সুযোগ আছে বৈকি।
    আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পীগোষ্ঠী এই বিষয়ে সব সময় নীরবতা অবলম্বন করেন। এই দুই সাহিত্যশিল্পী কোনো খুনের মামলায় বিদেশে পালিয়ে যাননি। নিছক মত প্রকাশের কারণে তাঁদের আজ প্রবাসজীবন বেছে নিতে হয়েছে। তাঁদের মতের সঙ্গে বা তাঁদের মত প্রকাশের ভঙ্গির সঙ্গে আমি বা অনেকেই একমত নই। সবাই সবার সঙ্গে একমত হবেন, এমন আশা করাও যায় না। কিন্তু তাই বলে একটা লেখার কারণে একজনকে ২০-৩০ বছর নির্বাসনে কাটাতে হবে, এটা সমর্থন করা যায় না। এই দুজন লেখক তাঁদের কোনো বিশেষ রচনার জন্য যদি মানুষের মনে আঘাত দিয়ে থাকেন, তাহলে এত বছরের নির্বাসিত জীবন কি তার জন্য যথেষ্ট শাস্তি নয়?
    বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য ও সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য আমি প্রগতিশীল কবি, সাহিত্যিক, কলামিস্ট, নারী নেত্রীসহ সবাইকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, গণতন্ত্রের প্রধান শর্ত হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা।

  8. সুমাদ্রি - ২৬ এপ্রিল ২০১০ (২:৩৮ পূর্বাহ্ণ)

    কোন লেখককে,সে তিনি ”নারী” ই হোন আর ”পুরুষ” ই হোন, একটা ”বাদ”‘ এর ভেতরে ঢুকিয়ে রাখার মানসিকতাটাও কিন্তু পাঠকের বিশাল এক সীমাবদ্ধতা।আমাদের দেশে অনেক ”শক্তিমান” পুরুষ লেখকেরা নিজেদের ”মানবিক” , ” প্রথাবিরোধী” অথবা ”নারীবাদী” বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করে থাকেন যদিও তাদের সাহিত্যে দেখা যায় তারা নারীকে সম্ভোগ্য বস্তু হিসেবেই তুলে ধরেছেন সবচেয়ে বেশি।তসলিমা’র লেখার সাহিত্য-মুল্য কতটুকু সে আলোচনায় যাওয়াটা অবান্তর কারণ এটা সময়-ই নির্ধারণ করে দেবে।আমি যা বলতে চাই তা যদিও ”ক্লিছে” প্রায়,সেটি হল বাংলাদেশে অনেক রাষ্ট্রবিরোধী,লম্পট,ভন্ড,ধর্ষক জনপ্রিয় হয়ে বহাল তবিয়তেই আছেন,আমাদের সমাজে মিথ্যে আর কুপমন্ডুকতা টিকে থাকুক তার জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে।রাষ্ট্র তাদের আশ্রয় দিতে এতটুকু কুন্ঠাবোধ করেনা।ধর্মীয় অনুভূতিতে ”আঘাত” দিয়ে লেখা তসলিমা’র আগে ও অনেকেই লিখেছেন এবং যথারীতি তারা ও আক্রান্ত হয়েছেন,তবে তসলিমা বা দাউদ হায়দারের মত করুণ ভাগ্য আর কারও হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।তসলিমা’র প্রথম দিককার লেখা যেমন ” আমার মেয়েবেলা”, ” লজ্জা”, ” নির্বাচিত কলাম” এসবে তিনি একজন নারী লেখক হিসেবে যে পরিমান সাহস দেখিয়েছেন তা সত্যিই অতুলনীয়।তসলিমা ও সম্ভবত কোথাও গলা ফাটিয়ে বলেননি যে তিনি আমাদের দেশের নারীদের ত্রাতা হিসেবে হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।তসলিমা তাঁর কিছু নিজস্ব অভিজ্ঞতা, ক্ষোভ ,পুরুষশাষিত সমাজের ভন্ডামো,অন্যায় তুলে ধরেছেন তাঁর লেখায়।আমাদের দেশে রাজপথে সরকারবিরোধী,মৌলবাদবিরোধী মিছিলে মানুষের সংখ্যা ও কম হয়না।তাদের কাউকেই দেশ থেকে নির্বাসনে যেতে হয়না অথবা আমাদের ”নারীবাদী” লেখকদের ঘৃনা ও সমালোচনার শিকার হতে হয়না।তসলিমা’র দোষ অন্যত্র।তিনি একই সাথে ধর্ম ও ”পুরুষমানসিকতা” দুটোরই বিরুদ্ধাচরণ করেছেন।একটা মেয়ে হয়ে পুরো একটা ”সংঘ”এর বিরুদ্ধে যাওয়া পুরুষ সইবে কেন।”রাষ্ট্র” ”ধর্ম” এরা ও তো আসলে অগনতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট পুরুষ।তসলিমা নাসরিন এর সাম্প্রতিক লেখার মান নিম্নমানের অথবা নিম্নরুচির কিনা সে কুটতর্কের বিষয় কারণ একটু এদিক ওদিক করলে এরকমই অনেক লেখা ”আধূনিক” হয়ে যায়।মানুষ তসলিমা বাংলাদেশ তাঁর জন্য বিপদজনক জেনে ও দেশে আসতে চান দেশের প্রতি ভালবাসার টানেই,যে দেশকে তিনি হয়তো ”মা” বলে সম্বোধন করেন।বিদেশে এত ”সম্মান” ও ”খ্যাতি” পাওয়া সত্ত্বে ও তিনি বলেন ” নেই,কিছু নেই”।তসলিমা ও দাউদ হায়দার আবার ফিরে আসুক বাংলায়,আবার লিখুক কবিতা,প্রবন্ধ,এই আশাটুকু আমরা তাদের দিলে কার কি এমন ক্ষতি!!

  9. এশার - ১৬ মে ২০১০ (৮:২১ অপরাহ্ণ)

    তসলিমা নাসরিনের লেখার ভক্ত কোনোদিনই ছিলাম না। কারন আমি করি তিনি ভালো লিখতে জানেন না, ভালো পড়েনওনি।
    কিন্তু প্রচন্ডরকম লজ্জিত হই তার নির্বাসনে। তিনি কী লেখেন কিনবা না লেখেন তার চেয়ে আমার কাছে বড় হয়ে উঠে “তার কথা বলার অধিকার হরণের বিষয়টি”।
    সভ্য সমাজের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে “আমার কথা বলার স্বাধীনতা”।
    কোনো সরকার জনগনের এই অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে তা তাদের একটি বড় ব্যার্থতা বলেই বিবেচিত হবে।
    জাতি হিসেবে আমরা ভন্ড এবং তার আরেকটি বড় প্রমান হচ্ছে তসলিমার “নির্বাসন দন্ড”। এদেশে পতিতা থাকতে পারবে, তসলিমা থাকতে পারবেন না। এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে আমাদের জন্য?
    তস্লিমা, ক্ষমা চাই।
    আর সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক তাই কামনা করি।

  10. তমসো দীপ - ১১ জুন ২০১০ (১২:৩৬ অপরাহ্ণ)

    যারা এই লেখার বিভিন্ন কমেন্টে বলেছেন তসলিমা নাসরিন কোন লেখক না, ভাল লিখতে পারেন না, তাঁর লেখা সাহিত্য হয়নি, তাদের কাছে আমার একটি কথা জানবার আছে। তারা ক’টা বই পড়েছেন তসলিমা নাসরিনের? আসলেই কি পড়েছেন?

    আমার মনে পড়ে, আমি যখন তসলিমা নাসরিনের ‘ফরাসী প্রেমিক’ পড়ছিলাম, একটা চাপ্টারে আমার চোখ আটকে যায়। নায়িকা নীলা নিজের জন্য একটা বাড়ি কিনেছে। নিজের মত করে বাড়িটাকে সে সাজাচ্ছে। হঠাৎ পড়তে পড়তে আমার মনে পড়ল নিজের জীবনের একটা সময়ের কথা। তখন আমার জীবন কেবল শুরু হচ্ছে।বাবা মা’র সাথে থাকি, ইচ্ছে করে না। সারাক্ষণ স্বপ্ন দেখি নিজস্ব একটা ফ্ল্যাটের। মনে মনে হাজার বার এওটা ফ্ল্যাট কিনি, সাজাই, বারান্দায় শুয়ে গুন গুন করে রবীন্দ্রসংগীত গাই, সন্ধ্যেবেলায় আমায় যে ভালোবাসে, সে আসে আমায় দেখতে। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, নীলার মনোজগতের সাথে আমার মনোজগত কি আশ্চর্য্রকম মিলে যাচ্ছে।

    সেদিন আমি উপলব্ধি করেছিলাম, তসলিমা নাসরিন কত মহান লেখক। তাঁর প্রধান উপন্যাসগুলোয় মানব মনের এমন অনেক চিত্র আছে, যেগুলো আমাদের অনেকের সাথেই মিলবে। ত্তাঁর আত্মজ়ীবনীতে যা আছে, তাঁর কিছু না কিছু প্ররথিবীর যে কোন নারীর জীবনের কিছু না কিছুর সাথে মিলতে বাধ্য।

    ‘ফরাসী প্রেমিক’ থেকে কিছু অংশ রইল –
    বসন্ত কাল হল আত্মহত্যার ঋতু। দুই যুবক চলন্ত গাড়ির তলায় ঝাঁপ দিয়েছে। মরতে চেয়েছে, মরেছে। এরকম প্রতি বসন্তকালেই লোকে রেলের তলে জীবন দেয়। এর কারণ, দানিয়েল আগেই জানিয়েছে যে বসন্তকাল। বসন্তকালে মানুষের আত্মহত্যা করার ইচ্ছে হবে কেন, এই কারণটি নীলা জানতে চায়।

    বসন্ত এলে পশ্চিমীরা যত দূর জানে সে, আনন্দে মেতে ওঠে। তবে আত্মহত্যা কেন?

    দানিয়েল বলে, যারা একা, সঙ্গীহীন, তারা আত্মহত্যা করে এ সময়টায়। বসন্তকালে একাকীত্বের জ্বালা খুব বেশিরকম হয় কি না। বসন্তই তো জানিয়ে দেয় যে গ্রীষ্ম আসছে, সুখের সময় আসছে, প্রেমের সময় আসছে, মিলনের সময় আসছে। সারা গ্রীষ্মকাল প্রেমিক প্রেমিকা জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়াবে, আনন্দ করবে, আর যারা একা, মাঠে ঘাটে লেকের ধারে, সমুদ্রতীরে এত জোড়া দেখে আরও বেশি একা বোধ করবে, এই ভয়ে এই কষ্টে বসন্তকালেই, গ্রীষ্ম আসার আগেই আত্মহত্যা করে।

    নীলা বোঝে না।
    (উদ্ধৃত অংশটুকু ‘ফরাসী প্রেমিক’ এর অঙ্কুর প্রকাশনীর সংস্করণের ১৫১ নং পৃষ্ঠা ত্থেকে নেয়া)

    ‘ফরাসী প্রেমিক’ থেকে আরেকটি অংশ –

    নীলা দিন পার করে শুয়ে বসে, দুএকটি বইয়ের কিছু পাতা পড়ে, সন্ধ্যের পর টেলিভিশন খোলে, বন্ধ করে। শুয়ে থাকে, উঠে বসে। জ্যাক রেলের গান শোনে। গান বন্ধ করে। বারান্দায় দাঁড়ায়, ফিরে আসে। রান্নাঘরে ঢোকে। রান্না করতে ইচ্ছে করে না। ফোনের কাছে যায়, রিসিভার হাতে নেয়, রেখে দেয়। বালিশে মুখ গোঁজে, চাদরে মুখ মাথা ঢাকে, চাদর সরিয়ে ফেলে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটি একটি করে পরনের কাপড় খোলে, নিজেকে দেখে, পরনের কাপড় পরে আয়নায় নিজেকে ভেংচি কেটে, কাঁদো মুখ করে, স্মিত হেসে, হা হা হেসে, সরে আসে। একা বসে গান গাইতে গীতবিতান হাতে নেয়, গাইতে গাইতে অনুভব করে গলার স্বর বুজে আসছে, গীতবিতান রেখে দেয়।

    আর রাত হলে বিছানায় শুয়ে সে খোলা জানালায় কালো আকাশ দেখতে দেখতে ভাবে, বেনোয়া পাসকালকে চুমু খাচ্ছে, ঠিক যেমন করে চুমু খায় নীলাকে। জ্যাকলিনকে ঘুম পাড়িয়ে পাসকাল শোবার ঘরে এসেছে, আর তাকে জড়িয়ে ধরে বেনোয়া বলছে জ তেম জ তেম জ তেম। জ তেম প্যাশনামো, জ তেম সিরিয়াসোমো। তারপর ঠিক যেমন করে নীলাকে উলঙ্গ করে বেনোয়া, তেমন করে করছে পাসকালকে। নীলার স্তনবৃন্ত দুটোর নাম যদি চেরি হয়, পাসকালের ও দুটো লিঙমবেরি তবে। পাসকালের সাদা ত্বক স্পর্শ করে বেনোয়া উল্লাসে ফেটে পড়ছে, কী সুন্দর তোমার রঙ, কী মসৃণ তোমার ত্বক, ঠিক যেমন করে নীলার রঙ দেখে সে বলে। পাসকালের ভেতর ঢোকার জন্য বেনোয়ার পুরুষ অঙ্গ ফুলে ফেঁপে উঠেছে, গুঁসছে। সারারাত পাসকালকে ঠিক তেমন করে সুখ দিচ্ছে, যেমন করে নীলাকে দেয় বেনোয়া।

    পাসকাল নামের এক অদৃশ্য আততায়ীর উত্তপ্ত শ্বাস নীলার সারা গা পোড়াতে থাকে।

    এ অংশটুকু অঙ্কুর থেকে বেরুনো ‘ফরাসী প্রেমিক’ এর ২৬১ ও ২৬১ পৃষ্ঠা থেকে নেয়া। জীবনের কাছাকাছি না গেলে এত তীব্রভাবে বাস্তবতার চিত্র ফুটিয়ে তোলা কিভাবে সম্ভব, তা আমার জানতে ইচ্ছে করে।

    ‘ফরাসী প্রেমিক’ এর আরেকটি অংশও রইল –
    ‘ বেলোয়া নীলার ধ্যানে টোকা দিয়ে বলে, কি ভাবছ এত?
    না তেমন কিছু না,
    তেমন কিছু না মানে? আমাকে বল।
    বলার মত কিছু না।
    বলার মত না হলেও বল।
    বেনোয়ার কন্ঠে দাবি, প্রেমিকের দাবি। প্রেমিকা অন্যমনে কিছু ভাবলেও সে শোনার বা জানার দাবি করতেই পারে, কারণ নীলা বেনোয়াকে জীবন সঁপে দিয়েছে। জীবন সঁপে দিলে শরীর যেমন দেওয়া হয়, মনও দিতে হয়, রেলের কামরায় বসে ভাবা টুকরো টুকরো উদাসীন ভাবনাগুলোকেও।
    জঁ পল সার্ত্রের অথা ভাবছি। নীলা বলে।
    আমাদের জঁ পল সার্ত্রের কথা?
    হ্যাঁ তোমাদের জঁ পল সার্ত্রের কথা।
    বেনোয়া জোরে হেসে ওঠে, আমি ভাবলাম তুমি বুঝি তোমাদের দরিদ্র কৃষকদের কথা ভাবছ।
    নীলা অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে, সার্ত্র বলেছেন, জীবনের কোনও অর্থ নেই, কিন্তু একে অর্থময় করে তুলতে হবে। কি করে অর্থময় করতে হয় বলো তো? কোনও দরিদ্র দেশে দরিদ্র পরিবারে দরিদ্র ছেলে বা মেয়ের জন্ম হল, লেখাপড়া করার সুযোগ জোটেনি, অনাহারে অভাবে অসুখে কষ্ট পাচ্ছে, চব্বিশ ঘন্টা তার পরিশ্রম করতে হয় এক থালা ভাত জোটাতে, তার হয়ত বিরাট প্রতিভা ছিল বড় একজন বিজ্ঞানী হবার, বা বড় একজন লেখক হবার, বা বড় একজন দার্শনিক হবার। কিন্তু প্রতিভাকে সে কাজে লাগাবে কি করে, বল? জীবনকে অর্থময় করার তার সুযোগ কোথায়? পেটে যার খাবার নেই, গায়ে যার কাপড় নেই, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তার কাছে জীবন মানে কি কেবলই যন্ত্রণা নয়? ..

    বেনোয়া এবারও হেসে ওঠে, বলে, কি সব আবোল তাবোল বকছ! সবাই তো আর একইরকম করে জীবনের অর্থ তৈরী করে না। আমার জীবনের অর্থ হচ্ছে জ্যাকলিন। আমার বাবা মা ধনী ঘরের সন্তান ছিলেন না, তাঁরাও প্রচুর সংগ্রাম করেছেন। সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, আমি তাঁদের জীবনকে পূর্ণতা দিয়েছি, অর্থ দিয়েছি। আর তাছাড়া পরকালে কৃতকর্মের ফল তো ভোগ করতেই হবে। জীবন অর্থহীন হবে কেন?
    নীলা জোরে হেসে ওঠে।
    কি হাসছো যে?
    নীলা হাসতে হাসতেই বলে, তুমি পরকালে বিশ্বাস কর?
    নিশ্চয়ই। তুমি কর না?
    না।
    কেন তোমাদের ধর্মে তো স্বর্গ নরক আছে! বেনোয়া বলে।
    বহুকাল আগে এক বাঙালি লেখক লিখে গেছেন স্বর্গ নরক নিয়ে, “কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর, মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতে সুরাসুর।”
    নীলা হাসতে হাসতে বলে।
    বেনোয়া সোজা হয়ে বসে, গম্ভীর কন্ঠ তার, তুমি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস কর না?
    নীলা স্পষ্ট স্বরে বলে, না।
    আশ্চর্য! ভেনোয়া গা ছেড়ে দেয় আরাম চেয়ারে।
    ভারতবর্ষের খ্যাতিই হচ্ছে এর আধ্যাত্ববাদ। ভারতে আদিকাল থেকে এরই চর্চা হয়েছে, এখনও এরই চর্চা হচ্ছে, এ সে ইশকুলের বইয়েই পড়েছে জানালো।
    নীলা বলে, প্রাচীন ভারতের চার্বাক দার্শনিকের কথা তোমার ইশকুলের বইয়ে লেখেনি? তখনকার জনপ্রিয় দর্শনের নাম ছিল লোকায়ত। লোকায়তবাদীরা আত্মা মানত না, ঈশ্বর মানত না, স্বর্গ নয়, নরক নয়। বহুকাল ধরে ভারতবর্ষ ইংরেজদের শাসনে থেকেছে। ইংরেজরা আমাদের বোঝাতে চেয়েছে যে, আমরা ভারতবাসীরা, নেহাত খাটো ধরণের মানুষ। সভ্যতায় শিক্ষায় জ্ঞানে বুদ্ধিতে কোনোদিক থেকেই ওদের সমান নই, তাই আমাদের পক্ষে দাসত্বটাই স্বাভাবিক। অবশ্যই এসব মিথ্যে। ভারতবাসীকে ঠকাবার জন্যই এসব বলা হচ্ছে। একারণেই, ভারতবর্ষে যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হল, কিছু কিছু জাতীয়তাবাদী পন্ডিত দেশের অতীত গৌরবটাকে খুব বড় করে দেখাবার চেষ্টা করলেন। ভারতবর্ষের ইতিহাস খুঁড়ে প্রমাণ দেখাতে লাগলেন কত মহান, কত উচ্চ আমাদের সভ্যতা। পশ্চিমের বিজ্ঞানবাদ বা বস্তুবাদের বিপরীত ভাববাদ দেখিয়ে বলতে লাগলেন অতীতে মুনি ঋষিরা বলে গেছেন সংসারটা হচ্ছে অনিত্য, মায়া, মিথ্যা। সংসারের কিছু স্থূল সুখভোগকেই পুরুষার্থ মনে করা নেহাত স্থূলবুদ্ধির লক্ষণ। এসব হচ্ছে আত্মমর্যাদার কারণে। আর একেই পশ্চিমীরা ভেবে নিয়েছে, ভারতের সত্যিকার পরিচয়।
    এটুকু বলে নীলার আশংকা হয় এই বুঝি বেনোয়া এখন প্রশ্ন করবে, এতই যদি বস্তুবাদের কদর
    ভারতবর্ষে, কই, দেশ তো এখনও দরিদ্রই রয়ে গেছে? অর্থনীতির অবস্থা এমন করুন কেন? মানুষ কেন দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে? নীলা সম্ভাব্য প্রশ্নটির একটি উত্তর দাঁড় করায়, কারণ দুশ বছরের ইংরেজ শাসন অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। প্রশ্ন, ইংরেজ তো গেছে, পঞ্চাশ বছরের বেশি হয়ে গেল। উত্তর, পঞ্চাশ বছর খুব কম সময় দেশকে গড়ার জন্য। বেনোয়া যুক্তি দেখাতে পারে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর জার্মানিতে কিচ্ছু ছিল না, পঞ্চাশ বছরে ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশ জার্মানি। নীলা তখন আমেরিকার মার্শাল প্ল্যানএর কারণটি দেখাবে।
    ধ্যুত। মাথা ঝিমঝিম করে নীলার। মাথায় বেনোয়ার ভয় ঘাপটি মেরে আছে।

    নীলার হাতদুটিতে আঙুল বুলিয়ে দিতে দিতে বলে বেনোয়া, তাহলে তুমি কি বলতে চাও তুমি বিশ্বাস কর না যে ঈশ্বর আমাদের গড়েছেন পরস্পরের জন্য?
    নীলা জানালা থেকে চোখ না ফিরিয়ে বলে, না।’

    এই অংশটা ৩২৪, ৩২৫ ও ৩২৬ নং পৃষ্ঠায় রয়েছে।

    ভাবনার এমন আঁকবাঁক কলমে ধরা সাধারণ কোন লেখকের পক্ষে সম্ভব নয়।

    আমার তসলিমা নাসরিনের আরেকটি উপন্যাস ‘শোধ’ থেকেও লম্বা একটা উদ্ধৃতি দেবার ইচ্ছে ছিল, আপাতত আর তা করছি না। তার চেয়ে তাঁর কয়েকটা কবিতা নিচে তুলে দিলাম –

    প্রাপ্তি

    সাতসকালে খড় কুড়োতে গিয়ে
    আমার ঝুড়ি উপচে গেছে ফুলে
    এত আমার কাম্য ছিল না তো!
    এখন আমি কোথায় রাখি, কোথায় বসি, কোথায় গিয়ে কাঁদি!

    পুরো জীবন শূন্য ছিল, ছিল
    কারু তো আর দায় পড়েনি দেবে
    তুমি এমন ঢেলে দিচ্ছ, ভরে দিচ্ছ,ম কাছে নিচ্ছ টেনে
    এত আমার প্রাপ্য ছিল না তো!

    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

    ব্যস্ততা

    তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম, যা কিছু নিজের ছিল দিয়েছিলাম,
    যা কিছুই অর্জন-উপার্জন !
    এখন দেখ না ভিখিরির মতো কেমন বসে থাকি !
    কেউ ফিরে তাকায় না।
    তোমার কেন সময় হবে তাকাবার ! কত রকম কাজ তোমার !
    আজকাল তো ব্যস্ততাও বেড়েছে খুব।
    সেদিন দেখলাম সেই ভালবাসাগুলো
    কাকে যেন দিতে খুব ব্যস্ত তুমি,
    যেগুলো তোমাকে আমি দিয়েছিলাম।

    ~~~~~~~~~~~

    চুক্তি

    এক বিকেলে মেঘনা যাবো, ঠিক তো!
    আগের সব অভিজ্ঞতা তিক্ত,
    একটু ভাই বুঝে চলবে, নৌকো যদি চড়ি,
    শেষ বিকেলে খিদে লাগলে কাঁচকি-চচ্চড়ি,
    চন্দ্রমুখী আকাশখানি আয়না-জলে ফেলে
    উপুড় করে রাখব কিছু স্বপ্ন এলেবেলে।

    সুখে কিন্তু শরীর ভাসে, জল-জোয়ারে সুখ,
    একটু তুমি জানি জলের পা ছুঁতে ইচ্ছুক।
    আমার বড় শহর ছেড়ে দূরে যাবার শখ
    সঙ্গে যদি ইচ্ছে যদি চঞ্চল বালক
    একটু ভাই দেখে চলবে, পিছলে যদি পড়,
    সাঁতার জানো? মনে হয় না। নৌকো নড়বড়।

    এক বিকেলে জীবন ছোঁবো, ঠিক তো!
    সেই কতকাল ভিতরখানা রিক্ত।
    ~~~~~~~~~~~~~~~
    এসেছি অস্ত যেতে

    পুবে তো জন্মেছিই, পুবেই তো নেচেছি, যৌবন দিয়েছি,
    পুবে তো যা ঢালার, ঢেলেইছি
    যখন কিছু নেই, যখন কাঁচাপাকা, যখন চোখে ছানি, ধূসর-ধূসর,
    যখন খালি-খালি, যখন খাঁ খাঁ – এসেছি অস্ত যেতে পশ্চিমে।

    অস্ত যেতে দাও অস্ত যেতে দাও দাও অস্ত যেতে
    না দিলে স্পর্শ করো, একটু স্পর্শ করো, স্পর্শ করো একটুখানি
    লোমকূপে বুকে
    স্পর্শ করো ত্বকের মরচে তুলে ত্বকে, চুমু খাও,
    কণ্ঠদেশ চেপে ধরো, মৃত্যুর ইচ্ছেটিকে মেরে ফেলো,
    সাততলা থেকে ফেলো! স্বপ্ন দাও, বাঁচাও।

    পুবের শাড়ির আঁচলটি বেঁধে রেখে পশ্চিমের ধুতির কোঁচায়
    রং আনতে যাব আকাশপারে,
    যাবে কেউ? পশ্চিম থেকে পুবে,
    দক্ষিণ থেকে উত্তরে ঘুরে ঘুরে
    এই তো যাচ্ছি আনতে উৎসবের রং, আর কারও ইচ্ছে থাকলে চলো,
    কারও ইচ্ছে হলে আকাশদুটোকে মেলাতে, চলো।
    মিলে গেলে অস্ত যাব না, ওই অখন্ড আকাশে আমি অস্ত যাব না,
    কাঁটাতার তুলে নিয়ে গোলাপের বাগান করব, অস্ত যাব না,
    ভালবাসার চাষ হবে এইপার থেকে ওইপার, দিগন্তপার
    সাঁতরে সাঁতরে এক করে দেব গঙ্গা পদ্মা ব্রহ্মপুত্র, অস্ত যাব না।

    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    ঝরাপাতা

    ঝরাপাতাদের জড়ো করে পুড়িয়ে দেব ভেবেছি অনেকবার,
    রাত হলেও যত রাতই হোক, আগুন হাতে নিই।
    ওদের তাকিয়ে থাকা দেখলে গা শিরশির করে।
    ঝরে গেলে কিছুর আর দায় থাকে না
    যেমন খুশি ওড়ে, ঘরে বারান্দায় হৈ হৈ করে খেলে,
    জানালায় গোত্তা খাচ্ছে, গায়ে লুটোপুটি, হাসছে,
    কানে কানে বার বার বলে, ঝরে যাও, ঝরো, ঝরে যাও।
    মন বলে কিছু নেই ওদের। তারপরও কী হয় কে জানে, আগুন নিভিয়ে দিই।

    পাতাগুলো পোড়াতে পারি না, কোনও কোনও দিন হঠাৎ কাঁদে বলে পারি না,
    গুমরে গুমরে কারও পায়ের তলায় কাঁদে।
    কান্নায় শব্দ দিগন্ত অবদি ছড়ানো শত শতাব্দীর মরুময় নৈঃশব্দ
    ভেঙে ভেঙে জলতরঙ্গের মতো উঠে আসে…
    কেউ হেঁটে আসে, আমার একলা জীবনে কেউ আসে।
    সে না হয় দুদণ্ড দেখতে এল, তবু তো এল।
    সে না হয় কাছেই কোথাও গিয়েছিল, তাই এল, তবু তো এল।

    ঝরাপাতারা তাকে নিয়ে নিয়ে আসে, যতক্ষণ নিয়ে আসে,
    ততক্ষণ জানি আসছে, ততক্ষণ নিজেকে বলি কাছেই কোথাও নয়, পথ ভুল করে নয়,
    আসলে আমার কাছেই, বছরভর ঘুরে, ঠিকানা যোগাড় করে খুঁজে খুঁজে
    আমার কাছেই আসছে কেউ, ভালোবেসে।
    ওই অতটা ক্ষণই, ওই অতটা কুয়াশাই
    আমার হাত পা খুলে খুলে, খুলি খুলে, বুক খুলে গুঁজে দিতে থাকে প্রাণ।
    বাড়ির চারদিকে পাহাড় হয়ে আছে ঝরাপাতার,
    পোড়াতে পারি না।
    ডুবে যেতে থাকি ঝরাপাতায়, পোড়াতে পারি না।

    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    নীলকন্ঠ নারী

    পান করবার যে পাত্রটিই আমি বেছে নিই
    সে পাত্রেই থাকে বিষ, নিকটেই ছিল
    প্রিয় নাসপাতি-রস, বেদানা ও আঙুরের বাদামি পানীয়।

    বরাবরই আমি রং দেখে ভুল করি
    যে রঙে ঔজ্জল্য বেশি
    যে রঙের মোহে আপাত আনত হই
    দেখি কন্ঠ পুড়ে নামে বিষ।

    আমার ব্যার্থতা এই,
    একশ গোলাপ ঘেঁটে হাতে নিই হলুদ করবী।

    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    সারাদিন কেটে যায় বিষে ও বিষাদে

    সংসারে তেমন মানুষ কি আছে যে কিনা দীর্ঘ দীর্ঘ দিন দুঃখ না দিয়ে পারে ?

    যে মানুষই সুখের নদীতে সাম্পান ভাসাবে বলে শর্ত দিয়েছে,
    যে মানুষই কাছে এসে বিস্তর গল্প শুনিয়েছে ফুলের জন্মের,
    প্রজাপতির ডানায় যে রং থাকে সেই রঙের…
    যে মানুষই আকাশের ডাল থেকে চাঁদ ছিঁড়ে এনে কপালে পরাতে চেয়েছে আমার
    তারই খুব তাড়া পড়ে যাবার যদি হাতখানা না বাড়াই তার হাতের দিকে ক্রমশ,
    অথবা যদি বাড়াই, সে ছোঁয়, ছুঁয়ে একটু একটু করে মন্থন করে মেদ মাংস, বশ করে
    স্নায়ু।

    ভালবাসি শব্দটি যে উচ্চারণ করে বেশি, সেই যায় ভেড়াতে
    এক-এক দিন এক-এক ঘাটে তার বুকের সাম্পান…
    বেনিয়া প্রেমিকগুলো কড়া দরে ফেরি করে ফেরে প্রেমের অঙ্কুর।

    সংসারে আসলে তেমন মানুষ নেই, যে কিনা দীর্ঘ দীর্ঘ দিন দুঃখ না দিয়ে পারে।

    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    স্বেচ্ছামৃত্যু

    জীবনের চেয়ে বেশি এখন মৃত্যুতে বিশ্বাস আমার,
    চেনা শহরের চেয়ে দ্বীপান্তরে
    প্রেমের চেয়ে বেশি অপ্রেমে।

    কেউ আমার, ধরা যাক কোথাও বসে আছি
    ঘাসে অথবা ক্যাফেতে অথবা বাসস্টপে
    কাছ ঘেঁষলেই মনে হয়
    এই বুঝি জীবনের রঙের স্বাদের গন্ধের
    কথা শোনাতে এল…
    তড়িঘড়ি দৌড়ে যাই নির্জনতার দিকে
    জমকালো বিষণ্ণতায়, শূন্যতার ভিড়ে

    জন্ম থেকে এখানেই বাস আমার, এখানেই মানায় আমাকে।

    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

    আরও অনেক দেয়া যেত। দিলাম না।

    শিল্পবোধসম্পন্ন যে কারো কাছে আমার প্রশ্ন, যিনি এমন কবিতা লিখতে পারেন, তাঁকে কি করে খারাপ লেখক বলা যায়?

  11. মাসুদ করিম - ২৩ জুলাই ২০১০ (৯:০৮ অপরাহ্ণ)

    যদিও তসলিমা নাসরিন ভারত সরকারের কাছে ভারতে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করেছেন এবং ভারতের অনেক সাংবাদিক মিডিয়াকর্মী এবিষয়ে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন কিন্তু ভারতের সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর সূত্রে জানা যাচ্ছে যে তসলিমাকে ভারত ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। বিস্তারিত পড়ুন এখানে

  12. মাসুদ করিম - ১৩ আগস্ট ২০১০ (৫:০০ অপরাহ্ণ)

    ২৫ আগস্ট তসলিমা নাসরিনের জন্মদিন, আর গতকাল তার ভারতে অবস্থানের ভিসার মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়ছে, ভারত সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রভাবশালী লেখক ও বুদ্ধিজীবিদের অনুরোধে নিয়মের ব্যাতিক্রম ঘটিয়েই miscellaneous category-র ‘পাঁচ বছরের’ বাধ্যবাধকতাকে শিখিল করেছে, আউটলুক ইন্ডিয়া একেই বলছে ভারত সরকারের কাছ থেকে তার জন্মদিনের উপহার।

    The government has extended the visa of controversial Bangladeshi writer Taslima Nasrin by another year from August this year, shifting from its earlier stand of asking her to leave the country and apply afresh to stay in the country.

    The 47-year-old doctor-turned writer, who will be celebrating her birthday on August 25, is also trying for a permanent residency in the country. Her visa is valid till August 16 and has been extended by another year, official sources said.

    বিস্তারিত পড়ুন এখানে

  13. মাসুদ করিম - ৮ মার্চ ২০১১ (১০:০৮ অপরাহ্ণ)

    নারী দিবসের শতবর্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তসলিমা নাসরিনের একটি অসাধারণ কবিতা তুলে দিয়েছেন নওরীন তামান্না, এখানে

  14. নওরীন তামান্না - ৯ মার্চ ২০১১ (১২:১০ পূর্বাহ্ণ)

    সত্যিই বড়ো দুঃখ হয় মাসুদ ভাই। আমরা কয়েক প্রজন্মের নারীরা বড় হলাম, সান্ত্বনা পেলাম, শক্তি পেলাম যার ‘নির্বাচিত কলাম’ পড়ে, আজ তাকেই আর কোথাও দেখি না। অথচ এই দেশটিতে এরশাদ, আমিনী, গোলাম আযম – সকলেরই ঠাঁই হয়, কেবল তসলিমারই হয়না। তার অপরাধ ‍্(যদি নিজের মত প্রকাশ কোন অপরাধ হয়ে থাকে) কি এদের চেয়েও গুরুতর?

  15. মাসুদ করিম - ৪ জানুয়ারি ২০১২ (৫:২৪ অপরাহ্ণ)

    কী অসাধারণ তৎপর বাংলাদেশ পুলিশ! পিরোজপুরের এক কলেজে ‘লজ্জা’র একটি কপি পাওয়া গেছে তাই কলেজের অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবং পুলিশ ইন্সপেক্টর এও বলছেন, অধ্যক্ষের বিচার হবে ও বিচারে ওই অধ্যক্ষের প্রচলিত আইনে তিন বছরের সাজাও হবে। ‘লজ্জা’ তো আমরা যখন বেরিয়েছিল তখনই পড়েছি। এটাই তসলিমা নাসরিনের একমাত্র বই যাতে ধর্ম নিয়ে ‘অবমামনাকর’ কিছু লেখা নেই। এটা সম্পূর্ণতই বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা পরবর্তী বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মুসলমানের হিন্দু নির্যাতনের সত্য ঘটনা নিয়ে রিপোর্টধর্মী উপন্যাস।

    A head teacher in Bangladesh has been arrested after a banned book regarded by some Muslims as blasphemous was found in her college, police said Wednesday.

    Yunus Ali was arrested from the KC Technical and Business Management College in the coastal district of Pirojpur after police discovered a copy of Taslima Nasreen’s novel “Lajja” (“Shame”) in the college library, police inspector Abdul Malek said.

    Nasreen was forced to flee the country in 1994 after radical Muslims accused her of blasphemy over the novel, which depicts the life of a Hindu family persecuted by Muslims in Bangladesh.

    The novel was banned a year after publication in 1993 under legislation in Muslim-majority Bangladesh that outlaws “inflammatory statements”.

    The 49-year-old gynaecologist-turned-author now lives mostly in Europe and India, where she has also been hounded into hiding by death threats from Islamic extremists.

    “Lajja is a banned book. Still, the principal had it in the college library,” Malek said, adding Ali faced prosecution and could be jailed up to three years if found guilty.

    খবরের লিন্ক : Bangladesh teacher arrested over banned book

  16. মাসুদ করিম - ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (১:৫২ অপরাহ্ণ)

    গত বৃহষ্পতিবার তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনীমূলক নতুন বই ‘নির্বাসন’এর মোড়ক উন্মোচন হল ঢাকা বইমেলায়, বইটি প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশন এবং মোড়ক উন্মোচন করেছেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। খবরের লিন্ক : এসেছে তসলিমা নাসরিনের ‘নির্বাসন’। কলকাতা বইমেলায় মুসলিম মৌলবাদীদের হুমকিতে এই বইটিরই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছিল। এনিয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সাথে তসলিমা নাসরিনের সাক্ষাৎকার।

    Once again, your book has stirred a controversy…

    Well, the launch of the seventh volume of my autobiography Nirbasan was cancelled in Kolkata, but was successfully released in Muslim-majority Bangladesh the very next day. Author Syed Abul Moksud released my book at Dhaka’s Bangla Academy premises. I am very happy. Bangladesh did what secular, democratic India should have done.
    Do you now hope to return to Bangladesh?

    No. They don’t care if my book is published or launched in the country. It’s just an event. They will still stop me from returning to Bangladesh. It’s not a sign of any improvement. Bangladeshi fundamentalists have not softened their stance. They know the government is harsher on me. I guess the fundamentalists also didn’t expect the government to drive me out of the country. Neither Sheikh Hasina nor Khaleda Zia nor the interim government allowed me to return. Sheikh Hasina has taken bold steps, including the trial of war criminals and action against fundamentalists. But for me, nothing. Islamic fundamentalists labeled me anti-Islamic. Maybe the government is apprehensive of being called anti-Islamic if they allow me to return. Bangladesh has shut me out for 18 years. The blackout in West Bengal is recent. For an author, it’s extreme injustice. But I dream I can return some day to Kolkata at least.

    Are your books still being published in Bangladesh?

    In December 2011, Bangladeshi publisher, Osman Gani of Agami Prakashani, met me. I signed a contract with him giving him all rights. He took the risk to release Nirbasan in Dhaka.

    Ever since I left Bangladesh, my publishers have not paid me a penny’s royalty. My books were pirated and sold in Bangladesh. There were instances of people who wrote trash and sold it with my name and photograph on the book cover. I was abused for the trash but my publishers didn’t take any action nor did they fight against the ban on my books.

    Civil society activism is growing in India. Have intellectuals and activists spoken up after your book launch was cancelled in Kolkata?

    At the Kolkata Book Fair, author Nabarun Bhattacharya released my book, but most liberals and intellectuals kept quiet. They, perhaps, feel it’s a personal matter. It’s not. Poets, writers and intellectuals who demonstrated during the CPM rule to bring back Taslima to Kolkata and are close to the current Bengal government did not speak a word after my book launch was cancelled.

    I’ve seen liberals and intellectuals in India usually side with a political party. Many who call themselves secular are not equally vocal against misdeeds by Hindu and Islamic fundamentalists. If you don’t criticize Hindu, Muslim, Christian, Jew, etc, fundamentalists equally, you are neither secular nor liberal. Some liberals support (M F) Hussain while others support Rushdie. He got a lot of support after he was not allowed to attend the Jaipur Lit fest. Why were they silent in my case? Is it because he is a man and writes in English?
    Do you get any support from the Muslim community?

    In West Bengal, a large number of my friends are Muslims who stood by me no matter what. While in Kolkata, I launched Dharma mukta Manavbadi Manch in 2005 for Muslims who are rational and progressive. It’s not easy to be an atheist in Muslim society. They have to struggle with their family and society to be able to question or think freely. They are more conservative in a country where they are in a minority. Muslims who wanted to express themselves or speak against religious orthodoxy could do so at the Manch.
    How do you spend your days?

    I mostly spend my time writing, reading, and playing with Minu, my cat. When I am in India, since I’m not allowed to go to Kolkata, friends from there come to see me. Then I catch up on the addas I miss. In March, I will speak at the Reason Rally in Washington DC where secular humanists will gather in front of the White House, asking the US to be 100% secular.

    লিন্ক এখানে

  17. মাসুদ করিম - ৩০ আগস্ট ২০১২ (১২:১০ অপরাহ্ণ)

    তার কবিতার হিন্দি অনুবাদ সংকলন ‘মুঝে দেনা ঔর প্রেম’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে দিল্লিতে প্রায় চার বছর পর জনসমক্ষে আসলেন তসলিমা নাসরিন। এই সুযোগে ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দি হিন্দু’ তার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

    Diary of an exile

    Taslima Nasreen just made a public appearance in Delhi four years after she was attacked in Hyderabad. The firebrand writer speaks to Sangeeta Barooah Pisharoty about why she will continue to fight

    30DMCTASLIMA1_1193128g

    “It is a difficult life I am living,” says firebrand Bangla writer Taslima Nasreen. Living in exile for 18 years now, after her bestselling novel Lajja caught the ire of fundamentalist forces eventually leading the Bangladesh Government to banish her out of the country. After moving from one European country to another for 10 years, she finally landed up in West Bengal, where, she could “get a taste of home.”

    Not for ever though. After the attack on her at the Hyderabad Press Club in 2007, Taslima had to leave West Bengal. In fact, she says, “India Government suggested I leave the country”. She returned in 2008 though.

    Now in Delhi, she made a public appearance just the other day, four years after the Hyderabad attack. It was to launch the Hindi translation of her Bengali poems titled Mujhe Dena Aur Prem. Though Taslima says she does not avoid meeting people in Delhi, her publisher is more keen on email interviews rather than face-to-face interactions, presumably to avoid disclosing her exact location in the city. Here, Taslima tells The Hindu Metro Plus reader why she continues her fight. Excerpts:

    How is life in Delhi? How often do you make public appearances? Do you feel lonely in your fight against free speech?

    After a long struggle, I am allowed to live in India. But West Bengal is still forbidden for me. Since the attack in Hyderabad, I do not appear in public in India. After more than four years, I first attended a public meeting in Delhi the other day. I do not get the opportunity to meet people in Delhi. Delhi is not Kolkata. I terribly miss a social life in Delhi.

    I want to feel safe in India. I get sympathy, solidarity and love from the people who believe in freedom of expression and women’s rights.

    I often travel on invitation of Western organisations to give lectures on human rights, women’s rights, secularism, humanism, etc. Sometimes I feel lonely in the fight for freedom of expression in the Indian subcontinent. I have no right to live in Bangladesh and West Bengal, the lands where fellow Bengalis live. I am not only banished from those lands, I am also blacklisted. Publishers do not dare to print my books and editors of newspapers and magazines do not have the courage to publish my articles. So I have started writing blogs in English, my second language. (http://freethoughtblogs.com/taslima)

    Why is your fight important?

    The reasons are: first, the insistence of fundamentalists on divine justification for human laws; second, their insistence on the superior authority of faith, as opposed to reason; third, their insistence that the individual is immaterial. Fundamentalists want to put everybody in their straitjacket and dictate what an individual should eat, wear and live. They do not believe in liberty of personal choice or plurality of thought. However, as they are believers in a particular faith, they believe in propagating only their own ideas. They deny others the right to express their views freely, and cannot tolerate anything which they perceive as going against their faith. They proclaim themselves a moral force but their language is hatred and violence.

    Humankind is facing an uncertain future; the probability of new kinds of rivalry and conflict looms large, in particular, the conflict between two different ideas — secularism and fundamentalism. I do not agree that the conflict is simply between two religions — Christianity and Islam or Hinduism and Islam or Judaism and Islam. There are fundamentalists in every religious community…

    How do you miss Bangladesh, your house there?

    My house in Dhaka is has long been occupied by people I do not have contact with. After my parents’ death, my relatives have changed completely. To them, I am dead. They did not let me have anything that I inherited.

    I do not know how I would feel if I ever get the permission to live in my country. Many times I felt that I was living in exile in my own country. Now, I believe that I have a home, which consists of a family of people – men as well as women – who bravely oppose the forces of darkness and ignorance. The hearts of people are my home and my country, my safe haven, my refuge.

    Tell us about your new book translated into Hindi?

    Mujhe Dena Aur Prem (Vani Prakashan) is a book of my select poems. The translator has chosen the poems written on mostly on love and freedom. Love should not be used as a shackle. Love should rather set you free.

    I am happy that finally my publisher has found one in Prayag Shukla, a Hindi poet. Those who translated my books in Hindi earlier knew Hindi language. But knowing the language is not enough. In the past, writers translated the works of other writers. Nowadays, we hardly see this phenomenon. Take French poet Charles Baudelaire who translated Edgar Allen Poe, leading some bilinguals to prefer Baudelaire over Poe. Ezra Pound edited Eliot’s “The Waste land”, the work that got him the 1948 Nobel Prize in literature. Or, Edward FitzGerald who translated the “Rubaiyat” of Omar Khayyam. Yeats worked on Tagore’s translation and drew Westerners’ attention that helped Tagore to get the Nobel.

    Some filmmakers wanted to make films on your novels and also on your cat. What happened?

    No filmmaker in West Bengal is allowed to make a film based on my novel or on my life or on my cat’s life. My book launch in the Kolkata Book Fair last year was cancelled by the Government. I am a social and political outlaw. But I can assure you, come what may, I will never be silenced. I will continue my fight for justice and equality until my death.

  18. মাসুদ করিম - ৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ (৭:০৮ অপরাহ্ণ)

    আর কিছু নয় একটা রেকর্ড রাখছি।

    তসলিমা বলেছেন

    But you didn’t stop at that. Your Twitter comment that author Sunil Ganguly has sexually harassed you and many other women is bound to have tremendous repercussions…
    It’s a patriarchal society, where women are often subjected to sexual harassment. I’ve heard that Sunil has done it to many women. It’s rather common in a man’s world. Casting couch is a reality, but women usually do not complain in fear of losing their jobs. There are many upcoming writers who get physically abused by the biggies in the field, but they can never protest as that might put their careers at stake. Sunil harassed me long back. I had just returned from France and was putting up at a city hotel. One evening, Sunil came to my room along with his friends for dinner. Once we were done, came the parting hug. Sunil suddenly molested me. I was numb. I didn’t know whether to forgive him or protest. I suffered from that psychological trauma.
    Were you afraid to protest?
    I did protest, but it was through my poem, Rastar chhele ebong kobi. It’s written on Sunil Gangopadhyay and is part of my book of poetry — Khali Khali Lage. I was not a vulnerable woman, whom any man could exploit. I was a well-established writer by then and if Sunil could do this to me, he could do it to any woman. I know Sunil is an influential man who can act as a catalyst in throwing me out of this country, but still it’s time I speak the truth.
    You also hold the author responsible for the ban on your book…
    Former CM Buddhadeb Bhattacharjee said 25 intellectuals came to him and ask him to ban my book Dwikhandito. Sunil was one of them. He also said in interviews that he wanted my book banned as it would hurt religious feelings. When the government asked me to leave West Bengal in 2007, he also advised me on the phone to leave Kolkata. But I said no politely.
    Did you ever try to dig out the real reasons behind the ban?
    Sunil is an influential man and I was no sycophant. But the equations changed soon after as I unmasked many authors in my book. Sunil told me that I shouldn’t have made my personal relationships public. Dwikhandito is the third part of my autobiography, where I wrote about some authors I was close to. But there was no mention of Sunil. I will never write a biography called Ordhek Jibon like Sunil! For me, nothing is hidden. I suffered a lot for telling the truth. Come what may I will continue telling the truth.

    সুনীল বলেছেন

    Taslima’s claims are laughable

    Ihave no clue why Taslima is blaming me for being the brain behind the ban on her book. When Dwikhandito was banned, I, along with many other eminent authors like Sankha Ghosh, protested against the decision. We also organized a protest rally. Moreover, never in my life have I written anything against her. After being forced to leave Kolkata, Taslima always wanted to come back. Maybe, she blames me for not taking any step in that direction. But, she needs to understand that the decision was taken by the Indian government and I had no say in it. But all said and done, I will protest against anything that may cause communal disharmony.
    Regarding the sexual harassment charges that she has brought against me, I can only laugh out loud. I’ve known Taslima for a long time. But we didn’t keep in touch after she left Kolkata. My question to her is — if she has been sexually harassed by me, which must have happened a long time ago, then what was she doing for so long? Why bring it up now? I think it’s nothing but her frustration talking. Such comments don’t bother me at all.

  19. মাসুদ করিম - ১২ জানুয়ারি ২০১৩ (২:২০ অপরাহ্ণ)

  20. মাসুদ করিম - ১৩ জানুয়ারি ২০১৩ (২:৩৬ অপরাহ্ণ)

    নারী পুরুষের পোষাকের সমতা নিয়ে তসলিমা নাসরিন তার ইংরেজি ব্লগে এক সম্প্রতিক পোস্টে কিছু মতামত দিয়েছেন, তা নিয়ে বিডিনিউজ২৪.কম স্পটলাইট বিভাগে খবর করেছেন ‘নারী পুরুষের অভিন্ন পোশাক চান তসলিমা‘, এটা ভাল যে দেশের একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম তসলিমার ব্লগপোস্টকে খবর হিসাবে তুলে এনেছে। তসলিমা নাসরিনের বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে এর আগে বাংলানিউজ২৪.কমও বিভিন্ন সময় খবর করেছে। কিন্তু যেটা প্রার্থিত সেটা এখনো হচ্ছে না — তসলিমা নাসরিনের লেখা প্রকাশ হচ্ছে না বাংলাদেশের ছাপা অনলাইন পত্রপত্রিকায়, এটা কিন্তু নিয়মিত হওয়া উচিত। সমস্যাটা কোথায় অবশ্য জানি না — বাংলাদেশে সরকারের দিক থেকে, পত্রপত্রিকার দিক থেকে,তসলিমা নাসরিনের দিক থেকে? নাকি সব দিক থেকে?

    এবার আসা যাক পোষাক নিয়ে আলোচনায়, তসলিমা নাসরিন লিখেছেন

    I wear women’s sarees, skirts, bangles, high heels, I wear men’s shirts, pants, ties, suits, jackets! Heterosexual men should have the same freedom as heterosexual women have.

    হ্যাঁ, নারীরা পোষাকের ব্যাপারে সত্যিই অনেক বেশি বৈচিত্রপূর্ণ পুরুষদের থেকে। পুরুষদের পোষাকের বৈচিত্র আসলেই কম। আগ্রহী পুরুষরা অবশ্যই এব্যাপারে এগিয়ে আসতে পারেন। তবে এখানে একটা ব্যাপার আছে — মেয়েদের শার্ট, প্যান্ট সবকিছু আলাদা কাটাকুটিতে করা পুরুষরাও যখন শাড়ি, স্কার্ট, ব্লাউজ পরবেন তখন সেগুলোরও আলাদা কাটাকুটি বের করতে হবে। ফ্যাশন ডিজাইনাররা অবশ্য এরমধ্যেই এসব নিয়ে ভাবতে শুরৃ করেছেন তার কিছু ছবিও তসলিমা নাসরিনের ব্লগপোস্টে আছে : Why not gender neutral clothes? তবে ইউনিসেক্স টিশার্টের মতো শাড়িকে ইউনিসেক্স বলা যাবে না। শাড়ি পরা একজন পুরুষের ছবিও তিনি দিয়েছেন তার ব্লগপোস্টে এবং বলেছেন তাকে ‘গর্জিয়াস’ লাগছে, তবে একজন ফ্যাশন সচেতন পুরুষ হিসেবে আমার তা মনে হয়নি। তার চেয়ে আমাদের জনজাতিদের থামি অনেক বেশি ইউনিসেক্স পোষাক হতে পারে।

    Our T-shirts are gender neutral. Saree can be.

    তবে এটা অনস্বীকার্য যে এভাবে পোষাকের সমতা নারীপুরুষের সমতা আনবে না। সেটা তসলিমা নাসরিনও স্বভাবতই বলেছেন

    People are saying that men in women’s clothes will not bring women’s equality. As if men in men’s clothes will bring women’s equality! We know very well what brings equality. If we really want to have an equal society, we will make a sincere effort to bring it. In the meantime men can start wearing women’s clothes. Women are not ashamed of wearing men’s clothes! Why not unisex clothing from now on?

    এপ্রসঙ্গে এবার আমার মূলকথাটা বলি, তসলিমা নাসরিন খেয়াল করেছেন কিনা জানি না, ঐতিহ্যগতভাবে উত্তর ভারত এবং পাকিস্তানে আজো নারীপুরুষ যে পোষাকটি পরে থাকেন — কুর্তা পাজামা — তা এতই কাছাকাছি যে, এপোষাকটাকে(দোপাট্টাও সমস্যা নয়, পুরুষের ক্ষেত্রে তা হয়ে যায় উত্তরীয়) একেবারে প্রায় ইউনিসেক্স পোষাকই বলা যায়। আরো আছে এঅঞ্চলের লোক ঐতিহ্যগতভাবে কানে দুল ও হাতে বাজু নারীপুরুষ নির্বিশেষে পরতে অভ্যস্ত,কিন্তু কে না জানে নারীপুরুষের অসমতায় সারা পৃথিবীতে ওই এলাকাটা কত পশ্চাদপদ!

  21. মাসুদ করিম - ২১ জানুয়ারি ২০১৩ (৩:০৩ অপরাহ্ণ)

    খুবই দুঃখজনক টুইট তসলিমা নাসরিনের কাছ থেকে

    আমার উত্তর

    • মাসুদ করিম - ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ (৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ)

      • মাসুদ করিম - ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ (২:৩২ অপরাহ্ণ)

  22. মাসুদ করিম - ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ (১০:৩৭ অপরাহ্ণ)


  23. মাসুদ করিম - ২৯ মার্চ ২০১৩ (৪:১৬ অপরাহ্ণ)

    বাংলাদেশকে আজ কিভাবে দেখছেন তসলিমা নাসরিন, তার ব্লগে বলছেন বিস্তারিত, এব্লগে শাহবাগ নিয়ে তিনি এপর্যন্ত কী কী লিখেছেন সেসবের লিন্কও দেয়া আছে।

    কুড়ি বছরের নির্বাসিত জীবনে দেশের খুব একটা খবর রাখিনি, দু’একজন আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে কদাচিৎ কথা হতো। রাজনীতির খবরে মোটেও উৎসাহ ছিল না আমার। বাবা মা মারা যাওয়ার পর ব্যক্তিগত যোগাযোগও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ ক্রমে ক্রমে একটা দূরের দেশে পরিণত হয়। দেশে যে বাড়ি ঘর ছিল আমার, ফেলে আসা জিনিসপত্তর, ওসবেরও আর কোনও খবরাখবর পরিবারের কেউ আমাকে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।

    ওই দেশ, ওই সমাজ, ওই পরিবারের প্রতি বিবমিষা ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট ছিল না। আমার এত যে গুণমুগ্ধ পাঠক পাঠিকা, প্রকাশক, সম্পাদক, তাদের চিহ্ন এই কুড়ি বছরে, সত্যি বলতে কী, দেখতে পাইনি। প্রকাশক রয়্যালটি দেয় না, জাল বইয়ে বাজার ছেয়ে থাকে, এসবের প্রতিবাদও কেউ করেনি, সম্পাদকরা ঘুরতো লেখা চাইতে, তাদেরও আর টিকিটি দেখিনি। সরকার আমাকে তাড়াবার সঙ্গে সঙ্গে গোটা দেশ যেন সরকারের গোলাম বনে গেল। সরকার যাকে পছন্দ করছে না, তাকে পছন্দ করার কোনও অধিকার তখন যেন আর কারোর নেই। এমন ভণ্ড ভীতু সমাজ আমি আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। বছর বছর সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি, দেশে ফিরতে চাই, মা’র অসুখ, বাবার অসুখ। কিছুতেই বর্বর সরকারগুলোর সায় পাইনি। আমার জন্য দেশের দরজা বন্ধ। যেন দরজাটা ওদের বাপের সম্পত্তি। হঠাৎ হঠাৎ বাংলাদেশের পত্রিকায় বিকৃত করে আমার ভুল ভাল খবর ছাপা হত। পত্র পত্রিকাগুলো গত কুড়ি বছরে আমাকে ভুলিয়ে দেবার চেষ্টা তো কম করেনি। কিন্তু বিকৃত করে ছাপানো খবরগুলো যে কোনও কারণেই হোক বন্ধ করেনি, অন্তত যারা ভুলছে না আমাকে, তারা যেন ঘৃণাটা অন্তত করতে পারে। সেই হঠাৎ হঠাৎ খবরগুলোর তলায় দেখতে পেতাম মানুষের, বিশেষ করে নতুন ছেলেমেয়েদের মন্তব্য। নোংরা কুৎসিত সব মন্তব্য। পড়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠতো। এখনকার তরুণ তরুণী জঘন্য ভাষায় গালাগালি করছে আমাকে, আমাকে না পড়েই, না বিচার করেই, না ভেবেই! এরা কি চেনে আমাকে? জানে আমাকে? আমার লেখা কোনওদিন পড়েছে? না, এসব লোকরা কারও লেখা পড়ে না। এরা হয়তো কোনও বদমাশদের মুখে নাম শুনেছে, আর বদনাম শুনেছে। এরাই দেশের ভবিষ্যৎ, এরাই নতুন প্রজন্ম! এক গাদা অন্ধত্ব, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, মুর্খতা, নির্বুদ্ধিতাই শুধু দেখলাম। ঘেন্না লাগলো। হ্যাঁ ঘেন্না। একটিও প্রাণী নেই, যার বোধ বুদ্ধি আছে, বিবেক আছে? সেই লক্ষ লক্ষ লোক কোথায় যারা গোগ্রাসে আমার বই পড়তো, আমার লেখা ভালোবাসতো? সেই সব লেখকই বা কোথায়, যারা আমার লেখার হুবুহু নকল করে নারীবাদী লেখা শুরু করেছে বাংলাদেশে? সবাই হাওয়ায় উবে গেছে, শুধু জ্বল জ্বল করছে এক থোকা নতুন প্রজন্ম নামক অন্ধকার।

    দেশটার কথা ভাবলে সব কিছু মিলিয়ে ঘেন্না ছাড়া আর কিছুর উদ্রেক হত না আমার। এমন সময় একদিন দেখি কিছু লোক টুইটারে আমাকে বাংলাদেশের খবর দিচ্ছে। শাহবাগে লোক জমায়েত হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাইছে, খবরটি জানি কি না জানতেও চাইল কেউ কেউ। উত্তর দিইনি। বাংলাদেশে আমার উৎসাহ নেই, ফাঁসিতেও নেই। ওই দেশে কারও ফাঁসি চাওয়া হচ্ছে শুনলে মনে পড়ে তিরানব্বই চুরান্নবই সালে কী করে লক্ষ লোকের জমায়েত হত শহরে, মিছিল হত, আমার ফাঁসি চাওয়া হত। সেই সব ভয়ংকর দিনগুলোর কথা ভুলতে চাইলেও ভোলা যায় না! কেউ আমার ভেতরে এক ফোঁটা আগ্রহ তৈরি করতে পারেনি শাহবাগের জনসমাগম নিয়ে। মিশরের তাহরির স্কোয়ারেও লক্ষ লোক জমেছিল, ওরা ভোট দিয়ে মুসলিম মৌলবাদীদের জিতিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মানেই মৌলবাদের বিরুদ্ধে নয়। আর মৌলবাদের বিরুদ্ধে মানেই ধর্ম নিরাপেক্ষতা বা সেক্যুলারিজমের পক্ষে নয়, ধর্মভিত্তিক আইন তুলে দেওয়া নয়। বাংলাদেশে আন্দোলন হচ্ছে এই খবর জানিয়ে টুইটারে কিছু লোক অনুযোগ করতে থাকে কিছু লিখছি না বলে। কারো অনুযোগে অভিযোগে আমার কিছু যায় আসে না। নতুন প্রজন্ম যারা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাইছে, তারা কী করবে ফাঁসি দেওয়া হয়ে গেলে? এই প্রশ্নের ভালো কোনও উত্তর পাই না কারও কাছ থেকে। চল্লিশ বছর আগে কারা কী দোষ করেছিল, কাকে মেরেছিল, কাকে ধর্ষণ করেছিল, তার প্রতিশোধ নেবে নতুন প্রজন্ম। আসলে লেখক শিল্পীদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত লিখেছে, ছবি বানিয়েছে, নাটক করেছে, যে, আজকাল ছেলেমেয়েরা দুনিয়ার নব্বইভাগ ঘটনা না জানলেও মুক্তিযুদ্ধটা ভালো জানে।

    আমার আগ্রহ সৃষ্টি হল সেইদিন, যেদিন শাহবাগের কয়েকজনকে দেখলাম, জামাতি ইসলামি দলটির নিষিদ্ধকরণ চাইছে। আমি একাত্মতা প্রকাশ করলাম। সমর্থন করে লিখলাম। আমি নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধে, কিন্তু এই নিষিদ্ধকরণ মেনে নেওয়ার কারণ, জামাতি ইসলামি এখন বাংলাদেশে আর রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি সন্ত্রাসী দল। ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা অন্য অনেক সন্ত্রাসীদের চেয়েও ভয়ংকর।

    মনে হয় না বাংলাদেশের ধর্মমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে অদূর ভবিষ্যতে। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবেন কথা দিয়েছেন, কিন্তু রাষ্ট্রকে ধর্মের কবল থেকে মুক্ত করবেন বলে মনে হয় না। জামাতি ইসলামির সন্ত্রাসীরা মুক্তচিন্তক তরুণ তরুণী, যারা ইসলামের সমালোচনা করেছে, শাস্তি দিচ্ছে, আর ওই কূপমণ্ডুপদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টে দেশের প্রধানমন্ত্রী মুক্তচিন্তকদের খুঁজে বেড়াচ্ছে শাস্তি দেবে বলে। ইতিমধ্যেই ওদের ব্লগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কেউ যেন না পড়তে পারে ইসলাম বা মুহম্মদের সম্পর্কে কোনও অশোভন কথা। অশিক্ষিত ধর্মব্যবসায়ীদের মতো প্রধানমন্ত্রীও ধর্মব্যবসায় মাতে, দেখতে বড় বিচ্ছিরি লাগে। ঘেন্না লাগে।

    আমার বেলাতেও ঠিক এমন করেছিল আরেক প্রধানমন্ত্রী। দেশ জুড়ে ধর্মীয় মৌলবাদিরা তাণ্ডব করছে আমাকে ফাঁসি দেবে বলে, আর প্রধানমন্ত্রী ওই কূপমণ্ডুকদের খুশি করতে আমার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করলেন, আমাকে শাস্তি দিলেন, দেশ থেকে আমাকে বের করে দিলেন, আমার বই নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। আজ কুড়ি বছর পর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এক রানি গিয়ে আরেক রানি আসে, এক রাজা গিয়ে আরেক রাজা আসে। তবে সব রানিরই, সব রাজারই চরিত্র এক। এরা আর যার ভালো চাক, দেশের ভালো চায় না। দেশের ভালো চাইলে এরা দেশকে ধর্মের বিষ গিলিয়ে দেশের সর্বনাশ করতো না।

    বিস্তারিত পড়ুন : মুক্তচিন্তা: বাংলাদেশ

  24. মাসুদ করিম - ২৫ আগস্ট ২০১৩ (৭:৫১ অপরাহ্ণ)

    দেশবিরোধী নাগরিকত্ব পায় দেশপ্রেমিক নির্বাসিত হয়

    নারীবাদী লেখক তসলিমা নাসরিনের নাগরিক ও মানবাধিকার পুনর্প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তসলিমা নাসরিনের বন্ধুজনরা।

    তসলিমা নাসরিনের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে রোববার বিকেল ৪টা থেকে ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘তাসলিমা পক্ষ’-এর ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়।

    এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, প্রকাশকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষজন অংশ নেন।

    “মত প্রকাশ, চিন্তার স্বাধীনতাসহ লেখক তসলিমা নাসরিনের সব অধিকার ফিরিয়ে দাও” শিরোনামে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

    মানববন্ধনে ‘এই দেশে এ কেমন ন্যায়, দেশবিরোধী গোলাম আযম নাগরিত্ব পায়! অথচ দেশপ্রেমিক লেখক তসলিমা নাসরিন নির্বাসিত হয়!!’

    মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, তারাও দেশে বসবাস করছেন। এমনকি রাজাকার গোলাম আযম যিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন, তিনিও বাংলাদেশের নাগরিত্ব পেয়েছেন। কিন্তু, তসলিমা নাসরিন দেশবিরোধী কোনো কাজ করেননি। তারপরও তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না। এতে তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।’

    শ্রাবণ প্রকাশনীর রবীন আহসান বলেন, ‘অনেকে তাসলিমা নাসরিনকে ডাইনি বলেন। আমাদের দেশের নারীদেরই অনেক আগে থেকেই এ গালি শুনতে হয়। এরই ধারাবাহিকতাই তসলিমা নাসরিনকেও এই গালি শুনতে হয়েছে।’

    মানববন্ধনে দাবি করা হয়, তসলিমা নাসরিন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম বলিষ্ঠ নারীবাদী লেখক। তিনি নারীর অধিকারের কথা বলতে গিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদী, রাষ্ট্র ও গোটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।

    মানববন্ধনে জানানো হয়, ১৯৯৪ সাল থেকে প্রায় ২০ বছর বহুবার দেশে ফেরার আবেদন জানিয়েও তসলিমা নাসরিন কোনো সাড়া পাননি। এটি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী যেমন তার মৌলিক নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন, তেমনি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে চূড়ান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন।

  25. মাসুদ করিম - ২৩ নভেম্বর ২০১৩ (১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ)

    এ তথ্যটি এখানে থাকা দরকার

    ইউনেস্কোর অধিবেশনে এ প্রস্তাবটি উত্থাপনের সময় ইউনেস্কোর আরেকটি কমিশনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নেতিবাচক ও উত্তেজক বক্তব্য উত্থাপন করছিলেন তসলিমা নাসরিন। এই বক্তব্যের কারণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রস্তাব অনুমোদনও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। কিন্তু ইরানের কূটনীতিক মোহাম্মদ আর কাসানী তসলিমা নাসরিনের বক্তব্য উপস্থাপনের সময়েই বিষয়টি বাংলাদেশ মিশনের ইকতিয়ার চৌধুরীকে জানান। ফলে বাংলাদেশ মিশনের পক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়, যাতে এ বক্তব্য প্রস্তাবটি অনুমোদনের আলোচনায় কোনও নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে।

  26. মাসুদ করিম - ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩ (১২:১৮ অপরাহ্ণ)

    • মাসুদ করিম - ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ (৫:১৯ অপরাহ্ণ)

      টুইটের চেয়ে একটু বিস্তারিত কিন্তু আগাপাশতলায় একই ভাষ্য।

      Bangladesh’s new secular generation celebrating the killing of a war criminal

      I got abused by the secular people of Bangladesh on social network sites because I opposed the death penalty of Kader Mullah the war criminal. Many boys and girls of the new generation are confused people. They call themselves secular without knowing the meaning of the word. Many of them are against war criminals, but not against Islamism or Islamists. They hate feminism and are very fond of the death penalty. They do not know the reasons why a person is against the death penalty. They do not understand even the differences between the Islamic terrorists who are against the death penalty of a fellow Islamic terrorist and the anti-Islamists-anti-war criminals who are for the abolition of the death penalty. To the hangwarcriminal-generations, both are bad and both should be cursed.

      The truth is if you want to solve problems wickedly, you would use violence against violence. If you want to make your society violence free, you would try build a secular classless casteless equal society and give proper education to every child so no one becomes a religious fanatic. If you really believe death penalty deters crime then I don’t understand why don’t you behead criminals in public like Saudi Arabia? Don’t you think it would make the death penalty more effective?

      This generation read books, watch movies, theater plays, listen to poetry and music about 1971 war while growing up in Bangladesh, so their conviction against the war criminals is strong. Almost all of them believe that Islam is a religion of peace. They believe it because they have not learned from anywhere that Islam like other religions is not a religion of peace.

      All war criminals were Islamists. They killed people during the war in 1971 in the name of Islam. They did not want to be separated from Pakistan, the Muslim nation. They believed in Muslim unity and pan-Islamism.

      The number of Islamists increased today because of Islamization that started in 80′s. These new Islamists brutally slaughter secularists, atheists, anti-Islamists. These Islamic terrorists are not any less dangerous and murderous than the 71′s war criminals. Jamaat-e-Islami is a political party full of Islamic terrorists. They have been terrorizing the country since they got the opportunity to re-run their political party in late 70′s. Numerous charity organisations like Islamic banks, Islamic schools-colleges-universities, Islamic NGOs, clinics & hospitals, Islamic radios,tvs,newspapers etc. have been created by the Islamists. One of the agendas of Jamaat-e-Islami is to indoctrinate children with Islam. They follow Maududi the founder of Jamaat-e-Islami who dreamt of making the world Darul Islam. Muslim Brotherhood in Egypt was inspired by Maududi. Jamaat-e-Islami as a party is far more undemocratic and violent than Muslim Brotherhood.

      Islamist war criminals have been trying to kill me since 1993. But I don’t want them to get killed. I want them to be better people. Hundreds of thousands of Kader Mullah were born in Bangladesh through Islamization. How many Kader Mullah would Bangladesh kill? It is better to stop Islamization. It is always better to secularize the state and society.

      Jamaat-e-Islami has been slaughtering people after Kader Mullah was hanged. If you agree to ban terrorist organizations, you should agree to ban Jamaat-e-Islami in Bangladesh. Let the country survive.

    • মাসুদ করিম - ১৩ এপ্রিল ২০১৫ (৫:০১ অপরাহ্ণ)

  27. মাসুদ করিম - ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ (১০:১১ পূর্বাহ্ণ)

    Don’t telecast serial based on Taslima’s script, channel told

    Bengali television serial Dusahobas (translated roughly as unbearable cohabitation), based on a script by controversial Bangladeshi author Taslima Nasreen, has met with strong opposition from a prominent Muslim cleric in the city. The Shahi Imam of the Tipu Sultan Masjid issued the warning here on Tuesday.

    Coming down strongly on the channel,which is to telecast the serial from Thursday, Maulana Nurur Rahman Barkati told The Hindu that “the serial based on her [Taslima Nasreen’s] life is nothing but a commercial gimmick aimed at getting cheap publicity.” If the serial was telecast, it would result in undermining communal harmony in West Bengal.

    “I have met Chief Minister Mamata Banerjee regarding the serial last week,” said Mr. Barkati. He vowed to stop the serial from being broadcast.

    The serial portrays the suffering of women and their struggle to overcome it. Ms. Nasreen was forced to leave Kolkata in November 2007 following violent protests against her works Members of some Muslim organisations had organised protests in the city.

  28. মাসুদ করিম - ২০ ডিসেম্বর ২০১৩ (১২:১৫ অপরাহ্ণ)

  29. মাসুদ করিম - ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ (৩:০৯ অপরাহ্ণ)

  30. মাসুদ করিম - ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ (১০:৩৯ অপরাহ্ণ)

    তসলিমার পাশে মিজানুর

    সব নাগরিকের জন্মভূমির আলো-বাতাস পাওয়ার অধিকার থাকলেও লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে দেশে ফেরাতে কোনো উদ্যোগ না থাকায় অসন্তোষ জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

    বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কমিশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নঃ প্রত্যাশা ও অর্জন’ শিরোনামের এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

    সমবেতদের উদ্দেশ্যে মিজানুর রহমান বলেন, “তসলিমা নাসরিনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আপনারা কী করেছেন? কোন অধিকারে একটি রাষ্ট্র তার নাগরিককে দেশে আসার অধিকার দেয় না?”

    নিজের জন্মভূমির বাতাস পাওয়ার অধিকার সব নাগরিকের রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

    নারী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার লেখিকা তসলিমা দেশে ফিরতে না পারায় ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, “তসলিমা নাসরিনের মা ও স্বজনের মৃত্যুর পরও সে তাদের শেষবারের মতো দেখতে দেশে আসতে পারেননি।”

    “তিনি মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন-এটাই কী তার অপরাধ,” প্রশ্ন করেন মিজানুর রহমান।

    এ সময় সেখানে উপস্থিত সবাই নীরব থাকেন

    ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে এমবিবিএস পাস করেন তসলিমা। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি লেখালেখি করতেন। লজ্জা উপন্যাস প্রকাশের পর মৌলবাদীদের হুমকি ও ব্যাপক হৈ চৈয়ের মধ্যে ১৯৯৪ সালে দেশত্যাগে বাধ্য হন তিনি। এরপর বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া এই লেখিকা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

    মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “বাংলাদেশে নারীর অধিকারের জায়গাটা এখনো তন্দ্রাচ্ছন্ন। কারণ মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা। এটি মোকাবেলা করা না গেলে নারী আন্দোলন বলে কিছু থাকবে না।”

    সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়তে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

    মসজিদ ঘিরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মসজিদের ভেতর রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া ইসলামের কাজ নয়। এমনটি হলে তা কারো কাম্য হতে পারে না।”

    এ ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন মিজানুর রহমান।

  31. মাসুদ করিম - ১২ মে ২০১৪ (১০:০৪ অপরাহ্ণ)

  32. মাসুদ করিম - ২০ জুলাই ২০১৪ (১১:২৫ পূর্বাহ্ণ)

    Why Taslima Nasreen wants to return to Bangladesh

    Twenty years after she was expelled from Bangladesh, controversial author Taslima Nasreen still has no idea whether she will ever return home, but she refuses to give up trying, writes Subhajyoti Ghosh of BBC Bengali.

    A strong critic of fundamentalist Islam, the 52-year-old feminist writer was forced to leave Bangladesh in 1994 after receiving death threats from radical Muslim groups who condemned a number of her writings as blasphemous.

    Her Bangladeshi passport was revoked soon afterwards – a move Ms Nasreen has always considered the highest affront and a denial of her rights.

    She came to India initially but left for Sweden in 2008 after further protests. She has since returned to India and over the years though some local Muslim groups have protested against her presence in the country, she lives in the capital, Delhi.

    And though Bangladesh has remained unwavering on the issue of her citizenship, she is adamant on returning home.

    “I visit Bangladesh’s embassies and high commissions all over the world frequently to try to renew my passport and return empty handed. No reason is supplied why my application is refused. Some of the embassy staff are even sympathetic to me, but they can’t go against the government diktat,” she explains.

    I visit Bangladesh’s embassies and high commissions all over the world frequently to try to renew my passport and return empty handed. No reason is supplied why my application is refused. Some of the embassy staff are even sympathetic to me, but they can’t go against the government diktat

    ‘Won’t give up’

    It makes no difference who the government of the day in Dhaka is – whether it’s Prime Minister Sheikh Hasina’s Awami League, opposition Bangladesh Nationalist Party’s Khaleda Zia or a caretaker government – they are all united on the issue of barring Ms Nasreen from entering the country.

    “My fight will continue. I won’t give up that easily,” says Ms Nasreen, resolute, sitting in her Delhi apartment which she was able to inhabit only after a long tussle with the Indian government over her visa.

    Having lived in France, the US and Sweden (the country which granted her nationality after her Bangladeshi passport was revoked) over the last two decades, the writer adopted the city of Calcutta in West Bengal state as her home for a brief period.

    But after protests by Muslim groups against her presence there, she was forced to move out of the city in 2008.

    With wall-to-wall bookshelves her fifth-floor apartment in leafy south Delhi seems like a writers’ den; only the armed sentry at the door appears out of place.

    Ms Nasreen leads a busy life – in addition to all the reading and writing, she’s a strong online presence on Twitter and has to take care of her cat Minu. But, in spite of all this, she still finds time to knock on the door of the Bangladesh high commission at regular intervals.

    “Only a small group of Islamic fundamentalists in Bangladesh are against my writings. But why is the government scared of these people? Shall I have to stay out of my country just because they can’t stand my opinions?” she asks.

    Only a small group of Islamic fundamentalists in Bangladesh are against my writings. But why is the government scared of these people? Shall I have to stay out of my country just because they can’t stand my opinions?

    ‘No compromise’

    Ms Nasreen has not considered diluting her stance – “it’s ridiculous”, she argues, that to please a tiny section of the population, her citizenship of her homeland is perpetually rejected.

    “I have shaken the society with my anger. I’m nothing without the anger, so no compromise on that,” she asserts.

    The author has asked India’s new Prime Minister Narendra Modi-led government to take up her case with Bangladesh.

    If they raise the issue [of my return] with Dhaka, I’ll be immensely grateful to them,” she says.

    Aleksandr Solzhenitsyn, the dissident Russian author, returned to Russia after 16 years in exile. The French writer Emile Zola returned to France from London before a year was out.

    After 20 years, Ms Nasreen understands that she is not officially a citizen of the country that she calls home. It may even be said that she understands why. But that is not to say that she is resigned.

    “Remember, this is not about me as an individual. This is about freedom of expression,” she says as she surveys the apartment where she has “resolved not to live forever”.

  33. মাসুদ করিম - ২ আগস্ট ২০১৪ (১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ)

    • মাসুদ করিম - ৭ আগস্ট ২০১৪ (৩:৫০ অপরাহ্ণ)

    • মাসুদ করিম - ১২ আগস্ট ২০১৪ (১০:০২ পূর্বাহ্ণ)

  34. Pingback: তসলিমা নাসরিন সম্বন্ধে একথাগুলোও জেনে রাখা দরকার | প্রাত্যহিক পাঠ

  35. মাসুদ করিম - ১৭ আগস্ট ২০১৪ (৩:২২ অপরাহ্ণ)

  36. মাসুদ করিম - ২৫ অক্টোবর ২০১৪ (১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ)

  37. মাসুদ করিম - ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ (১:৩২ পূর্বাহ্ণ)

    প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি

    মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,

    অচেনা মানুষ হিসেবে এই চিঠি আপনাকে লিখছি না। আমাকে চেনেন আপনি। দেশে থাকাকালীন বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল আপনার সঙ্গে। তখন, নব্বইয়ের শুরুর দিকে আপনাকে শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবেই আমি বিশ্বাস করতাম। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে মৌলবাদীদের মিছিল হওয়া, আমার মাথার দাম ঘোষণা হওয়া, লোকের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছি এই অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে খালেদার সরকারের মামলা করা, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া, দেশ ত্যাগ করতে আমাকে বাধ্য করার পর আমি অপেক্ষা করতাম আপনি কবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। আমি ভাবতাম আপনি প্রধানমন্ত্রী হলেই আমি দেশে ফিরতে পারবো। ঠিকই আপনি প্রধানমন্ত্রী হলেন একদিন। আমি তখন আপনার দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছি, কিন্তু আমাকে দেশে তো ঢুকতে দিলেনই না, উল্টো ভয়ংকর একটি কাজ করলেন। ‘আমার মেয়েবেলা’ নামে আমার আত্মজীবনী গ্রন্থটি নিষিদ্ধ করলেন। নিষিদ্ধ করার কারণ, আপনি জানালেন, বইটি অশ্লীল। আমার মেয়েবেলা আমার শৈশবের কাহিনী। এটিকে আপনি ছাড়া আর কেউ অশ্লীল বলেনি। বিদেশের অনেক ভাষায় বইটি ছাপা হয়েছে। খুব ভালো রিভিউ বেরিয়েছিল সেসব দেশে।

    এমন কী বইটি বাংলা ভাষার অন্যতম একটি সাহিত্য পুরস্কার আনন্দ পুরস্কারও পেয়েছিল। বইটি আজও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। সাধারণত যেসব সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা লেখকদের বই নিষিদ্ধ করে। তখন বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষেরা সেইসব সরকারের বই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মামলা করে। যে কোনও গণতান্ত্রিক দেশে মানুষ তাই করে। কিন্তু বাংলাদেশের গণতন্ত্রে কারও বুকের পাটা নেই কোনও বই থেকে নিষিদ্ধকরণ তুলে নেওয়ার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার। নাৎসিরা যখন বই পোড়াতো, তাদের বই পোড়ানোয় কেউ বাধা দিতে পারতো না, তাদের সাহস ছিল না নাৎসি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার। কিন্তু আপনি তো নাৎসি সরকার নন, কেন মানুষ আপনার সরকারকে ভয় পায়! আপনি সম্ভবত বই নিষিদ্ধ করাটা শিখেছেন খালেদা জিয়ার কাছে। খালেদা জিয়া এর আগে আমার ‘লজ্জা’ বইটি নিষিদ্ধ করেছিলেন। খালেদা জিয়ার মতো আপনিও আমার বই পড়ার অধিকার থেকে বাংলাদেশের পাঠকদের বঞ্চিত করছেন। আপনি ‘আমার মেয়েবেলা’ বইটি নিষিদ্ধ করার পর খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে পরম উৎসাহে আমার আত্মজীবনী সিরিজের অনেকগুলো বই পর পর নিষিদ্ধ করলেন।

    লক্ষ্য করার বিষয় যে অন্য কারও বই নিষিদ্ধ করলে সরকারকে সামান্য হলেও ঝামেলা পোহাতে হয়। অন্যরা মামলা করে, হাইকোর্ট থেকে বইকে মুক্ত করিয়ে আনে। কিন্তু আমার বই নিষিদ্ধ করলে আপনাদের কোনও ঝামেলা পোহাতে হয় না। এই একটি মানুষ যাকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করা যায়, যাকে অকারণে অপবাদ দেওয়া যায়, যাকে যত খুশি অসম্মান করা যায়, অপমান করা যায় নিশ্চিত, কেউ টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করবে না। আমার বেলায় দেশের অমৌলবাদীরাও মুহূর্তে মৌলবাদী হয়ে ওঠে। আমাকে আমার বাকি জীবন দেশে ফিরতে না দিলেও, আপনি ভালো জানেন, খালেদা জিয়াও জানেন, আপনাদের কোনও অসুবিধে হবে না, আপনাদের জনপ্রিয়তায় কোনও অাঁচড় পড়বে না।

    আমি দেশে ফিরতে চেয়েছি। আপনি সোজা বলে দিয়েছেন, দেশে যেন না ফিরি। কেন নিজের দেশে আমি ফিরবো না, তার কোনও কারণ আপনি অবশ্য দেননি। ঠিক খালেদা জিয়া যেভাবে আমাকে দেশে ফিরতে দেননি, একই পদ্ধতিতে আপনিও আমাকে দেশে ফিরতে দেননি। আমার মা’ যখন মৃত্যুশয্যায়, আমি কত যে অনুরোধ করেছি মা’র শেষ দিনগুলোয় মা’র পাশে যেন কিছুদিন আমাকে থাকার অনুমতি দেন। আপনি অনুমতি দিলেন না। শেষ পর্যন্ত আপনার রক্তচক্ষু অমান্য করে আমি দেশে ফিরেছিলাম। ভাগ্যিস আমার পাসপোর্টের তখনও বৈধতা ছিল। আমি দেশে ফিরেছি জানতে পেরে আপনি আমার ওপর এত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে ঠিক খালেদা জিয়ার মতো আমার বিরুদ্ধে মামলা করে, আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে, একইরকম নাটক করে আমাকে দেশ থেকে তাড়ালেন। খালেদা জিয়া আর আপনার মধ্যে চুলোচুলি থাকলেও আমাকে লাঞ্ছিত করার ব্যাপারে আপনারা দু’জন কিন্তু একশ’ ভাগ এক। আমার বাবা যখন দেশে মৃত্যুশয্যায়, তখন তাঁকে অন্তত দু’দিনের জন্য হলেও দেখতে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে কেঁদেছি, কিন্তু আপনি অনুমতি দেননি, আমার পাসপোর্ট পুনর্নবীকরণ করেননি। আমি ভেবেছিলাম, যেহেতু নিজের বাবাকে আপনি খুব ভালোবাসেন, আপনি হয়তো বুঝবেন, কোনও কন্যাকে একবার শেষবারের মতো তার বাবাকে দেখতে কেউ যদি বাধা দেয়, তবে সে কতবড় অন্যায় করে। আমার বাবা মারা গেছেন, আমাকে তাঁর কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। আপনার অজানা নয় যে আপনারা আমাকে আজ কুড়ি বছর হলো দেশে ফিরতে দিচ্ছেন না। সম্ভবত ফিরতে দেবেনও না আর। বিদেশ বিভুঁইয়ে আমাকে বাকি জীবন পার করতে হবে। দেশে ফেরার আশা আজকাল আর করিও না। আমার সমস্ত আশা চূর্ণ হতে হতে হতে এখন অবশিষ্ট কিছু নেই। বিদেশে কী করে বাস করতে হচ্ছে আমাকে, তা, আমি জানি না, কতটুকু জানেন। তবে নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারেন যে, আমি ভালো নেই। বাংলা ভাষার একজন লেখক বাংলার বাইরে বসে বাংলা ভাষায় বই লিখে বেঁচে থাকতে পারে না। বিশেষ করে, সেসব বই যখন একের পর এক নিষিদ্ধ হয়, সরকারের ভয়ে যখন প্রকাশকরা বই ছাপানো বন্ধ করে দেয়, যখন বই ছাপায় পাইরেসির চোরেরা, বই বিক্রির কোনও রয়্যালটি যখন লেখকের হাতে পেঁৗছোয় না। আমার জায়গায় আপনি হলে, আপনি কোনও বাঙালি লেখক হলে, আপনাকে যদি জোরজবরদস্তি নির্বাসন দেওয়া হতো, আপনারও অবস্থা করুণ হতো। আপনি কখনও কি আমার জায়গায় আপনাকে কল্পনা করে দেখেছেন? আমার মনে হয় না।

    দেশে না থাকার কারণে আমার বাবার অঢেল সহায় সম্পত্তি থেকে উত্তরাধিকার হিসেবে আমার এবং আমার বোনের যা প্রাপ্য তা থেকে আমাদের সম্পূর্ণ বঞ্চিত করেছে আমার ভাইয়েরা। কত সহজেই পুরুষেরা অসৎ উপায়ে মেয়েদের সহায় সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নিতে পারে। গত দু’দশক যাবৎ নারীর সমানাধিকারের পক্ষে লিখে দেশের নারীবিরোধী লোকদের চক্ষুশূল হয়েছি আমি। আপনি নিজে নারী, নারীর অধিকারের কথা আপনিও বলেন, আর আপনার শাসনামলেই কত নারীর মানবাধিকার কতভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে! উত্তরাধিকার দাবি করতে গেলে, যেহেতু আমাকে দেশে যেতে দিচ্ছেন না, কাউকে আমার পাওয়ার অব এটর্নি দিতে হয়। শান্তিনগরে আমার নিজের কেনা অ্যাপার্টমেন্টটি বিক্রি করে বিদেশে থাকার খরচ চালানোর চেষ্টা আজ অনেক বছর ধরে করছি কিন্তু পারছি না। না পারার কারণ হলো সরকারি বাধা। আমার ছোট বোনকে ‘পাওয়ার অব এটর্নি’ দিতে চাইছি, সমস্ত ডকুমেন্টস তৈরি, নোটারি পাবলিকের কাগজ, মানিঅর্ডার, অ্যাপার্টমেন্টের দলিল, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, আমার বাংলাদেশ-পাসপোর্টের কপি পাওয়ার অব এটর্নির জন্য যা যা চাওয়া হয়, তার সব কিছু নিউইয়র্কের বাংলাদেশ দূতাবাসে নিজে গিয়ে ডেপুটি কনস্যুলার জেনারেল শহিদুল ইসলামের হাতে দেওয়ার পরও তিনি কিছুই এটেস্টেড করেননি। না করার কারণ, আমার নাম। আমার নামটি ওঁর পছন্দ নয় অথবা আমার নামে ওঁর ভয়। আপনাকে না জিজ্ঞেস করে উনি কোনও সই দিতে চাইছেন না। দূতাবাস থেকে এটেস্টেড বা সাক্ষ্য-সই না হলে আমার কাগজপত্রগুলোর কোনও মূল্য বাংলাদেশে নেই, দেশে আমার অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করা যাবে না। মুশকিল হল, আমার নামটা দেখে দূতাবাসের কোনও প্রাণী আমার কোনও ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেন না। সিদ্ধান্তের জন্য আমার আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশের মন্ত্রণালয়ে, যে মন্ত্রণালয় থেকে কখনও কোনও উত্তর আসে না। গত কুড়ি বছর আমাকে উপেক্ষা করার মন্ত্র ছাড়া আর কোনও মন্ত্রের উপদেশ বর্ষিত হয়নি বাংলাদেশের কোনও মন্ত্রণালয় থেকে। আমার পাসপোর্ট পুনর্নবীকরণের এবং আমার পাওয়ার অব এটর্নির অগুনতি আবেদনপত্র পড়ে আছে মন্ত্রণালয়ের ময়লা ফেলার বাক্সে।

    আমার দেশে ফেরার অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করছেন। আপনার বিবেক কী করে বলছে আমি যেন আমার দেশের সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হই! এতটা অমানবিক কী করে হতে পারে মানুষ! কী অন্যায় করেছিলাম, কার কী ক্ষতি করেছিলাম যে আমাকে জীবনভর ভুগতে হবে, ঘুরতে হবে এক দেশ থেকে আরেক দেশ শুধু একটু আশ্রয়ের আশায়! আমার আজ পায়ের নিচে মাটি নেই। আমার মাথার ওপর ছাদ নেই। জানি না এসব খবর আপনাকে কোনও আনন্দ দেয় কি না। আমি আজ এই কথা বলতেই চিঠিটি লিখছি, যে, আমার ঢাকার অ্যাপার্টমেন্টটি বিক্রি করার দায়িত্ব যে আমি আমার বোনকে দিতে চাইছি, তা যদি বৈধভাবে না দিতে পারি, তবে অ্যাপার্টমেন্টটি যে কেউ এসে যে কোনওদিনই দখল করে নিতে পারে, যেমন নিচ্ছে গত কয়েক বছর। আপনার মনে হতে পারে সম্পত্তি হিসেবে ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকা শান্তিনগরের পুরোনো একটি অ্যাপার্টমেন্ট নিতান্তই তুচ্ছ। হয়তো তুচ্ছ, আমার কাছে কিন্তু তুচ্ছ নয়। এটি বেদখল হয়ে গেলেও আমি জানি আপনার কিছু যাবে আসবে না। আমি যে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি, তাতেই বা কার কী যায় আসে!

    তারপরও আমি আপনার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি বিষয়টি। মৌলবাদীরা চায় না বলে আমাকে আমার নিজের দেশে ফিরতে দেবেন না জানি। এখন প্রশ্ন, আমার পাওয়ার অব এটর্নিতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সই করার জন্য আপনি কি অনুমতি দেবেন নাকি আমাকে বুঝে নিতে হবে নিজের সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব কারও ওপর দেওয়ার অধিকার দুনিয়ার আর সবার থাকলেও আমার থাকতে পারে না, কারণ আমার অপরাধ আমি কিছু বই লিখেছিলাম, যেসব বই দেশের মৌলবাদীর পছন্দ হয়নি! মৌলবাদীদের দোসর হিসেবে আপনাকে দেখতে চাই না বলেই এই চিঠি।

    শ্রদ্ধাসহ

    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন।

  38. মাসুদ করিম - ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (১১:০৯ পূর্বাহ্ণ)

    কেজরিওয়াল এবং মমতা

    ১. বিজেপিকে ধূলিসাৎ করে আম আদমি পার্টির বিরাট বিজয় ঘটেছে দিল্লিতে। বিজেপি ৩, আম আদমি পার্টি ৬৭। এই ক’মাস আগে ভারতের আর সব পার্টিকে হারিয়ে এককভাবে লোকসভা নির্বাচনে জিতেছে বিজেপি। আর এখনই কিনা আম আদমির মতো নতুন একখানা পার্টির কাছে হেরে গেল। অদ্ভুত কথা বটে। এই নির্বাচনে ভারতের সবচেয়ে পুরনো দল, রাজনীতিতে সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল পেয়েছে ০, হ্যাঁ, শূন্য। এও অদ্ভুত। ভালো লাগুক বা না লাগুক, আমাদের মেনে নিতে হবে জনগণের রায়। আজ বিকেলে বেরিয়েছিলাম শহরে, আম আদমি পার্টির খুব বড় কোনও মিছিল দেখিনি রাস্তায়। বিজেপি কি তৈরি করে রেখেছিল বিশাল কোনও বিজয় মিছিল! সম্ভবত। অনেকে অনেক কারণ দেখাচ্ছে বিজেপি কেন এভাবে গো হারা হারলো। মোদি যা যা করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন লোকসভা নির্বাচনের আগে, তার খুব অল্পই তিনি করতে পেরেছেন। আর গণতন্ত্র দিবসে নিজের নাম লেখা দশ লাখ টাকার একটা কোট পরেছিলেন, যেটা বেশ দৃষ্টিকটুই ছিল বৈকি। এই কোটের ব্যাপারটাও মোদির জনপ্রিয়তা কমিয়ে দিতে সাহায্য করছে। খুব ছোট কিছুও কিন্তু বড় কিছু হয়ে যেতে পারে কখনও কখনও।

    ভেবেছিলাম কেজরিওয়ালের জনপ্রিয়তা কমে গেছে যখন গতবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বিধানসভা থেকে দলবল নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। কমারই তো কথা ছিল। অনেক আম আদমি নেতাও তখন দল ত্যাগ করেছিলেন। কেজরিওয়ালের ছেলেমানুষি তাদের পছন্দ হয়নি। ভুল তিনি করেছিলেন। তবে সেই ভুলকে কেজরিওয়াল স্বীকার করেছেন যে ভুল করেছিলেন, এবং সেই ভুলের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন আর করবেন না বলেও কথা দিয়েছেন। লোকের কাছে কেজরিওয়ালের এই স্বীকারোক্তি ভালো লেগেছে। আর এবার বিজেপি বিরোধী দল সব একজোট হয়েছিল বলে, এবং বড় শত্রু বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেসের সমর্থকরাও সম্ভবত ছোট শত্রু আম আদমিকে ভোট দিয়েছে। এসব নানা কারণ কেজরিওয়ালের জিতে যাওয়ার পেছনে।

    কেজরিওয়ালকে আমি অভিনন্দন জানিয়েছি খুব চমৎকার একটা কাজ করেছেন বলে। এবারের দিল্লি নির্বাচনের তিন-চার দিন আগে তিনি দিল্লির শাহি ইমাম বুখারির সমর্থন করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন, বলেছেন ‘ইমামের সমর্থন আমার চাই না’। এই সাহস, ভারতের কোনও রাজনীতিকের নেই। এমনকী হিন্দু মৌলবাদী দলেরও নেই। ভারতের শতকরা পঁচিশ ভাগ মুসলমানের ভোট মুসলিম ধর্মীয় গুরুদের তুষ্ট না করলে পাওয়া যায় না, এই বিশ্বাস প্রতিটি রাজনীতিকের। ভারতের অধিকাংশ মুসলিম এখনও মানসিকভাবে স্বাবলম্বী হয়নি। কাকে ভোট দেবে না দেবে তা তাদের ইমাম বা ধর্মীয় গুরু বলে দেয়। দিল্লির শাহি ইমামকে মুসলিম ভোটের জন্য তোয়াজ করার রীতিটা শুরু করেছিলেন নেহরু। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরপরই। সেই পুরনো রীতি আজও চলছে। শাহি ইমামের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েও কেজরিওয়াল এবার সাধারণ মুসলমানের প্রায় সব ভোট পেয়েছেন। কেজরিওয়ালের জিতে যাওয়া প্রমাণ করেছে, ইমামদের সাহায্য ছাড়াই মুসলিম ভোট জোটে। এখন ভারতের রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নেওয়া উচিত কেজরিওয়ালের কাছ থেকে। এখন থেকে যেন কোনও ধর্মের কোনও গুরুকেই মাথায় তোলা না হয়। রাজনীতিকরা যেমন ধর্মীয় গুরুকে ব্যবহার করে, ধর্মীয় গুরুরাও রাজনীতিকদের ব্যবহার করে। যে দেশের ধর্ম এবং রাষ্ট্র আলাদা হওয়ার কথা, দুঃখ এই যে, সে দেশে ধর্ম ছাড়া রাজনীতি চলে না, রাজনীতি ছাড়া ধর্ম চলে না। কেজরিওয়ালের দেখানো পথেই ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিকরা হাঁটবেন, এই আশা কি খুব বেশি আশা? মৌলবাদী, সে হিন্দু হোক, মুসলিম হোক, খ্রিস্টান হোক, সমাজটাকে পেছনে নেওয়ার জন্য টানাটানি করছে, যতদিন তাদের অস্তিত্ব থাকে, ততদিন করবে। ইমাম, পুরোহিত, পীর, বাবা, মাতা ইত্যাদিকে তোল্লাই দেওয়া মানে সমাজকে ধর্মাচ্ছন্ন, কুসংস্কারাচ্ছন্ন করার জন্য আরও শক্তি, আরও তেজ, আরও উৎসাহ পেয়ে যাওয়া। এই অশিক্ষিত, নারীবিরোধী অপশক্তি ভারতীয় রাজনীতিকদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতে শিখে গেছে এর মধ্যে। কেজরিওয়াল গতবার বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভুল করেছিলেন। তিনি তৌকির রাজা খান নামে উত্তরপ্রদেশের এক মুসলিম মৌলবাদীর কাছে গিয়েছিলেন। যাওয়া মানে করুণা চাওয়া। করুণা করে মুসলিম মৌলবাদীটি যেন তাঁর অগুনতি অশিক্ষিত অনুসারীদের বলে দেন এবারের ভোটটা আম আদমিকে দিতে। কেজরিওয়ালের তখন খুব নিন্দা করেছিলাম আমি। ওই তৌকির রাজা খানই সর্বভারতীয় মুসলিম আইন বোর্ডের একজন হয়ে ২০০৫ সালে আমার মাথার মূল্য পাঁচ লক্ষ টাকা ঘোষণা করেছিলেন। এক কুৎসিত ফতোয়াবাজের কাছে গিয়ে পড়ে থাকাটা ভালো চোখে দেখার কোনও কারণ নেই। আমি জনতাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম, এই সেই লোক যে কিনা লোককে বলে, একে ওকে টাকার বিনিময়ে জবাই করতে। কেজরিওয়ালের সমালোচনা হয়েছিল অনেক। সেটি থেকেই বোধহয় কেজরিওয়াল শিক্ষা নিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে তাই মৌলবাদীদের সঙ্গ তিনি ত্যাগ করেছেন। মুশকিল হলো, রাজনীতিকরা সাধারণত শিক্ষা নিতে চান না। যা তাঁদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তার বাইরে তাঁরা মোটেও যেতে রাজি নন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২০০৭ সালে সিপিআইএম আমাকে তাড়িয়েছিল মুসলিম ভোটের আশায়, কিন্তু মুসলিম ভোট তারা পায়নি। ও থেকেই রাজনীতিকদের শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল যে, আমাকে তাড়ালে বা আমাকে হেনস্থা করলে মুসলিম ভোট জোটে না। কেউ শিক্ষা নেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও না। তিনি আমাকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে দিচ্ছেন না, এই ভেবে যে, আমার শত্রুতা না করলে মুসলিম ভোট তিনি হারাবেন। রাজনীতিকদের মস্তিষ্ক থেকে এইসব ভুল বিশ্বাসগুলো দূর করা আর হিমালয় ঠেলে সরানো মনে হয় একই রকম কঠিন। তবে এই কঠিন কাজটি করেই কেজরিওয়াল দেখিয়ে দিয়েছেন, আসলে যত কঠিন বলে মনে করা হয়, তত কঠিন নয় কাজটি। তিনি ফতোয়াবাজ ধান্দাবাজ ইমামগোষ্ঠীকে সগৌরবে ত্যাগ করে সাধারণ মুসলিমের আস্থা অর্জন করে আজ জিতেছেন। মুসলিমদের জন্য যা দরকার তা হলো, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের অধিকার, উপার্জনের সংস্থান, জীবনযাপনের মান বাড়ানো। ইমামরা এসব নিয়ে ভাবেন না। ইমামরা ধর্মান্ধতা আর কুসংস্কারের অন্ধকারে সাধারণ মুসলিমদের ডুবিয়ে রাখতে চান।

    ২. বাংলাদেশ আর লোক পেলো না আমন্ত্রণ জানানোর? শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর কবীর সুমন? ওঁরা নাকি একুশে ফেব্রুয়ারির সকালে শহীদ মিনারে ফুল দেবেন! মমতা দেবেন ফুল ঢাকার শহীদ মিনারে! তিনি তো কলকাতার শহীদ মিনারে শাহবাগ আন্দোলনের পক্ষে প্রগতিশীল ছেলেমেয়েকে কোনও মিছিল করতে দেননি। কিন্তু এক লক্ষ মুসলিম-মৌলবাদীকে শাহবাগ আন্দোলনের বিপক্ষে এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাসের দিকে মিছিল করতে দিয়েছিলেন। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে সমস্যা করেছেন, তিনি আজ আমন্ত্রিত। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম মৌলবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন; ভোটের লোভে, মুসলিম সম্প্রদায়কে ধোঁকা দিয়েছেন, হিন্দু হয়ে, কালীভক্ত হয়ে, কলেমা পড়ে, নামাজ পড়ে, রোজা রেখে, মোনাজাত করে; তিনি আমন্ত্রিত। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গী-সাথীরা সারদার চিটফান্ডের অবৈধ টাকা বাংলাদেশের সন্ত্রাসী দল জামায়াতে ইসলামীর দপ্তরে পাচার করেছে; তিনি আমন্ত্রিত। বর্ধমানে মুসলিম সন্ত্রাসীরা বোমা বানাচ্ছিল, দুর্ঘটনা ঘটায় জানাজানি হয়ে যায়। সুমন বলেছেন, মুসলিমরা নয়, বিজেপি বোমা বানাচ্ছিল। মুসলিম সন্ত্রাসী আর মুসলিম মৌলবাদীদের সুমন ডিফেন্ডই শুধু করেন না, সমর্থনও করেন। এই ভয়ঙ্কর লোকটা একুশে ফেব্রুয়ারিতে নাকি শহীদ মিনারে ফুল দেবেন। ফুল দেওয়ার নামে শহীদ মিনারকে কলুষিত করবেন, এই যা। দুটো ভালো গায় বলে তাঁর সাতখুন মাফ হওয়া মোটেও উচিত নয়। গানের কথাগুলো ভালো, কিন্তু, ওসব কথা তিনি বিশ্বাস করেন না। এখানেই মমতার সঙ্গে তাঁর মেলে। লোক ঠকাতে দুজনেই বেশ ভালো জানেন। গুণী লোকের এতই কি আকাল পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। শেখ হাসিনা ভালো আর যোগ্য কাউকে পেলেন না?

  39. মাসুদ করিম - ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (৭:৫৬ অপরাহ্ণ)

  40. মাসুদ করিম - ২০ মার্চ ২০১৫ (৫:০২ অপরাহ্ণ)

    • মাসুদ করিম - ২৩ মার্চ ২০১৫ (১০:০৮ পূর্বাহ্ণ)

      বাংলাদেশিদের দেশপ্রেম

      অনেকে বলে, ভারতকে যেভাবেই হোক, বিশ্বকাপে যত দীর্ঘদিন সম্ভব, বাঁচিয়ে রাখতে হবে–এই হলো আইসিসির সংকল্প। শুরুতেই ভারত খেলা থেকে চলে গেলে কী করুণ অবস্থা দাঁড়ায়, তা ২০০৭ সালে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল আইসিসি। ভারতের ১০০ কোটিরও ওপর জনসংখ্যা টিভিতে খেলা দেখেনি, সুতরাং বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেছে, স্পনসর পাওয়া যায়নি, ক্রিকেট টুরিজমও লাটে উঠেছিল। এভাবে যে চলে না তা বুঝে আইসিসি সেই থেকে যে করেই হোক ভারতের হেরে যাওয়া আর ঘরে ফিরে যাওয়া ঠেকাচ্ছে। নিদেনপক্ষে সেমি-ফাইনালটা যেন ভারতকে দিয়ে খেলাতে পারে। আম্পায়াররাও এই ব্যাপারে ওয়াকিবহাল, তাঁরা জানেন তাঁদের কাছ থেকে আইসিসি কী আশা করছে। দক্ষিণ এশিয়ার গুটিকয় দেশের মতো ক্রিকেটক্রেজি আর কোনও দেশ নয়। ক্রিকেটের মাস্টার হয়ে নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়াও পুরো জাতিকে ক্রিকেটক্রেজি বানাতে পারেনি।

      বাংলাদেশের বেশিরভাগ লোকই বলছে, ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে আম্পায়াররা ভারতকে জেতানোর উদ্দেশ্যেই মাঠে নেমেছিলেন। শুরুতে ম্যাচটা জমবে মনে করা হয়েছিল, অবশ্য খানিকটা গড়াতেই ঝুলে পড়লো। আমার বাড়িতে যাঁরা ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন, তাঁরাও, ভারত দুশ’ আশি/পঁচাশি রান করার পরই উঠে চলে গেলেন কারণ তাঁরা বুঝে গেছেন ভারত হাসতে হাসতে জিতবে। যদিও আমি প্রচুর মিষ্টি খাওয়াবার ব্যবস্থা করেছিলাম, এই ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে ভারতীয়দের তেমন কোনও উত্তেজনা লক্ষ্য করিনি। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে ভারতীয়দের উত্তেজনাটা বেশি। পাকিস্তানকে হারাতে যত আনন্দ, তত আনন্দ আর অন্য কোনও টিমকে হারিয়ে ভারতের হয় না। খেলাতে না চাইলেও রাজনীতি এসে যায়।

      ভাবছিলাম যদি আম্পায়াররা একশ’ভাগ নিরপেক্ষ হতেন, তবে কি ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জিততে পারতো? আমার কিন্তু মনে হয় না। বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ের সমালোচনা শুনেছি, ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আন্ডারস্টেন্ডিং-এর অভাবটাও চোখে পড়ার মতো। ফেসবুকে বাংলাদেশ ভক্তদের এখন আস্ফালন দেখছি, সবারই বক্তব্য বাংলাদেশ নির্ঘাত জিততো, কিন্তু আম্পায়াররাই জিততে দেননি। এমনই ক্রুদ্ধ বাংলাদেশের ভক্তকূল এখন যে, পারলে ভারতের বিরুদ্ধে বন্দুকযুদ্ধ লাগিয়ে দেয়। কেউ কেউ আবেগে উত্তেজনায় এমনই কাঁপছে যে হাতের কাছে আইসিসির কেউ, বা আম্পায়ারদের কাউকে পেলে নির্ঘাত জবাই করতে পারে। ক্রিকেটে জেতাটাকে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে জরুরি কাজ বলেই ওরা মনে করছে। আম্পায়াররা ইচ্ছে করেই ভারতকে জিতিয়েছেন বা ইচ্ছে করেই বাংলাদেশকে হারিয়েছেন এই বলে বলে যারা ফেসবুক কাঁপাচ্ছে, তাদের এই আবেগটা যদি অভিজিতের হত্যাকারীদের বিচার ত্বরান্বিত করতে, বাংলাদেশে মৌলবাদী উত্থান থামাতে, নারীবিদ্বেষ দূর করতে, লাগাতো- তবে বাংলাদেশের সত্যিকার কিছু উপকার হতো। দেশপ্রেমটা দেখছি শুধু ক্রিকেট জেতার বেলায়। ভিনদেশি লোকেরা বাংলাদেশকে ঠকিয়েছে বুঝলাম। এদিকে যে দেশের লোকরা দেশের লোকদের অবিরাম ঠকাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে এই দেশপ্রেমিকরা কি আদৌ কখনও ফুঁসে উঠেছে?

      এর মধ্যে আরও ভাবছিলাম, বাংলাদেশ যদি জিততো খেলায়, যদি ভারত না গিয়ে বাংলাদেশ যেতো সেমিফাইনালে, এমনকী যদি বিশ্বকাপও জিতে যেতো, কী হতো বাংলাদেশের? পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র এবং দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দুর্নাম কি ঘুচে যেতো? চরম নারী-বিদ্বেষী, পুরুষতান্ত্রিক, আর মানাবাধিকার লংঘনের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আর পরিচিত হতো না? মানুষ কি ভুলে যেতো যে এই দেশটিতে মুক্তচিন্তকদের জবাই করে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়, এই দেশটিতে সচেতন লেখকদের জনসমক্ষে কুপিয়ে মারা হয়? জানতো না এই দেশে ধর্মীয় আইন বহাল থাকার কারণে আজ নারীরা তাদের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত? জানতো না যে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলেরা বাসে ট্রাকে পেট্রোল বোমা ছুড়ে এ দেশে নিরীহ মানুষদের হত্যা করে।

      বাংলাদেশ শতবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জিতলেও এ দেশ একটি ব্যর্থ দেশ হিসেবেই প্রমাণিত হবে। সুতরাং সবচেয়ে যেটা জরুরি, ক্রিকেটে জেতার চেয়েও, অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জেতা। আম্পায়াররা ভুল করেন। অহরহই করেছেন অতীতে। শুধু বাংলাদেশই নয়, অনেক দেশই আম্পায়ারদের ভুলের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশি ক্রিকেট ভক্তকূল এটা নিয়ে প্রতিবাদ করতে পারে, কিন্তু প্রতিবাদ তো নয়, দিনভর রাতভর তারা উগরে দিচ্ছে ভারত বিদ্বেষ আর ভারতঘৃণা। আত্মসমালোচনা না করলে কোনো জাতি বা মানুষ উন্নতি করতে পারে না। বাংলাদেশের উন্নতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা বাংলাদেশের মানুষ, অন্য কেউ নয়।

  41. মাসুদ করিম - ২৩ মার্চ ২০১৫ (১০:০৭ পূর্বাহ্ণ)

    ‘Don’t call me Muslim, I am an atheist’

    Writer-in-exile Taslima Nasreen calls for reining in religious fundamentalism, saying that criticism of religion is not the domain of non-Muslim intellectuals alone

    Writer Taslima Nasreen fled Bangladesh in 1994 when extremists threatened to kill her for criticising Islam, and has been living in exile since. Her country has, in recent times, seen many intellectuals expelled or killed. Ahmed Rajib Haider, an atheist blogger who wrote under the name Thaba Baba, was hacked to death after the Shahbag protests in 2013. In February this year, atheist blogger Avijit Roy was killed in Dhaka by extremist groups for his writings on the Bangla blog Mukto-Mona (Free Thinker) that he founded. Feminist and secular humanist Ms Nasreen now lives in New Delhi. In an interview with Suvojit Bagchi, she spoke about the shrinking space for free thinkers in Bangladesh and says that Islam cannot be exempt from the critical scrutiny that other religions go through.

    Tell us a little bit about Avijit Roy.

    I knew Avijit for a long time. He started Mukto-Mona to accommodate writings of atheists and humanists, as newspapers do not publish their work. Avijit was a science blogger and a free thinker, an atheist and a rationalist, who wanted to secure a space to dissect and debate issues. Later, he turned his blogs into books. Mukto-Mona became a window through which people could look at each other and raise questions about all religions, including Islam. In Bangladesh, over a period, the space for free thinkers has been disappearing. Avijit brought it back using a new platform… precisely why his contribution is outstanding.

    When and how exactly did this space for free thinkers start shrinking?

    The change was noticed at the time of General Hussain Ershad in the mid-1980s. A secular Constitution was given away to make Islam the state religion. I have witnessed the mass movement of 1969, the newly independent country of the 70s… the situations then were different. People could voice their opinion and women hardly wore the hijab or the burqa. But society slowly changed. For instance, whatever I wrote in the 1980s, early 90s — criticising Islam and women’s condition in Islamic societies — was published in newspapers with a wide circulation. But that cannot be imagined now. Freedom of expression is an alien term now.

    Why has this change taken place?

    The progressive community is partly responsible. When I was expelled in 1994, the whole of society went silent. If this community had objected then, Bangladesh would not have had a society in which an Avijit is hacked to death, a Humayun Azad targeted or an Ahmed Rajib Haider killed for criticising Islam. Perhaps the conflict in Bangladesh is whether to have a country on the basis of language or on the basis of religion.

    How can this be resolved?

    Bangladesh was born on the idea of a secular Bengali nation. Since 1952, Bengali Muslims, Hindus, Buddhists and Christians have wanted their state language to be Bengali, not Urdu. The people who opposed our independence, along with the Pakistani army, killed three million Bengalis in 1971 and are now involved in the Islamisation of Bangladesh. They are killing free thinkers and intellectuals. Pakistan is a country which is based on religion. But the Bangladesh constitution must remain secular, and separate state from religion. We must have secular education rather than education through madrassas. The government must not let the country become a safe haven for religious extremists.

    People say your criticism of religion is rather excessive and provocative.

    I said religion oppresses women. Laws should be based on equality, not on religion; women should have equal rights in marriage, divorce, child custody and inheritance. I said we must stop stoning women to death in the name of religion. Is that provocation? Every civilised state has questioned the relationship of the state with religion, eventually disentangling and distancing the two. Islam should not be exempt from the critical scrutiny that other religions have gone through. My opinion is based on my belief in secular humanism. If that is provocative, then it is absolutely necessary to provoke.

    But it’s often said that your writings strengthen fundamentalism.

    Governments are strengthening fundamentalism, not me. When religious fanatics set a price on my head, instead of taking action against them, the government targeted me. The Awami League and the Bangladesh Nationalist Party joined hands with these forces and so did the caretaker government. Even in West Bengal, the Communist Party of India (Marxist)-led government expelled me; the Imam Barkati of the Tipu Sultan Mosque, who set a price on my head, was adored by the Marxists. Interestingly, Mamata Banerjee befriended the Imam as soon as she came to power.

    Another allegation is that by making statements against Islam, you strengthen the right wing in India.

    Absolute nonsense. I criticise all religions, including Hinduism. I opposed Hindu godmen, rituals such as karva chauth and shivaratri, and condemned the oppression of Muslims in Gujarat. I donated Rs.10,000 to poet Shankha Ghosh, who was collecting funds for rehabilitating Gujarat riot victims.I objected to the oppression of Hindus in Bangladesh, Jews in Nazi Germany, Muslims in Bosnia, Palestine and Christians in Pakistan. I also wrote in favour of films such as PK, Water and The Last Temptation of Christ. Please don’t call me a Muslim, I am an atheist.

    When Indian rationalist Narendra Dabholkar and CPI leader Govind Pansare were killed, you were silent.

    Who told you? You need to check my Twitter account to find out about my reactions and how the Hindu right-wing elements abused me for that. However, it is true that I consider Islamic fundamentalism a bigger threat.

    As do many western countries…

    Only the western world thinks that Islamic fundamentalism is dangerous? Rather, it’s the opposite — the West is keen to side with Islamists.

    As a Muslim writer, your work often reflects the West’s paranoia about Islam. Is the West forcing you to say what it wants?

    Are you saying Muslims cannot have a mind of their own to criticise their religion? Is criticism of religion the domain of non-Muslim intellectuals? That is an anti-Muslim remark, seriously.

    What could be Bangladesh’s future?

    The country will be heading for a complete disaster if Islamic terrorists are not brought to justice. However, given the past record, nothing will happen and such incidents will increase in the coming months, as they are intrinsically connected with politics.

  42. মাসুদ করিম - ২৪ মার্চ ২০১৫ (৬:৫৬ অপরাহ্ণ)

  43. মাসুদ করিম - ৩১ মার্চ ২০১৫ (৬:৩৫ অপরাহ্ণ)

  44. মাসুদ করিম - ২৪ এপ্রিল ২০১৫ (৬:২৯ পূর্বাহ্ণ)

    পুরনো প্রেমে কাতর তসলিমা

    পুরনো প্রেম, বেশি বয়সের বাতের ব্যথার মতোই, যে কোনও সময় চাগাড় দিতে পারে৷‌ ঢাকা উত্তর নগর নির্বাচনের মেয়রপ্রার্থী, আওয়ামি লিগের আনিসুল হক-কে দেখে সেই কিশোরীবেলার পুরনো প্রেমের ব্যথায় কাতর হলেন তসলিমা নাসরিন৷‌ যদিও সেই প্রেম ছিল একতরফা৷‌ সফল ব্যবসায়ী, এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা আনিসুল হক সে সময় টিভিতে একটা অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন৷‌ সুদর্শন আনিসুলকে টিভির পর্দায় দেখতে দেখতে একদিন দুম করে প্রেমে পড়ে যান কিশোরী তসলিমা৷‌ একেবারে হাবুডুবু অবস্হা৷‌ চমৎকার লিখেছেন নিজের ফেসবুকের পাতায়, যে, প্রেম যেহেতু সংক্রামক, তসলিমার ছোট বোনও আনিসুলেরই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন৷‌ একই টিভি-র সামনে বসে দুই বোনে মজে থাকতেন আনিসুলের চেহারায়, চাহনিতে, কথায়৷‌ প্রতি রাতে প্রেমে পড়তেন নতুন করে৷‌ সেই নিয়ে একদিন বোনের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া, এমনকী মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে গেল৷‌ তসলিমা ঠিক করেছিলেন চিঠি লিখবেন আনিসুলকে৷‌ লেখাও হয়ে গিয়েছিল সেই প্রেমপত্র৷‌ কিন্তু বোন তার আগেই নিজের চিঠিটি ডাকে দিয়ে দিয়েছিল৷‌ একদিন সে চিঠির জবাবও চলে এল আনিসুলের থেকে৷‌ বেশ প্রেমিকের ভাষায় লেখা সেই চিঠি এসে পড়েছিল আবার তসলিমারই হাতে৷‌ অনেকদিন হৃদয়ে বুঝি ঘুণপোকা হয়ে থেকেছে সেই ঈর্ষা৷‌ বহু বছর পর বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে ঢাকার মেয়রপ্রার্থী আনিসুলের ছবি দেখে, ফের হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগিয়ে তুলেছেন তসলিমা৷‌ ফিরে এসেছে কিশোরীবেলার সেই সলাজ শিহরন৷‌ ফেসবুকে লিখেছেন, যৌবনে অবশ করে দেওয়া সুদর্শন ছিলেন৷‌ ওঁর চোখ, ওঁর হাসি, ওঁর কন্ঠস্বর আমাকে পাগল করত৷‌ এখনও অনেকটা আগের মতোই আছেন আনিসুল৷‌

  45. মাসুদ করিম - ১২ মে ২০১৫ (৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ)

    রাজু আলাউদ্দিন: তো গদ্যশিল্পী হিসেবে, বা গদ্যলেখিকা হিসেবে বা তার সমস্ত কিছু, তা গদ্যশৈলীই বলি বা তার বক্তব্য—সমস্ত কিছু মিলিয়ে আপনার কী অভিমত?
    নন্দিতা বসু: বেগম রোকেয়া সম্পর্কে আমি যেটা প্রধানভাবে দেখি, উনি মেয়েদের অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিলেন বাঙালি সমাজে, মুসলমান সমাজে বলব না, বাঙালিসমাজে বলব–সেটা এমনই একটা আশ্চর্য ঘটনা আমাদের সমাজে যে, এই ঘটনা না ঘটলে বলত যে এটা হতে পারে, আমরা বিশ্বাস করতাম না। হয়ে গেছে বলে এটাকে আর অস্বীকার করা যায় না। যেভাবে উনি পড়াশোনা করেছিলেন এবং শেষ দিকে যখন স্কুল করলেন; স্কুলের সঙ্গে সেই সময় সমাজে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ছিলেন, নানাভাবে উনাকে আপস রফা করতে হয়েছে।
    উনি কিন্তু অসম্ভব বড় সমাজকর্মী ছিলেন। যেটা মেয়েদের শিক্ষার জন্য, মেয়েদের মধ্যে নতুন চেতনা আনার জন্য। তার যে লেখাটা আমরা ক্লাসে পড়াই, ‘অলংকার না Badges of slavery’–ওই সময় তিনি এই জিনিসগুলো বলেছেন। যখন বয়স উনার কম যারা, যারা ক্রয় করতে পারে তারা তো গয়না অনেক পরবেই। মেয়েদের এই অলংকারকে উনি দেখাচ্ছেন যে, এটা হচ্ছে তার দাসত্বের চিহ্ন। তার স্বামীর বা তার ধনী পিতার গৌরব বাড়াবার জন্য সে এই গয়নাগুলো পরছে। (মানে, তিনি ওইটার সঙ্গে নারীর আত্মশক্তি, আত্ম-মর্যাদাকে যুক্ত করে দেখেছেন।—রাজু আলাউদ্দিন)। হ্যাঁ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে করেছেন এটা। তাঁর যে সুলতানাস ড্রিম একটা কল্পকাহিনি আছে। কল্পকাহিনির মধ্যে উনি দেখাচ্ছেন যে, মেয়েরা কি-না করতে পারে। নতুন জগৎ গড়ে তুলেছে তারা। একটা নতুন সভ্যতা গড়েছে। সেখানে বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে তারা কত কি নতুনভাবে করছে।
    তার লেখা উপন্যাস, পদ্মরাগ আমার ভালো লাগে। তখনকার মুসলমান সমাজের মধ্যে যে মেয়েদের অবস্থান তুলে ধরেছেন, সেটা ঠিক। কিন্তু আমি উনাকে অনেক বড় মনে করি, শিক্ষা ক্ষেত্রে বা মেয়েদের মধ্যে সমান অধিকারের চেতনা জাগ্রত করার ক্ষেত্রে যে কাজ করছেন সেটার জন্য। লেখাটা আমার কাছে সেকেন্ডারি মনে হয়। ওইটা-ই উনার জীবনের লক্ষ্য ছিল। সেইটা করার জন্য উনি লিখেছেন। উনি একদিকে যেমন স্কুল করেছেন, নানান প্রবন্ধ লিখেছেন; উপন্যাসের মধ্যেও উনি ওই চেতনাটা তুলে ধরেছেন।
    রাজু আলাউদ্দিন: সুলতানাস ড্রিম …একজন লেখকের, একজন শিল্পীর মূল শক্তিটা কী? সেটা হল ইমাজিনেশন। সমাজকর্ম, আপনি যেটা বলেছেন, সেটা তো অবশ্যই তার প্রধান পরিচয়, কোনো সন্দেহ নাই। তিনি যা করতে চেয়েছেন, তাঁর যে লক্ষ্য ছিল, সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য সাহিত্য করতেন। কিন্তু সাহিত্য রচনা করতে গিয়েও তো দেখা গেছে যে, শিল্পীর কল্পনাশক্তি, সেটা আশ্চর্য রকম ব্যবহার আছে সুলতানাস ড্রিমস-এর মধ্যে। সুলতানাস ড্রিমসএর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে—নন্দিতা বসু)। এমনকি আজকে আমরা যেটাকে সম্ভব বলে দেখছি, শুধু সম্ভব নয় বাস্তবেই দেখতে পাচ্ছি আলোকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা। সেটার স্বপ্ন উনি অনেক আগে দেখেছিলেন। এই দূরদর্শিতা, শিল্পী হিসেবে কি মনে হয় না, উনি কম গুরুত্বপূর্ণ নন?
    নন্দিতা বসু: আমার আসলে নিজের যে রকম চিন্তা ছোটবেলা থেকেই, আমি মনে করতাম, মেয়েরা পড়াশোনার জগতে একটা জায়গা সে করতেই পারবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, যদি সুযোগ পায় তারা কোনো অংশেই কারও থেকে কম পারবে না। আমি সবসময় বেগম রোকেয়াকে ওভাবেই দেখেছি যে, উনি এটা প্রমাণ করে ছেড়েছেন সম্ভাবনাটা। একটা মেয়ের মধ্যে যে সম্ভাবনা কতখানি আছে সুযোগ পেলে দেখাতে পারবে। নিজের জীবনেও যেটা উনি করে দেখিয়েছেন এবং অনেক মেয়ের মধ্যে সেটা সম্ভব। যে কারণে উনি স্কুল তৈরি করেছেন। আমি সেভাবেই উনাকে দেখেছি সবসময়।
    রাজু আলাউদ্দিন: আরেকটা জিনিস কি মনে হয় না যে, যাকে বলে মৌলবাদ বা ধর্মীয় গোঁড়ামি, এগুলোর সঙ্গে লেখদের লড়াই করতে হচ্ছে। অনেকে লড়াই করছেন এগুলোর বিরুদ্ধে, তাই না? উনি সেই লড়াইটা সে সময় করেছিলেন। সেই সময় উনি যে লড়াইটা করেছেন, আজকে অনেক লেখক-লেখিকা সেই লড়াইটা করছেন। তার সঙ্গে আজকের এই লেখকদের পার্থক্য কোথায় বলে মনে করেন আপনি?
    নন্দিতা বসু: উনি যে স্কুলটা করলেন কলকাতায়, সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল, সেখানে তো মেনে নিলেন যে হ্যাঁ, মেয়েরা বোরখা পড়ে আসবে স্কুলে। বোরখাটা উনি মেনে নিয়েছিলেন। অনেকে বলতে চান, কোথায়! উনি তো আপস-রফা করেছিলেন। আমি কিন্তু নিজে মনে করি, সমাজে যদি তাকে কাজ করতে হয় কোন সমাজে বসে কাজ করছেন উনি– তাকে সেটা দেখতে হবে তো। (তাকে সেই সমাজটাকে বুঝতে হবে—রাজু আলাউদ্দিন)। হ্যাঁ, বুঝতে হবে। কারণ তাকে কখনও করতে দেবে না, যে কোনো সময় থামিয়ে দিতে পারে তার কাজকে। উনি থামতে চাননি। উনি স্কুলটা করতে চেয়েছিলেন। মেয়েরা পড়তে পারবে, পাবে স্কুলে যেতে। তার জন্য তাকে মানতে হয়েছিল, মুসলমান মেয়েরা বোরখা পড়ে আসবে।
    আমার মনে হয়, তিনি সত্যিকারের যোদ্ধা নারী, যিনি তার রণকৌশলটা তৈরি করতে পেরেছিলেন। উনি যদি বলতেন—না, আমি তাহলে স্কুল চালাব না, কিন্তু আমি কোনো বোরখা অ্যালাও করব না। সেটা ঠিক হত না, সেটা ভীষণ ভুল হত।
    রাজু আলাউদ্দিন: আপনি কি মনে করেন, তসলিমা নাসরীন সে রকম ভুল করেছেন?
    নন্দিতা বসু: আমাকে যদি বলতে দেওয়া হয়, তাহলে আমি বলব, হ্যাঁ।
    রাজু আলাউদ্দিন: কী?
    নন্দিতা বসু: আমি বলব যে, তসলিমা সরাসরি যেভাবে লড়াইটার মধ্যে গিয়ে পড়েছেন, তাতে সেই লড়াইটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

    রাজু আলাউদ্দিন: আপনি কি মনে করেন, তসলিমার লড়াইয়ের…
    নন্দিতা বসু: তাঁর লড়াইয়ের পদ্ধতিটা আমার ঠিক মনে হয়নি। যে লড়াইটা দেশ থেকে করতে গেলে অনেকটা আটকে যেত না? (হ্যাঁ—রাজু আলাউদ্দিন)। উনি দেশ ছাড়ার পর, একজন লেখককে লিখতে হলে তো তাকে একটা লেখার ইনভাইরনমেন্টের মধ্যে থাকতে হয়। সারাক্ষণই যদি মনে হয়, যে কোনো সময় আমি কতল হয়ে যাব, সে তো লেখার পরিবেশের মধ্যে নেই। ক্রিয়েটিভি তার হ্যাম্পার্ড হতে পারে।
    আরেকটা জিনিস আমার মনে হয়, তসলিমা যেভাবে সমাজকে অ্যাটাক করেছে, এটা আমার ঠিক ভালো লাগেনি। তার কবিতা কিছু নিশ্চয়ই ভালো, কিন্তু তার যেটা উপন্যাস, যার জন্য তিনি দেশান্তরী, সেটা আমার নিজের সেটা ভালো লাগেনি।
    রাজু আলাউদ্দিন: লজ্জা?
    নন্দিতা বসু: হ্যাঁ, লজ্জা। লজ্জা উপন্যাসটা আমার ভালো লাগেনি। উপন্যাস হিসেবে এটা খুবই জোলো। এটা থেকে যে আমি ইন্সপায়ার হলাম বা এটা আমার একটা এক্সপেরিয়ান্স, আমার কাছে মনে হয়নি।
    তাছাড়া আমি যদি, আমার কাছে নেই এখন পুরো তথ্য, আমি তার নির্বাচিত কলাম-এর মধ্যে অনেক কন্ট্রাডিকশন দেখাতে পারব। আমার মনে হয় অনেক মিথ্যা ভাষণ আছে তার মধ্যে।
    (কী বললেন?—রাজু আলাউদ্দিন)। মিথ্যে ভাষণ আছে। যেটা একটা সিরিজের রিলেশন দিয়েছেন। (অনেকেই তাই মনে করেন—রাজু আলাউদ্দিন)। এটার সঙ্গে মানে…, আমি যে লেখকদের শ্রদ্ধা করি তাদের সঙ্গে মেলাতে পারি না।

    • মাসুদ করিম - ১৭ জুন ২০১৫ (২:৪১ অপরাহ্ণ)

      তসলিমা নাসরিনের ‘নির্বাচিত কলাম’ নিয়ে কিছু প্রশ্ন

      তসলিমাকে নিয়ে যে লেখাটা আজ লিখতে বসেছি জানি না সকলকে আমার ভাবনাটা বোঝাতে পারবো কিনা। ভয় একটাই। কোথাও না বড় একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। সেজন্য তসলিমা সম্পর্কে আমার নিজের অবস্থানটা প্রথমে পরিস্কার করে নিলে বোধহয় ভালো হয়।

      বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিন ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, সমাজে পুরুষতন্ত্রের আধিপত্য সম্পর্কিত প্রশ্নে সোচ্চার হয়ে কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন হয়েছেন, সেজন্য মাত্র ৩১ বছর বয়সেই তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। আর তিনি দেশে ফিরতেই পারেন নি। কখনো ইউরোপ, কখনো আমেরিকা, কখনো ভারতবর্ষে তাঁকে গত বাইশ বছর থেকে নির্বাসনে কাটাতে হচ্ছে। সত্যিই তো একজন লেখকের কাছে এরচেয়ে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে? লেখক যদি তাঁর ভাষিক অঞ্চল থেকে নির্বাসিত হন, লেখার বিষয়বস্তুর জগত থেকে নির্বাসিত হন তাহলে তো তাকে হত্যাই করা হলো। তসলিমা তাঁর নিজের বিশ্বাসে দৃঢ় থেকেছেন, আপোষ করে প্রতিপক্ষের থেকে দেশে ফেরার সুবিধেটুকু আদায় করেননি। সেজন্য তিনি আমাদের সকলের শ্রদ্ধাভাজন। এতে কোনো দ্বিরুক্তি নেই, ঘাটতি নেই।

      কিন্তু এই সব কিছু মেনে নিয়েও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়: সেগুলি হলো নারীপুরুষ সম্পর্কে তাঁর কিছু সাধারণ উক্তি। সেইগুলির সব কি মেনে নেওয়া যায়? যেমন নির্বাচিত কলাম-এর ৬৪ পৃষ্ঠায় তিনি একটি ঘটনার কথা লিখছেন: একদিন দুপুরবেলা (মনে হয় ১৯৯০ এর গোড়ায় হবে) তসলিমা ও তাঁর বোন ঢাকা শহরে রিক্সা করে আসছেন (ধানমন্ডি গ্রীনরোড এলাকায়) তখন দু’জন দুস্কৃতিকারী এসে তাদের টাকা পয়সা ইত্যাদি সব দিয়ে দিতে বলে, এবং ভয়ের চোটে তাঁরা সব দিয়েও দেন। তসলিমার বক্তব্য ঐ সময় রাস্তায় অনেক লোক ছিল কিন্তু কেউ তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। তসলিমা লিখছেন, নারী নিয়ে ঘরে বাইরে যা কিছুই ঘটে সবই মজার ঘটনা। লোকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখে! কিন্তু আমাদের বক্তব্য সেদিন যদি রিক্সায় দু’জন পুরুষ থাকতো তাহলেও কী ঘটনা একইভাবে ঘটতো না? পথচারীরা কি একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতো না? কারণ প্রাণের ভয় তো সকলেরই আছে। ছিনতাইকারীরা সশস্ত্র, বাকিরা তো নিরস্ত্র। নিরস্ত্র কী সশস্ত্রকে মোকাবেলা করতে পারে? আমার মনে হয় ঘটনাটাকে যদি আমরা পুরুষ নারীর সমস্যা থেকে দেখি তাহলে সঠিক উত্তর পাবো না, সমস্যাটার আসল চেহারাটাকে দেখতে পাবো না। সমস্যাটার আসল চেহারাটা আমরা তখনই দেখতে পাবো যখন এরকম ঘটনা কেন ঘটে সেই সম্পর্কে বাস্তব কিছু তথ্য যোগাড় করতে পারবো।

      নির্বাচিত কলাম –এর ৭৫ নং পৃষ্ঠায় আছে যে অল্পবয়সে তসলিমা মামাবাড়ি গিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খেয়ে ধরা পড়ে ভর্ৎসিত হয়েছিলেন। তাকে বলা হয়েছিল ‘মেয়েদের সিগারেট ছোঁয়া বারণ’। প্রশ্ন এই, তসলিমার জায়গায় যদি ঐ বয়সের তসলিম বলে কেউ হতেন তবে কি তাকে কোনোভাবে রেহাই দেওয়া হতো? তার কপালেও কি কিলচড় একই ভাবে জুটতো না? ঐ বয়সে ঐরকম নিষিদ্ধ কাজের জন্য একই ফলভোগ করতে হতো কী ছেলে হোক, কী মেয়ে– যেই হোক। অবশ্য তার মানে এই নয় যে আমি বলতে চাইছি ছেলে এবং মেয়েকে আমাদের সমাজে একই চোখে দেখা হয়। মোটেও তা নয়। ছেলে এবং মেয়ের প্রতি সমাজের বিভেদমূলক দৃষ্টি নিয়ে বহুদিন ধরে প্রতিবাদ/প্রতিরোধ আন্দোলন চলছে। ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দে লেখিকা শরৎকুমারী চৌধুরানী (১৮৬১-১৯২০) ‘ভারতী’ পত্রিকায় একটি গল্প লিখেছিলেন, ‘আদরের না অনাদরের’। ঐ গল্পে দুই প্রজন্মের নারীদের মধ্যে তর্কবিতর্কের মধ্যে এটিই প্রতিষ্ঠা করা হয় যে মেয়েসন্তান আদরের, অনাদরের নয়। বাংলাসাহিত্যে, সমাজে এটি বহু পুরোনো সমস্যা, বহুদিন থেকেই এটা নিয়ে আন্দোলন তর্ক-বিতর্ক চলছে। তসলিমা নতুন কোনো সমস্যার কথাও বলেননি, আর এই সমস্যা সমাধানে কোনো নূতন পথ নির্দেশও দিতে পারেননি। খুব জলোভাবে কিছু গা-গরম করা কথা বলেছেন। যেমন বাংলায় ‘স্ত্রীধর্ম’ (পৃ-৯৯) শব্দটি প্রচলিত কিন্তু পুরুষদের প্রতি প্রযোজ্য সমধর্মী ‘পুরুষধর্ম’ বলে কোনো শব্দ নেই। কারণ পুরুষদের ‘সতীত্ব’ ‘ মমতা’ ‘বাৎসল্য’ নির্দেশক কোনো গুন সমাজ দাবী করে না। সত্যিই কী? আমি ব্যক্তিগতভাবে বহু পুরুষকে চিনি আত্মীয় এবং অনাত্মীয়র মধ্যে যাঁরা একগামী যাঁরা যৌনশোষণ করে না এবং পুত্রকন্যা ও অন্যান্যদের প্রতি স্নেহশীল। অবশ্যই ‘পতিতা’ ‘সতী’ প্রভৃতি শব্দ প্রযোজ্য একমাত্র মেয়েদের জন্য, কিন্তু আমাদের সমাজটা কী এরকম যেখানে পুরুষদের জন্য কোনো অনুশাসনই প্রয়োগ করা হয় না? আমাদের সমাজে সব পুরুষই কি বৌকে ধরে পেটায় আর সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে বেলেল্লাপনা করে? যদি তাই হয়, যেমন তসলিমা নির্বাচিত কলাম-এ বলেছেন, তাহলে আমি স্বীকার করছি যে সেই সমাজকে আমি চিনি না।

      নির্বাচিত কলাম-এ সতীধর্মের মাহাত্ম্য নিয়ে অনেক আলোচনা, উদ্ধৃতি আছে। অবশ্যই সতীনারীর জয়গান নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক সময় শক্তি খরচ হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আজও কী সব মেয়েই সতীর খপ্পরে পড়ে আছে? আজ ভারতবর্ষে বাংলাদেশে অগুনতি মেয়েরা যে শুধুমাত্র শ্রম আর বুদ্ধিকে অবলম্বন করে মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছে, তারা কারা?

      তসলিমার অনেক উক্তিই অগভীর, যথেষ্ট খোঁজ খবর নিয়ে পৌঁছোনো সিদ্ধান্ত নয়। যেমন নির্বাচিত কলাম-এর ৪৮ পৃষ্টায় তসলিমা লিখছেন, ‘মৃচ্ছকটিক’ নাটকে রাজা চারুদত্তের সঙ্গে বসন্তসেনার বিয়ের কথা হয়। কিন্তু যাঁরা ‘মৃচ্ছকটিক’ পড়েছেন তারা জানেন যে চারুদত্ত রাজা নয়, একদা প্রভুত অর্থশালী কিন্তু বর্তমানে নিঃস্ব বণিক। নাটকে প্রেমোপাখ্যানটি গভীরতর হয়েছে এই কারণেও যে ঐশ্বর্যময়ী, অপূর্বসুন্দরী এবং চৌষট্টী কলায় পারদর্শিনী বসন্তসেনা দারাপুত্রের অধিকারী চারদত্তকে নিবিড়ভাবে ভালোবেসে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী হয়েছেন। ‘মৃচ্ছকটিক’ নাটকের দুষ্ট রাজা তো ‘পালক’, নাটকের শেষে যাঁর পতন ঘটেছে এবং ভালো রাজা ‘আর্যক’-এর অভ্যুত্থান ঘটেছে। মৃচ্ছকটিক একটি সংস্কৃত নাটক। ভাষার দূরত্বের জন্যই আজ সকলের পক্ষে নাটকটি পড়ে ওঠা সম্ভব নয়, আর একজন চিকিৎসকের পক্ষে অন্যভাষার সাহিত্যের খুটিনাটি জানাও বোধহয় সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও যদি কেউ তা করতে চায় তাহলে ভুল তথ্যের যোগান দেওয়া হয় যে।

      তসলিমার আমি ভালো নেই, তুমি ভালো থেকো’র ৫৯ পৃষ্টায় তিনি লিখছেন পৃথিবীতে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন একমাত্র বাঙালীরাই। ডাহা মিথ্যা কথা। ১৯৫২-র ১৫ই ডিসেম্বর পট্টিশ্রীরামালু দক্ষিন-ভারতে আমরন অনশন করে মৃত্যুবরণ করেন তেলেগু ভাষার জন্য, ১৯৯৬-এ সুদেজ্ঞা শহীদ হয়েছেন আসামের বরাক ভ্যালিতে মনিপুরী ভাষার জন্য।

      নির্বাচিত কলাম-এ তসলিমা নারীকে যৌনপ্রতীক হিসাবে দেখার সামাজিক দৃষ্টির বিরুদ্ধে সঙ্গত কারণেই তুখোড় প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু তিনিই সুইডেনে পৌঁছে লিখছেন “আমার অসময়ের ঘুম ভাঙিয়ে হঠাৎ লেনা নামের এক মেয়ে লিকলিকে দাঁত উঁচু, স্তনহীন লাল চুলো, এসে রোবটের মত চিকন গলায় বথা বলতে শুরু করল” (আমি ভালো নেই, তুমি ভালো থেকো, পৃ: ১৩ ) একটি দেশে যেখানে তিনি আশ্রয়প্রার্থী হয়ে গেছেন সেখানকার একজন নারীকে তিনি যেভাবে বর্ণনা করেছেন তা কি খুব আপত্তিকর নয়? নারীর শরীরের আপত্তিকর বর্ণনা দিয়ে তাকে চেনালেন নারীবাদী তসলিমা?

      তসলিমা সম্পর্কে আমার মত জানালাম, তার লেখায় এতো স্ববিরোধ আছে যে বেশি খুঁজে বের করতে হয় না তা। তসলিমা তাঁর লেখার মধ্যদিয়ে সমাজ থেকে নারীপুরুষের বৈষম্য দূর করতে চান। তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, প্রশ্ন তাঁর পদ্ধতি নিয়ে। সমাজের একটি প্রাচীন ব্যাধিকে দূর করতে হলে অনেকের চেষ্টায় একটা দীর্ঘ লড়াই, একটা সুচিন্তিত রণকৌশলের মধ্যে তা চালাতে হবে। একজন ব্যক্তির জেহাদে সেটা সম্ভব কী? আজকাল যেকোনো ঘটনারই একটা খবর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে, ‘মিডিয়া’ তাকে লুফে নেয়। ‘মিডিয়া’-ও তো মুনাফালোভী ব্যবসা, অনেক কায়েমীস্বার্থ সেখানে জড়িত। অনেক জটিল কাটাকুটির খেলা থাকে সেখানে। জানিনা, এত দুঃখ যন্ত্রনা সহ্য করেও তসলিমা সেই মিডিয়ারই শিকার কিনা!

  46. মাসুদ করিম - ১৪ মে ২০১৫ (৫:০৫ অপরাহ্ণ)

  47. মাসুদ করিম - ৩ জুন ২০১৫ (৯:০৭ অপরাহ্ণ)

  48. মাসুদ করিম - ৬ জুন ২০১৫ (৯:৪২ পূর্বাহ্ণ)

    তসলিমা চাইলে পাশে দাঁড়াবে মানবাধিকার কমিশন

    ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের হুমকির কারণে লেখিকা তসলিমা নাসরিনের দেশে ফিরতে না পারা এবং সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নীরবতা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

    তসলিমা সহযোগিতা চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নির্বাসিত এই লেখিকার পাশে দাঁড়াবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

    স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মিজানুর রহমান বলেন, “শুধু তসলিমা নাসরিন নয়, দাউদ হায়দার প্রসঙ্গটিও এসে যায় সাথে সাথে। স্বাধীনতার পর পরই দাউদ হায়দারকে মাতৃভূমি ত্যাগ করতে হয়েছে একটি কবিতার জন্যে। এরপর বহু বছর কেটে গেল, বলা গেল সারাটি জীবন উনি প্রবাসে কাটিয়ে দিলেন।

    “যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন, হয়তো কোনো এক সময় তাদের কোনো বক্তব্য, কোন কোন মহলকে আহত করতে পারে, মনঃপুত নাও হতে পারে এবং এমনটি সবসময়ই হতে পারে- এজন্যে তারা বাধ্য হবেন সারাটি জীবন প্রবাসে কাটিয়ে দিতে, এটি কিন্তু কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটি যেমন দাউদ হায়দারের বেলায় প্রযোজ্য, তসলিমা নাসরিনের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য।

    “উনার মতামত প্রকাশের ভঙ্গি হয়তো কাউকে আহত করেছে, তার বক্তব্যে অনেকের দ্বিমতও থাকতে পারে। এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রকাশ ভঙ্গির সাথে দ্বিমত থাকার কারণে এবং কোন কোন উগ্র-ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে তসলিমা নাসরিনকে দেশে থাকতে দেওয়া হবে না এবং রাষ্ট্র চুপচাপ সেটি সহ্য করবে-এমনটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”

    চিকিৎসক তসলিমা গত শতকের ’৯০ এর দশকে লেখালেখি শুরুর পর আলোচনায় উঠে আসেন। বাংলাদেশে হিন্দু নিপীড়ন নিয়ে উপন্যাস ‘লজ্জা’ প্রকাশের পর মৌলবাদীদের হুমকি ও ব্যাপক হৈ চৈয়ের মধ্যে ১৯৯৪ সালে দেশত্যাগে বাধ্য হন তিনি। এরপর বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন এই লেখিকা।

    ২০০৪ সালে ভারত রেসিডেন্ট পারমিট ভিসা দেয় তসলিমাকে। পরে তা বাতিল হলেও ২০১৪ সালের শেষ দিকে এসে ফের থাকার অনুমতি দেয় ভারত।
    ক্রমাগত জঙ্গি হুমকির মুখে একটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় সম্প্রতি ভারত ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন তসলিমা।

    নির্বাসিত এই লেখিকা দেশের ফেরার জন্য সহযোগিতা চাইলে মানবাধিকার কমিশন সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, “তসলিমা নাসরিন অথবা দাউদ হায়দাররা যদি মনে করেন যে তারা রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশিত সহায়তা পাচ্ছেন না, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তারা দেশে ফিরতে ইচ্ছুক কিন্তু ফেরার ব্যাপারে সরকারের যে ধরনের পদক্ষেপ অবলম্বন করা প্রয়োজন তা দেখতে পাচ্ছেন না, তাহলে তারা যেন আমাদের ( মানবাধিকার কমিশন) অবহিত করেন যাতে আমরা তাদের মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়াই।

    “বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি মনে করেন যে তার বৈধ অধিকার ভোগ করা থেকে অহেতুক বা অবৈধভাবে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং তিনি বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন-এ ধরনের তথ্য লিখিত আকারে মানবাধিকার কমিশনকে জানানো হলে তার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা দ্বিধা করব না।”

    মিজানুর রহমানের মেয়ে অর্পিতা হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে স্নাতকোত্তর করেছেন।সে উপলক্ষে বস্টনের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে স্ত্রীকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন তিনি।

    শুক্রবার দেশের উদ্দেশ্যে তার নিউ ইয়র্ক ছাড়ার কথা।

  49. মাসুদ করিম - ৯ জুন ২০১৫ (৪:০০ অপরাহ্ণ)

    মোদির হাসিনাকে বলা #DespiteBeingAwoman নিয়ে নারীবাদীরা সোচ্চার হলেও তসলিমা নাসরিন চুপ, শুধু ফাঁকে ফোঁকরে দুএকটা সংঘাতমূলক রিটুইট দিয়েই খালাস।

  50. মাসুদ করিম - ৬ জুলাই ২০১৫ (৯:১৮ পূর্বাহ্ণ)

    কিছু কিছু কারণে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর ওপর আমার রাগ ছিল. তার একটির কথা না হয় বলিই, আমাকে দিয়ে কোনো এক পাকিস্তানি ভাট্টির বাঙালী স্ত্রীর জন্য তিনি পলিটিকাল এসাইলামের ব্যবস্থা করিয়েছিলেন, যে কৃতঘ্ন স্ত্রী এসাইলাম পাওয়ার কিছুকাল পর আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছিল. তার এই জঘন্য চরিত্র সম্পর্কে জানার পর আব্দুল গাফফার চৌধুরী কৃতঘ্ন মহিলাটিকে তিরস্কার করেছেন বলে শুনিনি.

    আজ গাফফার চৌধুরীর ওপর যত রাগ ছিল আমার, সব জল হয়ে গেল. এতদিনে তিনি কিছু সত্যি কথা বলেছেন. মোহাম্মদ, আলী, ওসমান , আব্দুল্লাহ, খাদিজা এসব যে কোনো মুসলমান নাম নয়, তা মাথায় সামান্য বুদ্ধি যাদের আছে, তারাই জানে. মোহাম্মদ তাঁর ৪০ বছর বয়সে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন করেছিলেন. তার আগে তিনি এবং তাঁর পরিবার এবং তাঁর বন্ধুরা অন্য ধর্মের অনুসারী ছিলেন. তাঁরা কেউ মুসলমান ছিলেন না. তাঁরা কেউ তাঁদের অমুসলমান নাম কিন্তু পরিবর্তন করেননি.

    গাফফার চৌধুরীর পাশে আছি. আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী গানটি লিখেছেন তিনি, যে গান শুনে শত কোটি মানুষ বাংলা ভাষাকে ভালবাসতে শিখেছে. বাংলা ভাষার কসম, গাফফার চৌধুরীর গান বৃথা যেতে দেব না.

    আল্লাহর নাম নিয়ে যারা গাফফার চৌধুরীর সঙ্গে একমত নন, তারাও নিজেদের মত প্রকাশ করুন. সুস্থ বিতর্ক চলুক. কিন্তু কল্লা চাই মুন্ডু চাইএর শয়তানি বন্ধ হোক. এক পাল শয়তান ওদিকে লতিফ সিদ্দিকীর ফাঁসি চাইছে. ধর্মের মোটা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেশটাকে পুরো অন্ধকার বানিয়ে দিচ্ছে. গাফফার চৌধুরী তো নিতান্তই নিরীহ মানুষ, আল্লাহর ৯৯ নামের কথা বলেছেন শুধু, আল্লার ৩ কন্যার কথা তো বলেননি!

  51. মাসুদ করিম - ২০ জুলাই ২০১৫ (১:৪২ অপরাহ্ণ)

    সবকিছুর পর তসলিমা নাসরিনের চারিত্রিক সংকীর্ণতাই ফুটে ওঠে বারবার – বন্যার বক্তৃতা নিয়ে তার মন্তব্য তার অচিকিৎস্য চারিত্রিক সংকীর্ণতারই প্রকাশ ঘটায়।

    যদিও অত্যন্ত তাৎপর্যহীন, তবুও একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যার কিছুটা প্রাসঙ্গিকতা থাকায় এখানে উল্লেখ করছি। বন্যা আহমেদের ‘ভলতেয়ার বক্তৃতা’ নিয়ে লেখক তসলিমা নাসরিন কিছু অদ্ভুত মন্তব্য করেছেন (এই এ্যালবামের শেষে দেখুন > এক, দুই )। ‘অদ্ভুত’ বললাম এ কারণে যে – তার এই মন্তব্যগুলোর হেতু বা উদ্দেশ্য আমার কাছে একেবারেই স্পষ্ট নয়। সত্যি বলতে কি সেটা উদঘাটনেরও তেমন আগ্রহ বোধ করছি না। বন্যা আহমেদ তার বক্তৃতায় হেসেছেন কেন তা নিয়ে তসলিমা নাসরিন অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আরও অসন্তুষ্ট হয়েছেন যে বক্তৃতায় বন্যা আহমেদ যথেষ্ট ‘রাগ’ এবং ‘ফুঁসে ওঠা’ প্রকাশ করেননি! অভিজিৎ বিষয়ে বন্যা আহমেদের প্রকাশভঙ্গী মনঃপূত না হওয়ায় তা নিয়েও তসলিমা নাসরিনের ‘একটুখানি অস্বস্তি’ হয়েছে বলে তিনি লিখেছেন!

    তসলিমা নাসরিন সেদিন হিলটনের সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। আমি ছিলাম, আরও ছিলো ছয় শতাধিক মানুষ, যারা তাদের প্রতিক্রিয়া/অনুভুতি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যক্ত করেছেন। এই এ্যালবামের টুইটগুলো পড়লে তসলিমা নাসরিন নিশ্চয়ই তার ভুল উপলদ্ধি করবেন। সভাকক্ষে উপস্থিত কারোই মনে হয়নি যে অভিজিৎ রায়কে কিংবা বাংলাদেশের তাবত সেক্যুলার ব্লগার আর চিন্তাবিদদের বিশ্বের দরবারে উপস্থাপনে বন্যা আহমেদের দিক থেকে কোনো ধরণের ঘাটতি ছিল! বরং উল্টোটাই মনে করছেন সবাই, যা উঠে এসেছে নিক কোহেনসহ আরও বহু লেখকের কলামে, এই টুইটগুলোতেও। তারা এখন বাংলাদেশের সেক্যুলার চিন্তাবিদদের ব্যাপারে, ব্লগারদের আন্দোলনের ব্যাপারে, মত-প্রকাশের সংগ্রামের ব্যাপারে আরও জানতে আগ্রহী।

  52. মাসুদ করিম - ৩ আগস্ট ২০১৫ (৮:৫৩ অপরাহ্ণ)

    ‘নির্বাসিত’ এবং তসলিমা নাসরিন

    বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিন এবং তার পোষা বিড়াল মিনুর গল্প থেকে অনুপ্রাণিত টালিগঞ্জেরে সিনেমা ‘নির্বাসিত’ মুক্তি পাচ্ছে শিগগিরই। চূর্নি গাঙ্গুলি পরিচালিত এবং অভিনীত এই সিনেমাকে নিজের জীবনীভিত্তিক না বললেও ‘একজন নারী নির্মাতার পক্ষে সাহসী পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তাসলিমা।

    ভারতীয় দৈনিক টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তসলিমা বলেন, “সিনেমাটিতে অনেক কল্পকাহিনি আছে। কেন আমাকে আমার মাতৃভূমি ছাড়তে হয়েছে, কিংবা মৌলবাদীরা কেন আমার নির্বাসন চেয়েছে- এগুলো সিনেমাটিতে উঠে আসেনি।”

    কিন্তু এরপরও ‘নির্বাসিত’কে একটি সাহসী সিনেমা হিসেবে উল্লেখ করেছেন তসলিমা। কারণ অন্য পরিচালকরা তাকে নিয়ে কোনো সিনেমা তৈরির সাহস দেখাতে পারেননি। তাকে নিয়ে সিনেমা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হলেও বারবার পিছিয়ে গেছেন নির্মাতারা।

    “রাজনৈতিক নানা কারণ তাদেরকে এ ব্যাপারে পঙ্গু করে দিয়েছে। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে আমার লেখা থেকে সিরিয়াল তৈরির কথা হয়েছিল; এমনকি সেটাও বাতিল হয়ে গেল ”

    তসলিমা জানান, ‘নির্বাসিত’ তৈরির প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন চূর্নির স্বামী নির্মাতা কৌশিক গাঙ্গুলি।

    “আমার অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কৌশিকের ‘নির্বাসিত’র শুটিং শুরু করার কথা ছিল।”

    কিন্তু কয়েক মাস পর তিনি দেখলেন কৌশিক ‘নির্বাসিত’র বদলে ‘শব্দ’-এর কাজে হাত দিয়েছেন।

    তসলিমার ধারণা হয়েছিল, তাকে নিয়ে যে কোনো কিছুই শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে না।

    “মানুষ হিসেবে আমাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমার সম্পর্কিত কোনো কিছুই শেষ পর্যন্ত তৈরি হয়নি।”

    আর সে কারণেই সিনেমাটি তৈরি হওয়াটাকেই বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন তিনি।

    “কেন আমাকে নির্বাসন দেওয়া হল, কিংবা কেন আমার মাথার উপর দাম চড়ানো হলো, সিনেমাতে এসব বিষয় খুলে বলা হলে আমার ভাল লাগতো। তবে, চূর্নি সম্ভবত জানতেন, এটা নিয়ে ঝুঁকি নিলে ‘নির্বাসিত’ মুক্তি দিতে সমস্যা হবে। তিনি কৌশিকের লেখা এক মা আর তার বিড়ালের গল্পের বিদ্রাপাত্মক দিকটি গ্রহণ করেন, আর তাতে একটি বিয়োগাত্মক দিক যোগ করেন। আমি খুশি যে একজন নারী নির্মাতা শেষ পর্যন্ত এটি করতে পেরেছে, যা অন্যেরা পারেনি।”

  53. মাসুদ করিম - ৫ আগস্ট ২০১৫ (৫:৫০ অপরাহ্ণ)

    তসলিমাও কি নাগরিক হতে পারবেন?

    ধর্মীয় হেনস্থার শিকার হয়ে যাঁরা পালিয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তার জন্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি। শুধু বিতাড়িত হিন্দুরা নন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নিগ্রহের কারণে যে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন এবং জরথ্রুষ্টিয়দের এদেশে এসে আশ্রয় নিতে হয়েছে, তাঁদের সবাইকে বৈধ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। যদিও আশ্রয়প্রার্থী মুসলিমদের ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান কী হবে, তা স্পষ্ট নয়। অবধারিতভাবেই এক্ষেত্রে উঠে আসছে ভারতে আশ্রিত বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের নাম।

    কারণ নাগরিকত্ব আইনের পাশাপাশি ১৯৪৬ সালের বিদেশি নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯২০ ও ১৯৫০ সালের পাসপোর্ট আইনেরও সংশোধন করা হচ্ছে । পাসপোর্ট আইন, যা মূলত ভারতে প্রবেশের অধিকারকে নির্দিষ্ট করে, তাতে একটি মৌলিক পরিবর্তন হচ্ছে। ধর্মীয় কারণে বিতাড়িত বা দেশছাড়া এবং বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ভারতে আশ্রয় নেওয়া মানুষজনকে আর অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে না। আর তসলিমা নাসরিনের মতো যাঁরা বৈধ পাসপোর্ট–সমেত এদেশে এসে আশ্রয় চাইবেন, তাঁদের দীর্ঘ মেয়াদি ভিসা দেবে সরকার।

    নাগরিকত্বের ক্ষেত্রেও সুযোগ পেতে পারেন তসলিমা, যদি মুসলিমদেরও এই সুযোগের আওতায় আনা হয়। বলা হচ্ছে, পাকিস্তান অথবা বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যাঁরা এদেশে এসেছেন, তাঁরাই নাগরিকত্ব চাইতে পারেন। দু ধরনের সুযোগ থাকবে তাঁদের। নথিভুক্তিকরণের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণ, যেক্ষেত্রে কমপক্ষে সাত বছর এদেশে থাকতে হবে। আর দ্বিতীয় সুযোগ, স্বাভাবিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নাগরিকত্ব, যার জন্য ন্যুনতম ১২ বছর বসবাস করতে হবে ভারতে।

    এই সংশোধনী প্রস্তাবের যে খসড়া তৈরি করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, তাতে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক ইতিমধ্যেই সায় জানিয়েছে। এই নীতি, বলাই বাহুল্য, শুধু অাসাম বা উত্তর পূর্ব ভারতের অন্যত্র নয়, উত্তর পশ্চিম ভারতের বেশ কিছু অংশেও ধর্মীয় কারণে উদ্বাস্তুদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

    পাসপোর্ট আইনের সংশোধনী প্রস্তাবটি সংসদে উপস্থাপিত হওয়ার পর বিতর্কের জন্য খোলা থাকবে দুমাস। আর পরিবর্তিত নাগরিকত্ব আইন উপস্থাপিত হবে বিলের চেহারাতেই।

  54. মাসুদ করিম - ১১ আগস্ট ২০১৫ (১২:৪১ অপরাহ্ণ)

    Taslima Nasrin given $20,000 on March 4 from FFRF’s Atheists in Foxholes Support Fund

    June 2, 2015

    The Freedom From Religion Foundation wired $20,000 to Taslima Nasrin on March 4, in rapid response to her appeal to the freethought and humanist community for help after her friend, Avitji Roy, was brutally hacked to death on the streets of Bangladesh and his wife was severely injured. After Roy’s death, two other atheist bloggers have since been killed on the streets of Bangladesh, including one who had championed Nasrin.

    Nasrin, a physician, novelist, poet and freethought/feminist writer, was the target of an Islamic terrorist organization in Bangladesh.

    “I vividly remember Taslima Nasrin telling an international atheist conference in Germany three years ago that she was ‘ woman without a country.’ She told us the freethought community was her country,” said Annie Laurie Gaylor, FFRF co-president.

    “Our community will need to be prepared to give emergency help as we increasingly see atheists and critics of religion persecuted, imprisoned and slaughtered,” Gaylor proposed at last weekend’s 2015 International Atheist Conference in Cologne, Germany, in publicly announcing the grant on May 24.

    “Already this year we’ve seen unprecedented attacks against atheists and critics of religion worldwide,” noted Dan Barker, FFRF co-president. “Taslima Nasrin is targeted for death. There are at least 13 nations where you can technically be put to death for espousing atheism.”

    Nasrin was FFRF’s 2002 Freethought Heroine. The Bengali author and physician has been subject to a series of fatwas, or religious sanctions, condemning her to death in 1994 for blasphemy. She had sought refuge in other countries, most recently living in India, but subject to increasing threats there.

    The Freedom From Religion Foundation, based in Madison, Wis., a 501(c)(3) nonprofit educational charity, is the nation’s largest association of freethinkers (atheists, agnostics), and has been working since 1978 to keep religion and government separate.

  55. মাসুদ করিম - ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ (১:২০ অপরাহ্ণ)

  56. মাসুদ করিম - ১৭ অক্টোবর ২০১৫ (১:৪৯ অপরাহ্ণ)

    ভারতীয় লেখকদের ‘দুমুখো’ বললেন তসলিমা

    লেখক হত্যা ও হিন্দু জঙ্গিবাদের সাম্প্রতিক উত্থানে অনেক ভারতীয় লেখক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিলেও তাদের সমালোচনা করতে ছাড়েননি তসলিমা নাসরিন।

    বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাংলাদেশি এই লেখক টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় লেখকদের ‘দু-মুখো’ বলেছেন।

    কট্টরপন্থি মুসলিমরা যখন পশ্চিমবঙ্গে তার উপর চড়াও হচ্ছিল, তখন এ লেখকদের সমর্থন না পেয়ে ক্ষোভ তসলিমার।

    “যখন মুসলমান জঙ্গিরা আমার বিরুদ্ধে ৫টি ফতোয়া জারি করে, যখন আমাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছুড়ে ফেলা হয়, যখন দিল্লিতে গৃহবন্দি থাকি, যখন আমার মেগা-সিরিয়াল নিষিদ্ধ করা হয়, তখন এদের অনেকেই চুপ ছিলেন।”

    “সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শঙ্খ ঘোষের মতো বিখ্যাত লেখকরা আবেদন করে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দিয়ে আমার বই নিষিদ্ধও ‌করিয়েছিলেন।”

    ধর্মীয় জঙ্গিবাদ নিয়ে ভারতীয় লেখকদের অবস্থানের সমালোচনা করে তসলিমা বলেন, “দু-মুখো’ এ লেখকরা হিন্দু জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিলেও মুসলমান জঙ্গিদের নির্মম অপরাধগুলোকে ‘সমর্থন’ জানায়।

    দাদরি হত্যাকাণ্ড ও হিন্দু জঙ্গিবাদী দলগুলোর উগ্র তৎপরতার প্রতিবাদে ভারতে সাহিত্য একাডেমিসহ রাজ্য সরকারের দেওয়া নানা পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন অনেক লেখক।

    দুই দশক আগে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর ভারতে ঠিকানা নেন তসলিমা। ক্রমাগত জঙ্গি হুমকির মুখে তিনি এ বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।

    ভারতকে এখনও পাকিস্তান ও বাংলাদেশের চেয়ে অধিক ‘সংবেদনশীল রাষ্ট্র’ মনে করেন এই লেখক।

    ভারতে নির্যাতিত মুসলিমদের পাশের দেশগুলোতে স্বেচ্ছা নির্বাসনেও যাওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

    “মুসলমানরা যদি ভারতে নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে তারা পাশের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে চলে যেতে পারে; যেভাবে বাংলাদেশ আর পাকিস্তান থেকে হিন্দুরা চলে যায়।”

  57. মাসুদ করিম - ১৮ অক্টোবর ২০১৫ (৪:২৭ অপরাহ্ণ)

  58. মাসুদ করিম - ১ নভেম্বর ২০১৫ (১০:০৯ পূর্বাহ্ণ)

  59. মাসুদ করিম - ২৮ মার্চ ২০১৬ (১০:৩১ অপরাহ্ণ)

    SC dismisses plea against Bangladeshi author Taslima Nasreen

    The Supreme Court on Monday refused to entertain a plea seeking deportation of controversial Bangladeshi author Taslima Nasreen and cancellation of her visa given by the Indian government.

    “Do you think that we do not have any other work to do”, a bench comprising Chief Justice T.S. Thakur and Justice U.U. Lalit said while dismissing an appeal filed by an NGO against a Delhi High Court order on the case.

    The bench was hearing the appeal filed by NGO ‘All India Human Rights and Social Justice Front’ seeking cancellation of Nasreen’s visa alleging that she has been violating the Foreigners Order of 1948 and the Foreigners Act of 1946 by airing her views on every issue without prior permission.

    Nafis Ahmad Siddiqui, lawyer and President of the NGO, said Nasreen, who is living in exile since 1994, has been making controversial statements, besides doing professional work here.

    The authorities are granting Nasreen the visa for a period beyond 180 days which is not permissible, he claimed.

    Earlier, the High Court had dismissed the PIL of the NGO on the issue saying there was no public interest in the matter. The appeal was filed in the apex court.

  60. মাসুদ করিম - ২১ আগস্ট ২০১৭ (৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ)

    বাঙালি হিপোক্রিট পুরুষ-লেখকদের চরিত্র — ১

    বাঙালি পুরুষ-লেখকদের মধ্যে ভয়ংকর পুরুষতান্ত্রিক, ভয়ংকর নারীবিদ্বেষী, দুশ্চরিত্র, দু’নম্বর লোকের অভাব নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি ক’জনকে জানি, যাঁরা মানুষ হিসেবে অতি নিম্নমানের। তাঁরা ঈর্ষাকাতর, মিথ্যেবাদী। পুরুষ-লেখক বলেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তাঁদের নিন্দে করার কেউ নেই। এঁদের দোষগুলোকে অবশ্য সমাজের বেশিরভাগ পুরুষের চোখে দোষ বলে মনে হয় না। কারণ ‘সেক্সিজম’ এ দেশে দোষের কিছু নয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, হুমায়ুন আজাদ,আহমদ ছফা, সৈয়দ শামসুল হকরা বিনা সমালোচনায় জনপ্রিয়তা ভোগ করতে পারেন বাংলায়, বাংলা বলেই সম্ভব। সভ্য দেশ হলে সম্ভব হতো না। তাঁদের জীবনাচরণের অসততা নিয়ে প্রশ্ন উঠতো। আজ নাস্তিক লেখক স্যাম হ্যারিসের সেক্সিজম নিয়ে নিন্দে হচ্ছে, নাস্তিকরাই নিন্দে করছেন। শুধু স্যাম হ্যারিস নয়, প্রচণ্ড জনপ্রিয় নাস্তিক-বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্সের কিছু নারীবিরোধী উক্তির কারণে তাঁকে নাস্তানাবুদ করেছেন নাস্তিক-নারীবাদীরা। ডকিন্স নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু বাংলার পুরুষ-লেখকদের ভুল সংশোধনের সুযোগ দেওয়া তো দূরের কথা, ভুল ধরিয়ে দেওয়ার কাজটিতেও নির্বোধ স্তাবকদের আপত্তি। যেহেতু ভালো একটি বই লিখেছেন, সুতরাং তাঁর সাত খুন মাফ—নাস্তিক বাঙালির এই আবেগের সঙ্গে ধর্মান্ধ বাঙালির আবেগের কোনও পার্থক্য নেই।

    সম্প্রতি বিডিনিউজ২৪ ডটকম কবি নির্মলেন্দু গুণের একটা সাক্ষাতকার ছাপিয়েছে। ওতে আমার বিরুদ্ধে একগাদা মিথ্যে কথা বলেছেন নির্মলেন্দু গুণ। সম্ভবত ‘স্বাধীনতা পদক’ পাওয়ার জন্য কিছুকাল আগে তাঁর মরিয়া হয়ে ওঠার সমালোচনা করেছিলাম বলে শোধ নিয়েছেন। আমি লিখেছিলাম – ‘শুনলাম কবি নির্মলেন্দু গুণ নাকি স্বাধীনতার পদক পাওয়ার জন্য ক্ষেপেছেন। অনেক তো পুরস্কার পেলেন। আরো পেতে হবে? কী হয় এসব পুরস্কারে? কিছু লোকের হাততালি পাওয়া যায় আর সম্ভবত কিছু টাকা পাওয়া যায়। টাকা তো সেদিনও শেখ হাসিনা দিয়েছেন তাঁকে। হয়তো তিনি মনে করেছেন স্বাধীনতা পদক পাওয়ার যোগ্য তিনি, তাই পদক দাবি করছেন। কত কেউ তো কত কিছুর যোগ্য। সবারই কি সব কিছু পাওয়া হয়? গ্রাহাম গ্রীন যে অত বড় লেখক, নোবেল তো পাননি।

    তাতে কী? গ্রাহাম গ্রীন গ্রাহাম গ্রীনই থেকে যাবেন। নোবেল বরং আফশোস করে যাবে বাকি জীবন। আমি তো বাংলাদেশের মানুষের ভালোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, দেশ-সমাজ-পরিবার-স্বজন হারিয়ে, ঘর বাড়ি বিষয় আশয় বিসর্জন দিয়ে প্রায় তিন যুগ হলো লিখছি, আমি তো অপমান আর লাঞ্ছনা ছাড়া ও দেশ থেকে কিছু পাইনি! পুরস্কার? প্রশ্নই ওঠে না। পুরস্কার পাইনি বলে তো একটুও রাগ বা দুঃখ হয় না আমার! নির্মলেন্দু গুণ বাংলাদেশের কবি-লেখকদের মধ্যে, আমি মনে করি, খুবই ভাগ্যবান। খুব কম লেখকই জীবদ্দশায় তাঁর মতো সমাদৃত এবং সম্মানিত হয়েছেন। খুব কম লেখকই এত লোকপ্রিয়তা পেয়েছেন। মানুষ তাঁর লেখা পড়তে ভালোবাসে। এটিই কি একজন লেখকের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার নয়? সবচেয়ে দামি পদক নয়?’

    আমার ওই লেখাটায় শ্লেষ ছিল না, শত্রুতা ছিল না, ছিল ভিন্ন মত, ছিল কিছু সত্য উচ্চারণ। কিন্তু এই সত্য তিনি সইতে পারেন নি। তাঁর সঙ্গে একসময় আমার সখ্য ছিল খুব। তাঁর পারিবারিক বন্ধু ছিলাম বটে। তাঁর দুর্দিনে সত্যিকার শুভাকাংক্ষীর মতো পাশে ছিলাম। চেনা পরিচিতদের বলে কয়ে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থাও করেছিলাম। হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, খবর শুনে তাঁর বাড়িতে ছুটে যেতাম, দেখে আসতাম তিনি ঠিক আছেন কিনা। নিজের দাদারা দূরে ছিল, গুণকেই দাদার মতো শ্রদ্ধা করতাম। তাঁর পক্ষ নিয়ে কবিতা লিখেছি, উপন্যাসে তাঁর কথা উল্লেখ করেছি। একসময় তিনি তাঁর কন্যাকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কত যে অনুরোধ করেছি সিদ্ধান্তটি বাতিল করার জন্য! কারণ ভয় পেয়েছিলাম, কন্যার সঙ্গে ঘন ঘন সাক্ষাৎ না হলে তিনি মনোকষ্টে ভুগবেন। চেয়েছিলাম কন্যা কাছাকাছি থাকুক, তিনি আনন্দে থাকুন। দেশে থাকাকালীন গুণ এবং শামসুর রাহমানই ছিলেন আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ । আমার বাড়িতে তাঁদের যাতায়াত ছিল অবাধ। সুখে দুঃখে পাশে ছিলেন ওঁরাই। যাদের জন্য জীবন দিই, লক্ষ্য করেছি, তারাই একসময় শত্রু হয়ে ওঠে। দেশ থেকে চব্বিশ বছর আগে বিতাড়িত হওয়ার পর নির্মলেন্দু গুণকে বন্ধুসুলভ কিছু করতে না দেখলেও খুব বিষোদগার করতে দেখিনি। যে গৃহকর্মী নিয়ে প্রায় তিন যুগ বাস করছেন তাঁর কথা আমার আত্মজীবনীতে ঘটনাপ্রসঙ্গে উল্লেখ করায় তিনি ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন সে জানি। কিন্তু হঠাৎ তাঁর সাক্ষাৎকারটিতে আমার সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই যে ঘৃণা আর অসহিষ্ণুতা উগড়ে দিলেন, তা কেন? দেরিতে হলেও তিনি কি তাহলে মুখোশ উন্মোচন করলেন? বাংলাদেশের হিপোক্রিট পুরুষ-লেখকদের কাতারে তিনিও কি তবে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন? তিনি বলেছেন, হাসিনার কাছে যাওয়ার প্রস্তাব তিনি আমাকে দেননি, আমি খুব অনুরোধ করেছিলাম বলে তিনি অনুগ্রহ করে আমাকে নিয়ে গিয়েছেন, তা না হলে তিনি নিয়ে যেতেন না। ভালোই হলো আসল কথা ফাঁস করেছেন এতদিনে। আমি কিনা ওদিকে ভেবে নিয়েছিলাম তিনি বিরাট দরদী মানুষ; সহমর্মিতার কারণেই তিনি আমার বদলির সমস্যা দূর করতে নিজেই এগিয়ে এসেছিলেন। নিজেই ভেবেছিলেন হাসিনার কাছে আমাকে একবার নেওয়া দরকার, হাসিনাকে বলে যদি বদলিটা ফেরানো যায়, শুভাকাঙ্খী হলে মানুষ যা করে। তাহলে তিনি আমার শুভাকাঙ্খী ছিলেন না, আমিই ভুল করে তাঁকে শুভাকাঙ্খী ভাবতাম! তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি তসলিমাকে পছন্দ করেন না, তসলিমার লেখাও কখনও পড়েন না, পড়ার ইচ্ছেও তাঁর নেই। চমৎকার। দেশে থাকাকালীন অবশ্য এমন নেতিবাচক কথা তিনি কখনও বলেননি আমাকে। নাকি তসলিমার বিরুদ্ধে বললে এখন কিছুটা সুবিধে হবে বলে বলছেন? তসলিমার অসংখ্য নিন্দুকদের আদর পাবেন বলে বলছেন? কী জানি, নিজের সুবিধে হবে এমন জানলে হয়তো তিনি আমি কেন, তাঁর যে কোনও বন্ধুকে ত্যাগ করতে দ্বিধা করবেন না। গুণ অপ্রিয় সত্য কথা বলেন, তাঁর সম্পর্কে এমন মন্তব্য আমি দ্বিখন্ডিত বইয়ে করেছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে অবশ্য আমার চক্ষু খুলেছে। লক্ষ করেছি, আমাকে এই যে দেশ থেকে অন্যায়ভাবে তাড়ানো হয়েছে, কোনওদিন তিনি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেননি। তাঁর বন্ধু বান্ধবরাই বহুদিন ক্ষমতায়, কিন্তু কোনওদিন কাউকে অনুরোধ করেননি দেশে ঢুকতে আমাকে যেন ওঁরা বাধা না দেন। হাসিনার সঙ্গে একবার নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন, শুনেছি আমার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে কোনও এক বন্ধুর কাছে প্রকাশ করেছিলেন, তারপর সেই ইচ্ছেটা নিজেই আবার বাতিল করেছেন। মানুষটার রস-রসিকতা আমার অসম্ভব ভালো লাগতো, এখনও লাগে, এখনও ওই কারণে আমি তাঁর ভক্ত, কিন্তু এইরকম রসিক মানুষ যে ভীষণ স্বার্থপর হতে পারেন, তা আগে না বুঝলেও পরে বুঝেছি। তিনি বস্তিতে থাকেন বলে, ধনদৌলতের প্রতি তাঁর লোভ নেই বলে তাঁর প্রতি আমার অপরিসীম শ্রদ্ধা ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখেছি কী ধরণের কাপুরুষ তিনি, কী ধরণের ভীতু। শাহবাগ আন্দোলনে যোগ দেননি। একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি যখন একের পর এক দেশ জুড়ে ব্লগার হত্যা চলেছে। একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি, যখন বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে, মানুষের মত প্রকাশের বিরুদ্ধে অন্য লেখকদের ওপর নির্যাতন চলেছে। গুলশান ক্যাফের ঘটনা নিয়েও একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি যখন হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, জমিজমা দখল করা হয়েছে, দেশ ছেড়ে যেতে হিন্দুদের বাধ্য করা হয়েছে। মানবতা ধর্ষিত হচ্ছে, মনুষ্যত্ব বিলুপ্ত হচ্ছে দেখেও নির্বিকার ছিলেন। এমন সুবিধেবাদী চরিত্রও কী চমৎকার জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেন! শুধু কি লেখার গুণে? নাকি অন্য ছল-কৌশলও যথেষ্ট প্রয়োগ করেন! এত বয়স হয়ে গেলেও যাঁরা প্রচন্ড ঝুঁকিহীন জীবন যাপন করতে চান, মুখে কুলুপ এঁটে বাঁচতে চান, ক্ষমতার সঙ্গে আপোস করতে কোনও দ্বিধা করেন না — তাঁরা মানুষের আদলে কতটুকু অমানুষ জানতে ইচ্ছে করে। আত্মম্ভরী মানুষটি জেনেছেন সমাজে আদরণীয় হতে হলে তসলিমা-বিরোধী হতে হবে। তসলিমার বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অন্যায় ঘটলেও একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যাবে না, করলেই জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে পারে! বরং তসলিমাকে অবজ্ঞা করলে, তসলিমার কুৎসা রটালে, তাকে ঘৃণা করলে জনপ্রিয়তা বাড়তে পারে। গুণের হিসেবটা, আমার আশংকা হয়, হয়তো এমনই কুৎসিত। আমার সঙ্গে কি তিনি ফরহাদ মজহারের মৌলবাদি চরিত্র নিয়ে কথা বলেননি এককালে? আজ আমাকে আর মজহারকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে অসৎ বলছেন। কী আশ্চর্য হঠকারিতা!

    বাংলাদেশে আমার দ্বিখন্ডিত বা ক প্রকাশ হওয়ার পর চরিত্রহীন পুরুষ-লেখকদের আস্ফালন দেখেছি। একটি পুরুষ-লেখককেও দেখিনি বাকস্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াতে। সৈয়দ শামসুল হক ময়মনসিংহে আমার কাছে গিয়ে গিয়ে তাঁর শালি এবং কচি কচি মেয়েদের সঙ্গে তাঁর প্রেম কতটা গভীর এবং শারীরিক তার গল্প শোনাতেন। এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের গল্প আরেক মেয়েকে শুনিয়ে হয়তো যৌনানন্দ পেতেন। আর আমি যখন সে কথা আমার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করলাম, নির্লজ্জ লোকটি আমাকে মিথ্যুক বললেন। সত্য কথা বললে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। বিচারে আমি দোষী সাব্যস্ত হই। তাঁরা, চরিত্রহীনেরা, অত্যন্ত সহজে জিতে যান। আসলে তাঁরা জেতেন না, তাঁদের পুরুষাঙ্গ জেতে। সমাজ তো পুরুষাঙ্গ-পূজারি। এই সমাজ হিপোক্রিট পুরুষদের গলায় মালার পর মালা পরিয়ে ধন্য হয়। রাষ্ট্র ধন্য হয় তাঁদের চিকিৎসার খরচ বহন করে। লেখক হয়ে অন্য লেখকের মত প্রকাশের অধিকারে বাধা দিতে তাঁদের সামান্য সংকোচও হয় না। আমার ক বইটি সৈয়দ শামসুল হক আদালতে গিয়ে নিজের লোকবল খাটিয়ে নিষিদ্ধ করেছেন। বইটি আজও নিষিদ্ধ। তাঁর মৃত্যুর পরও নিষিদ্ধ। আমার বই নিষিদ্ধ হওয়ার পক্ষে যে লোকগুলো, যে হিপোক্রিটগুলো—তাঁরাই মত প্রকাশের অধিকারের পক্ষে টেলিভিশনের টক-শোতে গিয়ে বাহারি সব কথা বলে আসেন। লোকে বেজায় শব্দ করে হাততালি দেয়।

    আমাকে ‘চরিত্রহীন’ আখ্যা দিয়ে হুমায়ুন আজাদ, এক চরিত্রহীন পুরুষ-লেখক, কী যৌনানন্দই না পেয়েছেন জীবনে! অসভ্য, অসৎ এবং দুশ্চরিত্র লোকেরা মেয়েদের অশ্লীল গালিগালাজ করে নিজেরা সৎ সাজার চেষ্টা করেন। নারীবিদ্বেষী হুমায়ুন আজাদ বিভিন্ন বই থেকে টুকে নারী নামের বই লিখেছেন, রাতারাতি জনপ্রিয় হওয়ার ইচ্ছেয়। তাঁর ধারণা নারীর পক্ষে লিখে আমার জনপ্রিয়তা হয়েছে; সুতরাং এই জনপ্রিয়তা তাঁর যে করেই হোক চাই। টুকে লেখা ‘গবেষণা গ্রন্থ’টি থেকে নাকি আমি টুকেছি – এমন একটা অপবাদও তিনি দিয়েছেন। হিপোক্রেসির চূড়ান্ত। তাঁর ‘গবেষণা গ্রন্থ’ নিয়ে একটা গবেষণা হলেই সব সত্য বেরিয়ে আসবে। বেরিয়ে আসবে যে আমার নারীবাদী লেখাগুলো জাতীয় পত্রিকাগুলোয় বেরিয়েছে ৮৬ সাল থেকে, ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয়েছে আমার নির্বাচিত কলাম। আর, হুমায়ুন আজাদের নারী বইটি বেরিয়েছে ১৯৯২ সালে, যে বছর আমি আমার নির্বাচিত কলাম-এর জন্য আনন্দ পুরস্কার পাই। আমার নারীবাদী লেখাগুলো যে তাঁর গবেষণা গ্রন্থের আগে লেখা, এবং টোকাটুকির কাজ যে আসলে তিনিই করেছেন তা নিয়ে গবেষণা করার লোক কোথায়? মুশকিল হলো, এই গবেষণা করার ইচ্ছে কারওর নেই, কারণ সবারই স্বভাব হলো, পুরুষলোক যা বলে তা বিশ্বাস করা। পুরুষলোককে জ্ঞানী ভাবার, বুদ্ধিমান এবং বুদ্ধিজীবী ভাবার প্রবণতা আমাদের সমাজে ভয়ংকর। নির্মলেন্দু গুণ একবার তাঁর একটি আত্মস্মৃতিতে লিখেছিলেন, হুমায়ুন আজাদ তসলিমার নারীবাদি কলাম পড়েই নারী লেখা শুরু করেছিলেন। এই কথা এখন হয়তো চেপে যাবেন গুণ। হুমায়ুন আজাদের মুরিদেরা তাদের নারীবিদ্বেষী প্রভুকে ‘নারীবাদী’ খেতাব দিয়েছে! যে-লোক শামসুর রাহমান কোনও একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান করেছেন বলে বলেছিলেন, ‘শামসুর রাহমানকে একটি অভিনেত্রীর সাথে টিভিতে দেখা গেছে। শামসুর রাহমান বোঝেন না কার সঙ্গে পর্দায়, আর কার সঙ্গে শয্যায় যেতে হয়’, যে-লোক নারীদের অত্যন্ত জঘন্য ভাষায় অপমান করেছেন, তাঁকে নারীবাদী খেতাব যারা দেয়, তারা জানে না নারীবাদের সঠিক অর্থ কী।

    কুৎসা রটানোর প্রতিভা হুমায়ুন আজাদের সাংঘাতিক। একবার লিখলেন, ‘আমি ক বইটি পড়ার উপযুক্ত মনে করিনি বলেই পড়ি নি। এই বইয়ে আমাকেও নানারকম গালাগালি করা হয়েছে, মিথ্যা কথা লেখা হয়েছে। কিন্তু আমার সম্পর্কে কোন যৌনতার অভিযোগ আনতে পারেনি। কারণ আমি কখনই তসলিমার ডাকে সাড়া দিইনি। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ক’ বইটি সম্পর্কে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় পড়ে আমার মনে হয়েছে, এটি একটি পতিতার নগ্ন আত্মকথন অথবা নিকৃষ্টতম জীবের কূরুচিপূর্ন বর্ণনা।’ — আমার সম্পর্কে মিথ্যে উচ্চারণে হুমায়ুন আজাদের কোন অসুবিধে হয় না। নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামী অধ্যাপক তিনি, বলে ফেললেন ‘তসলিমার ডাকে আমি সাড়া দিইনি’! যেন আমি তাঁকে ডেকেছিলাম কোনওদিন! একজন ডাক্তার, তার ওপর জনপ্রিয় লেখক, বিভিন্ন দেশ থেকে সাহিত্য পুরস্কারসহ প্রচুর মানবাধিকার পুরস্কার পাওয়া প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন নারীর আত্মজীবনীকে তিনি বলে দিলেন, ‘পতিতার নগ্ন আত্মকথন এবং নিকৃষ্টতম জীবনের কূরুচিপূর্ন বর্ণনা।’ প্রচণ্ড নারী-ঘৃণাকারী বদমাশও কোন নারী সম্পর্কে না জেনে না বুঝে এই মন্তব্য করতো না।

    হুমায়ুন আজাদের একটি প্রবচনে দেখেছি লেখা, ‘এখানে কোনো কিছু সম্পর্কে কিছু লেখাকে মনে করা হয় গভীর শ্রদ্ধার প্রকাশ। গাধা সম্পর্কে আমি একটি বই লিখেছি, অনেকে মনে করেন আমি গাধার প্রতি যারপরনাই শ্রদ্ধাশীল। গরু সম্পর্কে আমি একটি বই লিখেছি, অনেকে মনে করেন গরুর প্রতি আমি প্রকাশ করেছি আমার অশেষ শ্রদ্ধা। নারী সম্পর্কে আমি একটি বই লিখেছি। একটি পার্টটাইম পতিতা, যার তিনবার হাতছানিতেও আমি সাড়া দিই নি, অভিযোগ করেছেন, নারী সম্পর্কে বই লেখার কোনো অধিকার আমার নেই, যেহেতু আমি পতিতাদের শ্রদ্ধা করি না, অর্থাৎ তাদের হাতছানিতে সাড়া দিই না’।

    কত ভয়ঙ্কর নারীবিদ্বেষীর উচ্চারণ এসব! কাউকে দেখিনি তাঁর নারীবিদ্বেষী আচরণের প্রতিবাদ করতে। আমি একাই প্রতিবাদ করেছি। আমি একাই দাঁড়িয়েছি স্রোতের বিপরীতে। দুশ্চরিত্র পুরুষ-লেখকদের মুখোশ আমি একাই খুলতে চেষ্টা করেছি, আর এ কারণে আমাকে প্রতিদিন ছিঁড়ে খেতে আসে একশ হায়েনা।

    আরও একজনের কথা না বললেই নয়। কবি হেলাল হাফিজের ফেসবুক পোস্টে প্রায়ই দেখি মেয়েদের কাঁধে বা হাতে হাত রেখে ছবি তুলছেন তিনি। টিভিতে বা মঞ্চে তাঁর ছবি, তাঁর বহু পুরোনো কবিতার অংশ এবং নতুন নতুন মেয়েদের সঙ্গে তাঁর নতুন নতুন ফটো –– মূলত এসবই তিনি পোস্ট করেন। প্রায় প্রতিটি মেয়েকে উদ্দেশ্য করে তিনি প্রেম আওড়ান। ওদের নিজের ‘প্রেমিকা’ বলে দাবি করেন। অগুনতি মেয়ের সঙ্গে তাঁর প্রেমের কাহিনীও তিনি বর্ণনা করেন টেলিভিশনে, পত্র-পত্রিকায়। এক সময় টাকার বিনিময়ে ধনী মহিলাদের সঙ্গে যৌন-সম্পর্ক করতেন, তাও বলেছেন। তার পরও তাঁর আকাশ-ছোঁয়া জনপ্রিয়তা এতটুকু ম্লান হয়নি। যদি কোনও নারী-কবি এই কাজটি করতেন? তাঁকে নিশ্চিতই রেহাই দিত না এই সমাজ। তাঁকে ‘বেশ্যা’ তো বলতোই, হয়তো ঘর থেকে টেনে বের করে তাঁকে কুপিয়ে মেরে ফেলতো। একই কাজ করে পুরুষ-লেখক পায় সম্মান, নারী-লেখকের জোটে চরম অসম্মান।

    ফেসবুকের উইমেন চ্যাপ্টার ব্লগে কিছু নারী আজকাল নারীবাদি লেখা লিখছেন, এদের বিরুদ্ধেও পুরুষেরা ছুঁড়ে দিচ্ছে ঘৃণা। আমি না হয় আশির দশক থেকে একা সয়েছি পুরুষতান্ত্রিক অপমান! একা প্রতিবাদ করেছি। এখন অনেক মেয়ে প্রতিবাদ করছে। দেখে ভালো লাগে প্রচুর মেয়ে এখন গর্জে উঠছে। সাহিত্যের জগত নারীবিদ্বেষী পুরুষেরা দখল করে আছে, এই হিপোক্রিটদের কবল থেকে সাহিত্যের জগতকে বাঁচাতে হলে সৎ এবং সাহসী নারীবাদি লেখকের প্রয়োজন।

  61. মাসুদ করিম - ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ (৮:২৮ অপরাহ্ণ)

    যেমন প্রশ্নকর্তা তেমন উত্তরদাতা। সীমাবদ্ধতা বেড়েই চলেছে তসলিমার, নিজেকে নিয়ে তার সীমাবদ্ধতায় নারীবাদ অপহৃত হচ্ছে, এটাই সবচেয়ে বেশি দুঃখের, তসলিমা নির্বাসনে যত না কষ্টের তসলিমার অপহৃত নারীবাদও ততটাই কষ্টের।

  62. মাসুদ করিম - ২৪ মে ২০১৮ (১:৩৮ পূর্বাহ্ণ)

  63. মাসুদ করিম - ২৯ এপ্রিল ২০১৯ (৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ)

    Islamism spreading like virus in secular Bangladesh, pushing youth to hate, kill non-Muslims

    A country that had been built upon the promise of secularism has now closely and fatally embraced religion.

    I heard someone say that a river of blood flowed in Sri Lanka last Sunday. But why this carnage? Why so much hate?

    In the middle ages there used to be religious wars, like the Crusades, where people of one religion would slaughter those of another. We like to believe that we have now become more civilised and that in our civilised societies all faiths and creeds coexist in excellent harmony. But we are denying the truth if we deny the fact that religious wars are still going on around us.

    Muslims are killing Christians, Christians are killing Muslims and Jews, Buddhists are slaughtering Muslims, Muslims are killing Hindus, who in turn are killing Muslims. No matter how much we would like to believe that we have risen above religion, that our identity as human beings is all that matters, the reality is different.

    One’s religious identity is still paramount.

    Even now one’s racial, caste and gender identities take precedence over everything else. In New Zealand, the white supremacist Christian terrorist was fully aware that he was killing Muslims. In turn, Muslim terrorists have deliberately targeted Christians in Sri Lanka by bombing the churches and the hotels where Easter celebration was taking place.

    Now, ISIS has claimed responsibility for the Sri Lanka attacks. It is not easy for a small minority organisation of a small country to train several people as suicide bombers and carry out a series of coordinated bombings to kill hundreds of people. Although there have been previous instances where the ISIS has issued false claims this time it might not be so.

    The Indian government had sent three warnings to Sri Lanka informing them about the imminent attack on the churches. But despite the warnings, the Sri Lankan government had not taken adequate measures. Had they taken heed they would have perhaps not let Easter celebrations take place in any of those churches and the hotels too would have been put under strict surveillance. The President of Sri Lanka, Maithripala Sirisena, said that he had not been aware of the intelligence inputs and that he would have taken the necessary steps if he knew. Perhaps India should have made more of an effort to explain to Sri Lanka the severity of the matter and ensured that they take adequate and urgent precautions to safeguard the security of their citizens.

    If the bomb blasts in Sri Lanka were in retaliation to the mass shooting in the New Zealand mosque, then some Christian terrorist somewhere will avenge Sri Lanka by murdering more Muslims – this cycle of violence and murder has no end, it can go on for eternity.

    The radicalisation of Bangladesh
    But I fear the most for Bangladesh. The way people have been brainwashed in the past few decades is incredible. Once there had been space for differences of opinion in the country. People could, very naturally and without any fear, perhaps even with a bit of pride, claim that they did not believe in religion. Today if one says they are atheist, they will have to apologise and recant or risk being killed.

    A country that had been built upon the promise of secularism has now closely and fatally embraced religion. Religion is spreading like a virus and the practice of waz –Islamic lectures and teachings – can be heard echoing from every locality. In the name of religion, the youth are being brainwashed and inexorably trained into hating women and non-Muslims.

    Those who do not believe in religion are being incarcerated by the government and extremists while the ones who are spreading hate, envy, misogyny and terrorism in the name of religion are revered. They cannot be touched, their actions cannot be critiqued. There was talk sometime back to control the waz of certain leaders but who has the grit and determination to interfere in such matters? With their silent encouragement, the government and the common people, both blinded by religion, have made these local huzurs or religious teachers so very powerful that they now do whatever they want with impunity. They know full well that the government will bow down to them as it has done before. Thanks to them a large number of the youth are now religious, some doggedly so, and are the future Nibras Islam, Rohan Imtiaz or Mir Sami Mubashir (the Dhaka cafe terrorists) in the making. Any day now explosions will perhaps rock Bangladesh.

    The factory producing terrorists no longer need the cover of night to operate. In broad daylight, scores of people, all blinded by religion, are being incited to hate and murder non-Muslims because it will bring them good fortune and pave the way for their ascent to paradise.

    What if one day these people, like the terrorists of Sri Lanka, decided to attack churches, temples or the places of worship of the Shias, Bahais and Ahmadiyas? What if these people one day cause another heinous incident like the one at Dhaka’s Holey Artisan Café in 2016? What if they bomb the hotels? I’m sure they will; the way terrorist activities are on the rise it will be surprising if they don’t. Numerous ISIS agents have been killed, but their ideology lives on and it’s making the rounds of the entire globe.

    Which country has managed to progress by simply building temples and mosques or by remaining immersed in religious dogma? There is not a single example. Rather, whatever we recognise as the ideals of a civilised and developed nation, the kind of places where people of all religions wish to move to and settle, all such countries have managed to separate religion from state, education and society, perhaps almost even from life. Despite not being blinded by religion, how are they so kind and generous? Truth be told religion has very little, if anything at all, to do with love and respect. If there is anything it has any business with then that is politics.

    ‘I will kill even if I have to die in the process’ – many Muslims don’t turn back from becoming suicide bombers. There is no dearth of such Muslims in Bangladesh. Several Bangladeshis have travelled to Iraq and Syria to join ISIS, knowing full well that they will perhaps get killed by enemies. They consider such a death glorious and the fault lies in their beliefs. How these beliefs have come to be, what has helped in nurturing them, I doubt anyone has concerned themselves with finding the answers to these questions.

    Is the government doing anything to address the issue? Only killing terrorists in so-called encounters does not solve anything. It is the responsibility of the government to keep potential threats under surveillance. This too is a sort of a warning. The way Sri Lanka had ignored the warnings it had received, if Bangladesh too makes the same mistake then the outcome of it will perhaps be as tragic as the former. Not once, but time and time again.

  64. মাসুদ করিম - ১১ আগস্ট ২০১৯ (৩:৫৩ অপরাহ্ণ)

  65. মাসুদ করিম - ২৪ জুন ২০২০ (৪:৫৭ অপরাহ্ণ)

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.