কই মাছের প্রাণ : এরশাদের গোপন ডায়েরি

আমি ছিলাম বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অংশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান প্রতিনিধি। তাই আমার রসিকতা ও আমার ক্ষমতা দুয়ে মিলে আমি হয়েছি – বিশ্ববেহায়া।[...]

আমাকে নিয়ে আমার এই রসিকতায় মনে হয় না কেউ খুব একটা আশ্চর্য হবে। সারাজীবন তো নিজেকে নিয়ে রসিকতাই করে গেছি, সেরসিকতা দেশ ও জনগণের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। কিন্তু আমি ছিলাম বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অংশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান প্রতিনিধি। তাই আমার রসিকতা ও আমার ক্ষমতা দুয়ে মিলে আমি হয়েছি – বিশ্ববেহায়া। এখন আমার ক্ষমতা নেই, তাই আমার এখনকার রসিকতা আর দেশ ও জনগণের ক্ষতি করে না। আমার নিজের কই মাছের প্রাণটা আমি উপভোগ করি – এই যে গুরুতর অসুস্থতা থেকেও এই আশি বছর বয়সেও ফিরে এলাম – এ তো উপভোগ করার মতোই ঘটনা। মুজিব মরল, জিয়া মরল – কিন্তু আমি বেঁচে আছি, এরশাদ বেঁচে আছে। এই শব্দটাও আমাকে খুব মানায় – ঠ্যাঁটা, শঠতার চূড়ান্তে পৌঁছতে চেয়েছি আমি – পৌঁছেছি দাবী করব না – কিন্তু বাংলার সেরা শঠদের সেরা সারিতে থাকব, এতে কোনো সন্দেহ নেই আমার। আমার ও রওশনের সন্তান ছিল না, সন্তান দত্তক নিয়েছিলাম, কিন্তু সন্তানসম্ভবা বলে রওশনকে হাসপাতালে ভর্তি করালাম, তার বাচ্চা হল, আমরা বাবা-মা হলাম। সারাদেশকে জোর করে আনন্দে ভাসানো হল, ঘনিষ্ঠরা শুধু জানে, রওশন ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ সম্ভবত রাতারাতি সন্তানসম্ভবা ও সন্তানের মা হয়নি। ১৯৭১ সালে আমি পাকিস্তান আর্মিতে নিশ্চিন্তে কাজ করে গেছি, ছুটি নিয়ে বাবা-মাকে দেখেও গেছি, আর কোনো কিছুর সঙ্গে নিজেকে জড়াইনি, এতো উদাসীন ছিলাম, কোনো কিছুই স্পর্শ করত না, আজো করে না, তাই হয়তো বেঁচে আছি। জিয়ার জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি ছিল তিনি বাংলা ভাষাটাই ঠিক মতো জানতেন না। দেশের প্রেসিডেন্ট দেশের ভাষা না জানলে জিন্নার মতো এক বছর চলে যায়, কিন্তু বছরের পর বছর চলা যায় না, আর তাই জিয়া আমাকে আবিষ্কার করলেন – আর আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গুণটাকে আমি, বাংলা ভাষাজ্ঞানের দিকটাকে আমি জিয়ার সেবায় বিলিয়ে দিলাম – দিনে রাতে জিয়ার ড্রাফট লিখতে লিখতে আমার মনে হয়েছিল, আরেকজনের ড্রাফট লেখার জন্য আমার জন্ম হয়নি – এগিয়ে গেলাম – জিয়া মারা গেলেন – আমার কী কপাল! – তারপর তো কত লোক আমার কবিতাগান লেখার জন্য লাইন দিল। রসিকতা আর শঠতা কাকে বলে! একটা কথা না বললে খুব অন্যায় হবে, ইসলামের সাথে আর কেউ রসিকতা ও শঠতা করেছিল কি না আমার জানা নেই – কিন্তু আমি করেছিলাম – চূড়ান্ত অনৈতিক জীবনযাপন ও রগরগে ভোগবিলাসের মধ্যে থেকেও আমি রাষ্ট্রধর্মে ইসলামকে অভিষিক্ত করেছিলাম, শুক্রবারের ছুটি এনেছিলাম, পীরের লালসা নিয়ে মোনাজাতে মোনাজাতে চারিদিক আকুল করে তুলেছিলাম। ছিলাম পেশাদার মুসলমান, আমার সাথে প্রতিযোগিতা হতে পারে জামাতিদের, একটা রিয়েলিটি শো হলে দেখা যেত – কে হারে, কে জেতে – তবে এই যে আমরা পেশাদার মুসলমানেরা, আমাদের সবার বাবা ‘কায়দে আজম’ জিন্না – ভাগ্য ভাল তার কই মাছের প্রাণ ছিল না, থাকলে হয়তো আমাকে আর ‘বিশ্ববেহায়া’ হতে হত না।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৩২ comments

  1. kamruzzaman Jahangir - ২৫ এপ্রিল ২০১০ (৯:৩৬ অপরাহ্ণ)

    বড়োই মজাদার, চটকদার লেখা।
    এটি হোমো এরশাদকে পড়ানো যায় না?
    আশা করি বিদিশা-মেরিনা ইত্যাদি জনকে নিয়ে এর দ্বিতীয় চ্যাপ্টার সহসাই আমরা পাঠ করতে পারব।

  2. শেখ কবিরুল হাসান - ২৬ এপ্রিল ২০১০ (১১:০৫ পূর্বাহ্ণ)

    সকালের নাস্তার সমমান মনে হলো।ধন্যবাদ মাসুদ করিম ভাই।

  3. এশার - ১৬ মে ২০১০ (৮:০০ অপরাহ্ণ)

    আপনার পুরো লেখার সাথে একমত হলেও শেষ লাইন্দুটোতে একমত হতে পারছি না।
    আমার মনে হয় জিন্নাহ এর সাথে এরশাদের তুলনাটা বেশী হয়ে গেছে।
    জিন্নাহ একজন অবিশ্বাসী ছিলেন তা জীবদ্দশায় অস্বীকার করে গেছেন বলে মনে হয়না।
    ৪৭ এর ঘটনাগুলোকে কোট করতে চাইলে বলতে পারি আমি মনে করি পুরো ব্যাপারটিই ছিলো রাজনীতিক।
    জিন্নাহ নিজেও যথেষ্ট প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ছিলেন।
    একজন একনায়ক এবং রাজনীতিবিদ তাদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের কারনেই এক কাতারে পড়েন না কখনো।

  4. মাসুদ করিম - ২২ জুলাই ২০১৩ (১১:৩৬ অপরাহ্ণ)

  5. Pingback: হন্যতে : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গোপন ডায়েরি | মাসুদ করিম

  6. মাসুদ করিম - ২ ডিসেম্বর ২০১৩ (১২:২৭ পূর্বাহ্ণ)

    এরশাদ তো এরশাদই, কিন্তু তাকে ‘কুইনম্যাকার’ বলে তাহমিমা আনাম হলেন সেক্সিস্ট।

  7. মাসুদ করিম - ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ (১২:২৩ অপরাহ্ণ)

  8. মাসুদ করিম - ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ (১২:৩৪ অপরাহ্ণ)

  9. মাসুদ করিম - ৫ ডিসেম্বর ২০১৩ (৮:৪২ পূর্বাহ্ণ)

  10. মাসুদ করিম - ৫ ডিসেম্বর ২০১৩ (১০:০২ পূর্বাহ্ণ)

  11. মাসুদ করিম - ১১ জানুয়ারি ২০১৪ (৫:০৭ অপরাহ্ণ)

  12. মাসুদ করিম - ১৫ জানুয়ারি ২০১৪ (৬:১৯ অপরাহ্ণ)

    প্রধানমন্ত্রীকে এরশাদের ধন্যবাদ

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসাবে নিয়োগ পেয়ে চিঠি দিয়ে তাকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

    তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন ওই চিঠিতে।
    প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মঙ্গলবার বিকালে এরশাদের ওই চিঠি তাদের হাতে আসে।

    “চিঠিতে এরশাদ সাহেব নতুন সরকার গঠন করায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আর তাকে (এরশাদ) প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন।”

    রোববার মন্ত্রিসভার শপথের পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

    গত ৫ জানুয়ারি বিএনপিবিহীন নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। আর এবারের সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কয়েকজন সদস্য মন্ত্রিসভাতেও ঠাঁই পেয়েছেন।

    এরশাদের স্ত্রী সাবেক ফার্স্টলেডি রওশন এরশাদ দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এক সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন বলে এরশাদ বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসতে চাননি।

    গত ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার শপথের পরপরই দপ্তর বণ্টন ও প্রধানমন্ত্রীর চার উপদেষ্টাকে নিয়োগ দেয়া হয়।

    ওইদিনই নিয়োগ পান এরশাদ, তার পদ হয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।

    বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘ধোঁয়াশাময় চরিত্র’ হিসাবে পরিচিত এরশাদ ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।
    কিন্তু আইনের মারপ্যাঁচে সেই প্রত্যাহারপত্র গৃহিত না হওয়ায় রংপুর-৩ আসন থেকে ভোটে জিতে যান আশির দশকে নয় বছর দেশ শাসন করা এরশাদ।

    গত ১২ ডিসেম্বর র্যর‌্যাবের পাহারায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। এরপর গত ১১ জানুয়ারি সবাইকে এড়িয়ে অনেকটা চুপিসারে সংসদ ভবনে উপস্থিত হয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে শপথ নেন এরশাদ।

    তিনি সেদিন বলেন, “রংপুরের মানুষ ভোট দিয়েছে। আসতে হলো।”

    মঙ্গলবার সকালে রওশন এরশাদের বাসায় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠক বসে, তবে এরশাদ তাতে উপস্থিত ছিলেন না।

  13. মাসুদ করিম - ১৭ মে ২০১৪ (৯:০৫ অপরাহ্ণ)

  14. মাসুদ করিম - ১৯ আগস্ট ২০১৪ (৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ)

  15. মাসুদ করিম - ২ অক্টোবর ২০১৪ (৯:১২ পূর্বাহ্ণ)

    এরশাদ ও ইসলাম নিয়ে একটি ছোট্ট পোস্ট

    তেঁতুল ভাল যার সব ভাল তার

  16. মাসুদ করিম - ৯ ডিসেম্বর ২০১৪ (৫:৫০ অপরাহ্ণ)

    নূর হোসেনের জন্য এরশাদের ‘কান্না’

    যার পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন নূর হোসেন, সেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকায় নূর হোসেনের নামে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ না থাকায় ‘খেদ’ প্রকাশ করলেন।

    সোমবার বনানীতে এক অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেন, “নূর হোসেনকে নিয়ে কতজন কত কথা বলে, অথচ তার জন্য একটি স্মৃতিসৌধ কিংবা মন্যুমেন্ট কেউ তৈরি করেনি।

    ঢাকার রাজপথ যেখানে নূর হোসেনের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল- সেই জিরো পয়েন্টের স্থাপনাটিও নিজের তৈরি করা বলে দাবি করেন সাবেক এই স্বৈরশাসক।

    তিনি বলেন, “সেখানে একটা স্মৃতিস্তম্ভ কি তৈরি করা যেত না?”

    ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে রাজধানীর ‘জিরো পয়েন্টে’ পুলিশের গুলিতে নিহত হন যুবলীগকর্মী নূর হোসেন।

    এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সেই দিনে বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’- স্লোগান লিখে মিছিলে শামিল হয়েছিলেন তিনি।

    নূর হোসেন ছাড়াও সেই আন্দোলনে যুবলীগ নেতা নূরুল হুদা বাবুল এবং কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা টিটো পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

    তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। তারপর থেকে প্রতিবছর ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে। আর জিরো পয়েন্টের নামকরণ হয়েছে নূর হোসেন চত্বর।

    এরশাদের দাবি, অন্য রাজনৈতিক দলগুলো নূর হোসেনের পরিবারের খোঁজ না রাখলেও তিনি রেখেছেন।

    “নূর হোসেন মারা গেল, সবাই তাকে স্মরণ করে। কিন্তু তার পরিবারের খোঁজ খবর কি কেউ রেখেছে? আমি রেখেছি। জেল থেকে বের হওয়ার পরই আমি খুঁজে খুঁজে তার বাসা বের করেছি। তার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করেছি, সান্ত্বনা দিয়েছি। প্রতি মাসে আমি নূর হোসেনের বাবাকে পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছি।”

    কেবল নূর হোসেন নয়, সেই আন্দোলনের সময় পুলিশের গাড়ি চাপা পড়ে নিহত দেলোয়ারের বাড়িতেও গিয়েছেন বলে দাবি করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

    “সবাই আমাকে বলেছিল- স্যার আপনি যাবেন না। আপনাকে দেখলে মানুষ উত্তপ্ত হয়ে যেতে পারে, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি কারো কথা শুনিনি।

    “দেলোয়ারের বাড়িতে গিয়ে তার মা কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলাম- মা তোমার এক ছেলে মারা গেছে, আরেক ছেলে আছে। তোমার দায়িত্ব আমি নিলাম।”

    দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে থাকা এরশাদ বলেন, এখন ‘প্রতিদিনই’ নূর হোসেন মারা যায়। প্রতিদিনই ‘শোক দিবস’।

    বক্তৃতার এ পর্যায়ে কণ্ঠে হাহাকার মিশিয়ে এরশাদ বলেন, “গত ২৪ বছরে শুধু হানাহানি, প্রতিহিংসা, হত্যা-খুনের রাজনীতি দেখেছে এই জাতি। আমাকে স্বৈরাচার বলা হত, কিন্তু আমি শুধু মানুষকে ভালবাসতে চেয়েছি। মানুষকে ভালোবাসি বলেই কখনো সন্ত্রাসের রাজনীতি করিনি। আমার দুঃখ হয় আজ মানুষের জন্য মানুষের মনে প্রেম নেই, ভালবাসা নেই।

    “আমি ভালো কাপড় পরলে দোষ, কবিতা লিখলে দোষ। আমি যখন মিলিটারিতে ছিলাম তখনো কবিতা লিখতাম, ডায়রি লিখতাম।”

  17. মাসুদ করিম - ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ (৮:৫৩ অপরাহ্ণ)

  18. মাসুদ করিম - ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ (১২:০২ পূর্বাহ্ণ)

  19. মাসুদ করিম - ৩০ জুন ২০১৫ (৯:১৫ অপরাহ্ণ)

    মন্তব্য এরশাদের, দুঃখ প্রকাশ রওশনের!

    নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পিকার ও উপনেতাকে ‘শো-পিস’ বলায় গতকাল জাতীয় সংসদে প্রতিবাদের মুখে পড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। এ সময় কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠে অধিবেশন কক্ষ। সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি নিয়ে এরশাদ দুঃখ প্রকাশ করলেও তার এই অসংসদীয় বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করে দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
    পরে এরশাদের এমন বক্তব্যের জন্য সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন বিরোধীদলীয় নেতা ও এরশাদপত্নী রওশন এরশাদ। রওশন বলেন, হয়তো তার (এরশাদ) ওই শব্দচয়নটি সঠিক ছিল না। এজন্য সবার কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
    গতকাল সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনাকালে এরশাদ নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘দেশের অনেকেই নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে প্রশংসা করেন। কিন্তু বাস্তবে তা কি ঠিক? শহীদ মিনারে, পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নারীরা যেতে পারেন না, নিগৃহীত হন। আমরা কথায় কথায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পিকার ও সংসদের উপনেতা নারীর কথা উদাহরণ দেই। কিন্তু আসলে তারা তো শো-পিস। দেশের বাস্তব অবস্থা ভিন্ন।’ এ কথা বলার পরপরই সরকারি দলের নারী সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ আসন থেকে দাঁড়িয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
    হৈচৈ, উচ্চস্বরে চিত্কার করে ‘শো-পিস’ শব্দটি ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানাতে থাকেন। সংসদে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীও প্রতিবাদ জানিয়ে মাথা নাড়াতে থাকেন। তীব্র প্রতিবাদের মুখে এরশাদ বলেন, আমার কথায় কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত। আমি ওই শব্দটি প্রত্যাহার করে নিলাম।
    এরশাদের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এরশাদের বক্তব্যের মধ্যে থাকা সব অসংসদীয় শব্দগুলো এক্সপাঞ্জ করে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরশাদ যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন তার পাশেই ছিলেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে তিনি বক্তব্য দিতে উঠে এরশাদের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
    তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতির বক্তব্য সংসদে প্রধানমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও অন্যান্য সদস্য বোনেরা মনে কষ্ট পেয়েছেন। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। তার হয়তো শব্দচয়ন ঠিক ছিল না। এ সময় তার পাসে বসা এরশাদ মুচকি হাসতে থাকেন এবং সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর দিকে হাত উঁচিয়ে রওশনের বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। উপস্থিত সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে এজন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে অভিনন্দন জানান।
    এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে এইচএম এরশাদ প্রাদেশিক সরকারের দাবি জানিয়ে বলেন, রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় অকার্যকর শহর। যানজটে লাখ লাখ লিটার জ্বালানি পুড়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন ঢাকাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ঢাকাকে বাইরে নিতে হলে প্রাদেশিক সরকার গঠন করতে হবে। সাত বিভাগে সাতটি হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন করুন, দেশের মানুষ বিচার পাবে।

    • মাসুদ করিম - ৬ জুলাই ২০১৫ (১১:৪৫ অপরাহ্ণ)

      রওশনের বক্তব্য ‘এক্সপাঞ্জের’ অনুরোধ এরশাদের

      তার কথার জন্য স্ত্রী রওশন এরশাদের দুঃখ প্রকাশ করে দেওয়া বক্তব্য সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিতে স্পিকারকে অনুরোধ করেছেন এইচ এম এরশাদ।

      এক সপ্তাহ আগের ঘটনাটির প্রসঙ্গ তুলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান সোমবার সংসদে বলেছেন, ভুল করলে ক্ষমা চাইলে তিনি চাইবেন। এর এখতিয়ার আর কারও নেই।

      নাটকীয়ভাবে দশম সংসদ নির্বাচনে এসে রওশন বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর দলে কর্তৃত্ব নিয়ে দুজনের মধ্যে রেশারেশির খবর চাউর হলেও দুজনই তা অস্বীকার করে আসছেন।

      এর মধ্যে এক সপ্তাহ আগে সংসদ অধিবেশনে বক্তব্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ নারী সংসদ সদস্যদের ‘শো পিস’ বলার পর রওশন দাঁড়িয়ে সেই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চান। স্পিকারও এরশাদের বক্তব্য কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেন।

      ওই প্রসঙ্গ তুলে সোমবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় দাঁড়িয়ে এরশাদ বলেন, “এখানে সবাই সংসদ সদস্য, সবাই সমমর্যাদার।

      “আমার ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ার এখতিয়ার শুধু আমার, অন্য কারও নেই।”

      দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের ক্ষমা চাওয়া ‘এখতিয়ার বহির্ভূত’ বলেও মন্তব্য করেন এরশাদ।

      “আমি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর আপনি আমার বক্তব্য বাদ দিয়েছেন। আমার বক্তব্য নিয়ে অন্য একজন সদস্যের ক্ষমা চাওয়ার বক্তব্যও বাদ দেওয়ার অনুরোধ করছি।”

      তবে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের এই অনুরোধ নিয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী কোনো কথা বলেননি।

      এসময় বিরোধীদলীয় নেতা রওশন অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না।

      আগের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় এরশাদ বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে সেদিন কথা বলেছিলেন তিনি। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যদের বঞ্চিত থাকার কথা বলেছিলেন তিনি।

      “সংসদে বৈষম্য থাকবে, তা হতে পারে না। সংসদেও সবাই সমান বরাদ্দ পায় না। আমরা এখান থেকেই সমান সুবিধা দেওয়ার যাত্রা শুরু করি। সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যদেরকেও সমান বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ করছি।”

      এরশাদের এই বক্তব্যের সময় জাতীয় পার্টির কয়েকজন সংসদ সদস্য টেবিল চাপড়ে তাকে সমর্থন জানান।

      তবে অধিবেশন কক্ষে এসময় হাসির রোল পড়ে। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর মুখেও মুচকি হাসি দেখা যায়।

  20. মাসুদ করিম - ৩০ জুলাই ২০১৫ (১১:৩০ অপরাহ্ণ)

    কই মাছের প্রাণকে পুরস্কার

    টিকে থাকার পুরস্কার পাচ্ছেন এরশাদ

    সামরিক শাসক থেকে রাষ্ট্রপতি, গণআন্দোলনে পতনের পরেও কারাবন্দি অবস্থায় ভোটে জয়ী হয়ে সাংসদ, পরবর্তীতে দেশের ক্ষমতাসীন জোটের দ্বিতীয় শীর্ষ দলের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এই টিকে থাকা নজর কেড়েছে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার।

    আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘উই কেয়ার ফর হিউম্যানিটি’ এ বছর তাদের গ্লোবাল অফিসিয়ালস অব ডিগনিটি (গড) অ্যাওয়ার্ডস-এর জন্য বিভিন্ন দেশের ২৪ জনের সঙ্গে এরশাদকে বেছে নিয়েছে।

    লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অন ইউনিভার্সাল কারেজ অ্যান্ড হিরোইজম ক্যাটাগরিতে এবার এরশাদকে দেওয়া হচ্ছে এ সম্মাননা।

    আগামী ৫ থেকে ৭ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে এ সম্মাননা দেওয়া হবে।

    যুক্তরাষ্ট্রের লসএঞ্জেলেসভিত্তিক সংস্থাটির অনুষ্ঠানটি হবে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে। এটি হবে গড আওয়ার্ডস এর তৃতীয় আসর।

    জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই পুরস্কার নিতে আগামী ২ অগাস্ট নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে তার রাজনৈতিক ও প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায় জানিয়েছেন।

    তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শেষে আগামী ৭ অগাস্ট দেশে ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে দলের চেয়ারম্যানের।

    “আমরা আগেই শুনেছিলাম, স্যার পুরস্কার পাচ্ছেন। কনফার্ম হওয়ার জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করেছি। জাতীয় পার্টি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। স্যারের পুরস্কার তারই স্বীকৃতি।”

    অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে প্রায় এক দশক শাসনের পর ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনে পতন ঘটেছিল এরশাদের। এই সামরিক একনায়ককে হটানোর আন্দোলনে নিহত হয়েছিলেন অনেকে।

    ক্ষমতা হারানোর পর বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়ে কয়েক বছর কারাগারে ছিলেন এরশাদ। এরপর বেরিয়ে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও এখনও কয়েকটি মামলা বিচারাধীন।

    তালিকায় এরশাদ ছাড়াও ‘নেপাল হিউম্যানিটেরিয়ন অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে সাবেক বলিউড তারকা মনীষা কৈরালা, ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অন ফ্রিডম, জাস্টিস অ্যান্ড পিস’ এ জাম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কেনেথ কুন্ডা, ‘এশিয়াস ডিগনিটি ম্যান অফ দ্য ইয়ার’ এ নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খিল রাজ রেগমি, ‘সুপ্রিম স্পিরিচুয়াল আইকন অফ পিস’ এ ভারতের যোগগুরু রবি শংকরসহ বিভিন্ন দেশের ২৫ জন এ বছর এই পুরস্কার পাচ্ছেন।

    কূটনীতি, ব্যবসা, সেবা, অর্থনীতি, চিকিৎসা, শিল্প ও সংস্কৃতি এবং বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মানবাধিকার, বিশ্ব শান্তি, নিরাপদ পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন এবং ক্ষমতায়নে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারীদের এ সম্মাননা দেওয়া হয় বলে গড আওয়ার্ডস-এর আয়োজকরা জানিয়েছেন।

    এই পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ‘উই কেয়ার ফর হিউম্যানিটি’র বিভিন্ন প্রকল্পের তহবিলের একটি বড় অংশ সংগ্রহ করা হয় বলে জানান তারা।

    এবারের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের তিন দিনের জন্য মাথাপিছু দুই হাজার ডলার করে দিতে হবে। আর শুধু পুরস্কার বিতরণের দিন উপস্থিত হলে দিতে হবে এক হাজার ডলার করে।

    এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে এ পুরস্কারকে ‘জাতিসংঘের পুরস্কার’ বলা হলেও জাতিসংঘ মহাসচিবের সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সঙ্গে জাতিসংঘের কোনো সম্পর্ক নেই। ত্রিনিদাদ মিশন এ আয়োজনে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে।

    মহাসচিব বান-কি মুনকে পুরস্কার বিতরণের জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি থাকছেন কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেনি সচিবালয়। তবে ৭ অগাস্ট সন্ধ্যায় মহাসচিব নিউ ইয়র্কে থাকলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেন বলে কর্মকর্তারা বলেছেন।

    জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এ কে এ মোমেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আমিও অংশ নিতে পারব না। কারণ, এক হাজার ডলার ফি প্রদানের অনুমতি এখনও পাইনি।”

    • মাসুদ করিম - ৪ আগস্ট ২০১৫ (১০:৩৮ অপরাহ্ণ)

      ভেস্তে গেল এরশাদকে পুরস্কার দেওয়ার সেই অনুষ্ঠান

      নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদসহ ২৫ জনকে বিভিন্ন কারণে পুরস্কৃত করার উদ্যোগটি ভেস্তে যেতে বসেছে আয়োজক কমিটির কো-চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগের কারণে।

      ভিয়েতনাম আপত্তি তোলায় জাতিসংঘ সদরদপ্তর ওই অনুষ্ঠানের জন্য জায়গা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। নতুন কোনো তারিখ বা স্থানের কথাও আয়োজকরা মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদের ওয়েবসাইটে জানায়নি।

      ‘উই কেয়ার ফর হিউম্যানিটি’ নামে লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক এক ‘আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা’ তাদের তৃতীয় ‘গ্লোবাল অফিসিয়ালস অফ ডিগনিটি (গড)’ পুরস্কারের জন্য এবার এরশাদের নামও ঘোষণা করেছিল। ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অন ইউনিভার্সাল কারেজ অ্যান্ড হিরোইজম’ ক্যাটাগরিতে এ সম্মাননা দিতে চেয়েছিল তারা।

      ‘নেপাল হিউম্যানিটেরিয়ন অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে সাবেক বলিউড তারকা মনীষা কৈরালা, ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অন ফ্রিডম, জাস্টিস অ্যান্ড পিস’ এ জাম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কেনেথ কুন্ডা, ‘এশিয়াস ডিগনিটি ম্যান অফ দ্য ইয়ার’ এ নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খিল রাজ রেগমি, ‘সুপ্রিম স্পিরিচুয়াল আইকন অফ পিস’ এ ভারতের যোগগুরু রবি শংকরের নামও এই তালিকায় ছিল।

      অবশ্য ‘শারীরিক অসুস্থতার’ কারণে এরশাদ পুরস্কার নিতে নিউ ইয়র্কে আসছেন না বলে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সোমবারই জানিয়ে দেওয়া হয়।

      আগামী ৫ থেকে ৭ অগাস্ট নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই পুরস্কার বিতরণ এবং মানবাধিকার সম্মেলনের আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছিল ‘উই কেয়ার ফর হিউম্যানিটি’। আর ওই অনুষ্ঠানের জন্য ‘যৌথ আয়োজক’ হিসেবে জাতিসংঘ দপ্তরে মিলনায়তনের বুকিং দিয়েছিল ত্রিনিদাদ ও টোবাগো মিশন।

      কিন্তু ওই অনুষ্ঠানের একটি আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর জাতিসংঘে ভিয়েতনাম মিশন আপত্তি তোলে। তারা জাতিসংঘকে জানায়, ‘গড’ পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের জন্য গঠিত কমিটির কো-চেয়ারম্যান নিগুয়েন হু চ্যানের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে হুলিয়া রয়েছে।

      এরপর জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে উই কেয়ার হিউম্যানিটিকে ‘না’ বলে দেওয়া হয়। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো মিশনও এ আয়োজন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।

      যার বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের অভিযোগ, সেই নিগুয়েন হু ‘উই কেয়ার ফর হিউম্যানিটির’র ইমিরেটাস উপদেষ্টা এবং বোর্ড সদস্য পদেও রয়েছেন।

      এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতিসংঘ মহাসচিবের কার্যালয় থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলা হয়, সন্ত্রাসী হিসাবে হুলিয়া জারি হয়েছে এমন কোনো ব্যক্তির নেতৃত্বে কোনো অনুষ্ঠান সদর দপ্তরে করতে দেওয়া হবে না।

      ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো মিশনের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভিয়েতনাম মিশন বিষয়টি জানানোর পর তারাও আর ওই এনজিওকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন না।

      ‘গড’ পুরস্কারের জন্য এরশাদের নাম আসায় ভিয়েতনাম মিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ডুই থান নিগুয়েন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে এ মোমেনকেও চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন।

      ওই চিঠিতে বলা হয়, “পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের কাছে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষরকারী নিগুয়েন হু চ্যান ভিয়েতনামে একজন সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত। তিনি এবং তার তথাকথিত সংগঠন ‘গভার্নমেন্ট অব ফ্রি ভিয়েতনাম’ নিজ দেশে বেশকয়েকটি বোমা হামলার পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে ভিয়েতনাম দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনায় জড়িত।”

      ‘গড অ্যাওয়ার্ডের’ জন্য এরশাদের মনোনীত হওয়ার বিষয়টি গত ৩০ জুলাই গণমাধ্যমকে জানান তার রাজনৈতিক ও প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায়।

      তবে ৩ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাজী আব্দুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দু এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শারীরিক অসুস্থতার’ জন্যে নিউ ইয়র্কে আসার পরিকল্পনা এরশাদ বাতিল করেছেন।

      সামরিক শাসক থেকে রাষ্ট্রপতি, গণআন্দোলনে পতনের পরেও কারাবন্দি অবস্থায় ভোটে জয়ী হয়ে সাংসদ, পরবর্তীতে দেশের ক্ষমতাসীন জোটের দ্বিতীয় শীর্ষ দলের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত- এরশাদের এই টিকে থাকাই নজর কেড়েছিল ‘উই কেয়ার ফর হিউম্যানিটির’।

      অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে প্রায় এক দশক শাসনের পর ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনে পতন ঘটেছিল এরশাদের। এই সামরিক একনায়ককে হটানোর আন্দোলনে নিহত হয়েছিলেন অনেকে।

      ক্ষমতা হারানোর পর বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়ে কয়েক বছর কারাগারে ছিলেন এরশাদ। এরপর বেরিয়ে এসে নানা বিতর্ক, আলোচনা, সমালোচনার মধ্যে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে এখনও কয়েকটি মামলা বিচারাধীন।

  21. মাসুদ করিম - ২৩ আগস্ট ২০১৫ (৪:২৫ অপরাহ্ণ)

  22. মাসুদ করিম - ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ (৭:৩৮ অপরাহ্ণ)

    ‘মৃত্যু পর্যন্ত’ অটল থাকবেন এরশাদ

    নতুন কো চেয়ারম্যান নিয়োগ ও মহাসচিব পরিবর্তন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে বিদ্রোহের মুখে চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, তিনি সিদ্ধান্ত থেকে সরবেন না।

    মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠকের পর জাতীয় সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার সিদ্ধান্ত অটুট থাকবে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি অটল থাকব।”

    গত রোববার নিজের জেলা রংপুরে সংবাদ সম্মেলন করে ভাই জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান ও উত্তরসূরি ঘোষণা করেন এরশাদ।

    এরপর সোমবার রাতে ঢাকায় পার্টির সাংসদ ও সভাপতিমণ্ডলীর নেতাদের একাংশের ‘যৌথ সভা’ থেকে এরশাদের সিদ্ধান্তকে ‘গঠনতন্ত্রবহির্ভূত’ ঘোষণা হয়। এরশাদের স্ত্রী বিরোধী দলীয় নেতা রওশনকে দলের ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন’ করা হয়েছে বলে জানান পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

    জাতীয় পার্টিতে নতুন করে ভাঙনের গুঞ্জনের মধ্যেই রংপুর সফর সংক্ষিপ্ত করে ঢাকায় ফেরেন এরশাদ। মঙ্গলবার দুপুরে নিজের কার্যালয়ে এক ‘জরুরি’ সংবাদ সম্মেলনে বাবলুকে সরিয়ে দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করার ঘোষণা দেন তিনি।

    ভাঙনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “দেয়ার ইজ নো সঙ্কট ইন জাতীয় পার্টি। আমি যতক্ষণ বেঁচে আছি ততক্ষণ কোনো সঙ্কট নোই। নো ওয়ান কুড ব্রেক ইট।”

    এর দুই ঘণ্টার মাথায় জাতীয় সংসদ ভবনে বিরোধী দলীয় নেতা রওশনের সভাপতিত্বে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের এই বৈঠক বসে, যাতে এরশাদও উপস্থিত ছিলেন।

    ওই বৈঠক শেষে জিয়াউদ্দিন বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুল হক চুন্নুকে নিয়ে বেরিয়ে এসে বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, পার্টির সংসদীয় দল চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে।

    “জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান ঘোষণা, মহাসচিব পদে নতুন একজনকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিতে পারিনি। এটা পরিবর্তন করতে হবে।”

    এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রেসিডিয়াম ও সংসদীয় দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান তাজুল।

    “দলকে রক্ষা করতে হলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য বলেছি আমরা। কো-চেয়ারম্যান ও নতুন মহাসচিবের বিষয়গুলো আমরা মেনে নিইনি; প্রত্যাখ্যান করেছি। এ বিষয়ে সংসদীয় দলের বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

    অবশ্য বিকালে এরশাদের সঙ্গে সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সামনে এসে সুর সামান্য পাল্টে ফেলেন তাজুল।

    পার্টি চেয়ারম্যান কথা বলার আগেই তাজুল বলতে শুরু করেন, “আমরা স্যারের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই। তবে প্রত্যাখ্যান করেছি- এ কথা বলিনি।

    “স্যারের উপর আমরা দায়িত্ব দিয়েছি, ম্যাডামের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে।”

    এরপর তাজুল পিছিয়ে গেলে এরশাদ এগিয়ে আসেন। সাংবাদিকরা জানতে চান, তিনি সিদ্ধান্ত বদলাবেন কিনা।

    এক বাক্যে অটল থাকার কথা জানিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান এরশাদ।

  23. মাসুদ করিম - ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ (১০:১৪ অপরাহ্ণ)

  24. মাসুদ করিম - ২০ নভেম্বর ২০১৮ (২:৩৬ অপরাহ্ণ)

    চারিদিক থেকে শুনছি ‘এরশাদ কোথায়’

    একবার একটা যাত্রা দেখছিলাম গ্রামে, সংলাপটি প্রম্পট করা হচ্ছিল – রাজা রাজা রানীমা কোথায়, মঞ্চের চরিত্রের মুখ থেকে আমরা শুনছিলাম – রাজা রাজা রানীমা কোঁতায়, আমার পাশের দর্শকটি চিৎকার করে উঠলেন – রানীমাকে শৌচালয়ে গিয়ে দ্বার বন্ধ করে কর্ম সম্পন্ন করতে বল… যাও… যাও…

    পাশে স্বচ্ছ ভারত, সেখানে মিনিটে মিনিটে বিজ্ঞাপনে বলে, দরজা বন্ধ করলে রোগ ছড়াবে না, পারলে জোর করে শৌচালয়ে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিন, পুরুষের শক্তিতে সাহসে না কুলালে নারীশক্তিকে কাজে লাগান।

    এসব ক্ষেত্রে গুরুজনেরা বলেন ইশারাই নাকি কাফি, শৌচালয়ে হুমুএ কর্ম সম্পন্ন করছেন গর্জি গর্জি বর্ষি বর্ষি।

  25. মাসুদ করিম - ৭ ডিসেম্বর ২০১৮ (৮:২৬ অপরাহ্ণ)

    এরশাদের সমস্যা বয়সের, বললেন ভাই কাদের

    জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার চিকিৎসায় ‘বাধা ’আসার অভিযোগ করলেও তার ভাই দলের কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন ভিন্ন কথা।

    জি এম কাদের বলছেন, ৮৮ বছর বয়সে ‘যতটা’ সুস্থ থাকার কথা, ‘ততটা’ সুস্থ এরশাদ আছেন। তার চিকিৎসা নিয়ে ‘ধূম্রজালের’ কোনো সুযোগ নেই।

    আর মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, এরশাদ বড় রকমের অসুস্থ- এটা মনে করার মত কিছু ঘটেনি।তার বিদেশে যাওয়ার বিষয়েও কোনো বাধা নেই।

    নির্বাচন সামনে রেখে পার্টির মনোনয়নপ্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়ার পর গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রকাশ্যে খুব একটা দেখা যাচ্ছিল না এরশাদকে। তার অসুস্থতার বিষয়ে জাতীয় পার্টির এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দেওয়া হচ্ছিল সাংবাদিকদের।

    এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ করেই বনানীতে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে এসে গাড়িতে বসে নেতাকর্মীদের সামনে কয়েক মিনিট কথা বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

    এরশাদ বলেন, “আজ বলতে এসেছি, আমাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না, এগিয়ে যাব। আমার বয়স হয়েছে, চিকিৎসা করতে দেবে না; বাইরে যেতে দেবে না। মৃত্যুকে ভয় করি না।”

    ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ভর্তি থাকা অবস্থাতেই তিনি এমপি নির্বাচিত হন এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পান।

    একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এরশাদের ফের সিএমএইচে ভর্তির খবরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন চলছিল। তার মধ্যেই এরশাদের ওই বিস্ফোরক বক্তব্য নতুন আলোচনার জন্ম দেয়।

    বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় পার্টির বনানীর কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন তার ভাই জিএম কাদের।

    তিনি বলেন, “এরশাদ সাহেব একজন বয়স্ক রাজনীতিবিদ, উনার বয়স হয়েছে। এই বয়সে স্বাভাবিক কারণেই শারীরিক অনেক সমস্যা দেখা যায়। উনারও সমস্যা হচ্ছে।”

    কাদের বলেন, চিকিৎসকরা এরশাদকে যতটুকু ‘দৌঁড়ঝাঁপ’ করার অনুমতি দিয়েছেন, তিনি তার চেয়ে বেশি করেন। এটা তার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

    “ডাক্তাররা উনাকে বিধিনিষেধ দেন- ‘এখানে যেতে পারবেন, ওখানে যেতে পারবেন না। বসে থাকতে হবে, ঘুমাতে হবে।’… এমন বাধা তো আমরা অসুস্থ হলে আমাদের দিতেন চিকিৎসকরা।”

    পরমুহূর্তেই কাদের বলেন, “তবে তার চিকিৎসায় বাধা আছে বা তিনি ভীষণ খারাপ অবস্থার মধ্যে আছেন, তাও কিন্তু নয়। তবে উনি যে সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন, তাও নয়।”

    এক প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য এরশাদের সিঙ্গাপুর যাওয়া নিয়ে দল ‘উৎকণ্ঠিত নয়’।

    “ডাক্তাররা যদি বলেন, এখানে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে, তাহলে কেন তাকে নিয়ে যাব? তবে তারা যদি মনে করেন, এখানকার চিকিৎসা যথেষ্ট নয়, উনাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে হবে; তখন নিয়ে যাওয়া হবে। এটা নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠিত নই।”

    এরশাদের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান বলেন, “তিনি যতটুকু সুস্থ থাকার কথা, ততটুকু আছেন। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ এটা বলা বোধ হয় ঠিক হবে না।”

    শারীরিক অবস্থা যাই হোক, এরশাদ দলীয় সব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত আছেন এবং তার নির্দেশনায়, তার নিয়ন্ত্রণেই জাতীয় পার্টি চলছে বলে মন্তব্য করেন জি এম কাদের।

    এরশাদ ঠিক কী ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন জানতে চাইলে খানিকটা বিরক্ত হয়েই তার ভাই বলেন, “অসুখের ব্যাপার হল পারসোনাল ব্যাপার। অসুখের ইনফরমেশন দিতে আমি বাধ্য নই। এটা আমি দেব না। এটা কোনো হসপিটালে চাইলেও পাবেন না।”

    নির্বাচনের আগে এরশাদের বিদেশে যাওয়া নিয়ে সরকারের দিক থেকে কোনো নিষেধ আছে কি না- এ প্রশ্নও জি এম কাদেরে কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা।

    জবাবে তিনি বলেন, “কদিন আগে দলে বড় রদবদল হয়েছে (মহাসচিব পরিবর্তন)। তিনি দল পরিচালনা করছেন। তিনি কন্ট্রোলে আছেন। এটার (নিষেধ) কোনো কারণ নেই।

    “এটা নিয়ে আমি মনে করি, কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। বিধি নিষেধ যদি থাকত, তাহলে দলের রদবদল তো হল, সেটা আর সম্ভব হত না।”

    কাদেরের ভাষায় এ ধরনের একটি কথা গতবার ‘রটেছিল’। এ কারণে এবারও তেমন আশঙ্কার কথা কেউ কেউ বলছেন।

    এরশাদের চিকিৎসায় বাধার অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, “এটা মনে করার কারণ নাই যে তিনি বড় ধরনের অসুস্থতার মধ্যে রয়েছেন। উনি যখনই মনে করেন যে অসুস্থতাজনিত কারণে তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে হবে, আমরা যাব। সেটা নিয়ে কোনো বাধা নাই।”

    রাঙ্গাঁর দাবি, মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির পরই এরশাদ সিঙ্গাপুরে যেতে চান।

    “নমিনেশন পেপার উইথড্র করার সময় শেষ হচ্ছে ৯ তারিখে। আমরাই উনাকে বলছি, স্যার ৯ তারিখের পরে যান। অসুবিধার তো তেমন কিছু নাই। পার্টির প্রধান দেশের বাইরে থাকলে আমাদেরও তো খারাপ লাগে।”

    পার্টির অফিসের সামনে গাড়িতে বসে দুপুরে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পর এরশাদ বাসায় ফিরে যান। পরে অনুষ্ঠানে তিনি টেলিফোনের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কথা বলেন।

    জাতীয় পার্টি একটি ‘কঠিন সময়’ মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, “সামনে আরও কঠিন সময় আসবে।তবে পার্টির জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। জাপা থাকবে, জাপা আছে। আমাদের সুদিন আসবে।”

    নির্বাচনী প্রচারের শুরুতে এরশাদ ৩০০ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কথা বললেও পরে মহাজোটে থেকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন। এখন মহাজোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির দর কষাকষি চলছে।

    সেদিকে ইংগিত করে এরশাদ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “এবার ৩০০ আসন না পেলেও নিরুৎসাহিত হওয়ার কোনো কারণ নাই।”

  26. মাসুদ করিম - ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ (১২:১৫ পূর্বাহ্ণ)

    সিঙ্গাপুর গেলেন এরশাদ

    ভোটের আগে অসুস্থতা নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যেই ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য’ সিঙ্গাপুরে গেলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

    সোমবার রাত পৌনে ১১টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজে তিনি রওনা হন বলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপ প্রেসসচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

    এরশাদের সঙ্গে গেছেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এরশাদ দুটি আসনে প্রার্থী হলেও বর্তমান সংসদ সদস্য বাবলু নির্বাচনে নেই।

    রাত সাড়ে ৯টায় বারিধারার পার্ক রোডের বাসা থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন এরশাদ। বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাতে জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ উপস্থিত ছিলেন।

    জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন ক্ষমতা রাঙ্গাঁর হাতে দিলেও এরশাদ নিজের অবর্তমানে ‘চেয়ারম্যানের সার্বিক সাংগঠনিক দায়িত্ব’ পালনের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের হাতে।

    একথা জানালেও এরশাদের অনুপস্থিতিতে হাওলাদারই জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব পেলেন কি না- সে প্রশ্নের উত্তর দেননি মহাসচিব রাঙ্গাঁ।

    ভোটের ডামাডোলের মধ্যে ‘রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায়’ অসুস্থ হয়ে পড়া ৮৮ বছর বয়সী সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যাওয়া-আসা করছিলেন।

    কিন্তু তার অসুস্থতার বিষয়ে জাতীয় পার্টি এবং তাদের জোটসঙ্গী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের পক্ষ থেকে একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দেওয়া হচ্ছিল সাংবাদিকদের।

    ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও তাতে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ভর্তি থাকা অবস্থায় তিনি এমপি নির্বাচিত হন এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পান।

    এবারও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় ‘অসুস্থ’ এরশাদের সিএমএইচে ভর্তির খবর এলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।

    নানামুখী গুঞ্জনের মধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত মাসের শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এরশাদের অসুস্থতা ‘রাজনৈতিক‘ নয়; তিনি ‘সত্যিই’ অসুস্থ। তাকে দুই-এক দিনের মধ্যে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে।

    কিন্তু জাতীয় পার্টির তখনকার মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার তখন সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেন ভিন্নভাবে। তিনি বলেন, এরশাদের অসুস্থতা ‘এমন কিছু নয়’। তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।

    এর মধ্যে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষে বেশ কয়েকজন নেতা ‘মোটা টাকায়’ মনোনয়ন বিক্রির অভিযোগ তোলেন এরশাদ ও হাওলাদারের বিরুদ্ধে। হাওলাদার সে সময় তা অস্বীকার করেন।

    ঋণ খেলাপের অভিযোগে পটুয়াখালী-১ আসনে হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেলে অনেকটা আকস্মিকভাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে পরিবর্তনের ঘোষণা আসে। এরশাদের ‘সন্তানতুল্য’ হাওলাদারকে সরিয়ে মহাসচিব করা হয় পার্টিতে ‘সরকারঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গাঁকে।

    গত সপ্তাহে দায়িত্ব নেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নতুন মহাসচিব রাঙ্গাঁ বলেন, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার পর শারীরিক অবস্থা নিয়ে এরশাদ ‘ভয়ে থাকেন’। এ কারণে তাকে হাসপাতালে যেতে হয়।

    “ঘুমের ডিস্টার্ব হলেও তিনি সিএমএইচে যান। বাসায় একা থাকেন বলে তার একলা লাগে, ভয় করে। তাছাড়া ইনফেকশনের ভয়ও আছে।”

    নতুন মহাসচিব দাবি করেন, এরশাদ এখন ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট ফিট’ থাকলেও চিকিৎসার জন্য তার দেশের বাইরে যাওয়া জরুরি। কিন্তু পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব শেষ না করে তিনি দেশের বাইরে যেতে চান না। মহাজোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত হলে ১০ ডিসেম্বরের পর হয়ত এরশাদ বিদেশে যেতে পারেন।

    এরই মধ্যে গত ৬ ডিসেম্বর অল্প সময়ের জন্য বনানীতে নিজের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে এরশাদ নেতাকর্মীদের বলেন, তার চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হচ্ছে, তাকে বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

    কিন্তু এরশাদের ভাই ও দলের কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ৮৮ বছর বয়সে ‘যতটা’ সুস্থ থাকার কথা, ‘ততটা’ সুস্থ এরশাদ আছেন। তার চিকিৎসা নিয়ে ‘ধূম্রজালের’ কোনো সুযোগ নেই।

    “ডাক্তাররা যদি বলেন, এখানে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে, তাহলে কেন তাকে নিয়ে যাব? তবে তারা যদি মনে করেন, এখানকার চিকিৎসা যথেষ্ট নয়, উনাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে হবে; তখন নিয়ে যাওয়া হবে। এটা নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠিত নই।”

    এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে ২৯টি আসন পাওয়ায় ‘অসন্তুষ্ট’ জাতীয় পার্টি মহাজোটের বাইরে প্রায় দেড়শ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে।

    তারা বলছেন, এত আসনে লাঙ্গলের প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ কিংবা তাদের জোট শরিক দলের প্রার্থীদের ভোটে ভাগ বসালে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে।

  27. মাসুদ করিম - ২৩ মার্চ ২০১৯ (৮:৫২ অপরাহ্ণ)

    কাদের বাদ, রওশন বিরোধীদলীয় উপনেতা

    কো-চেয়ারম্যানের পর জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির উপনেতার দায়িত্ব থেকেও ভাই জি এম কাদেরকে সরিয়ে দিয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান স্ত্রী রওশন এরশাদকে এই দায়িত্বে এনেছেন তিনি।

    এর আগে দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন রওশন।

    রওশনকে সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা মনোনীত করে শনিবার বিকালে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন এরশাদ।

    চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা এবং পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি প্রধান বিরোধী দলের উপনেতার পদ থেকে জনাব গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে অপসারণ করছি। এখন প্রধান বিরোধী দলের উপনেতার পদে বেগম রওশন এরশাদকে মনোনীত করা হল’।

    জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে চিঠিতে।

    ভাই জি এম কাদেরকে শুক্রবার রাতে দলের কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর তিনি সংসদে দলের উপনেতার পদে থাকবেন কি না, সে বিষয়ে পার্টির সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন এরশাদ।

    তবে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নয়, জি এম কাদেরকে দল থেকে হটিয়ে দিতে এরশাদ ‘একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’ বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খালেদ আখতার।

    গত ১ জানুয়ারি এরশাদ এক বিবৃতিতে দলে তার উত্তরসূরি হিসেবে জি এম কাদেরকে মনোনীত করার কথা জানান। এরপর এরশাদের অনুপস্থিতিতে কাদেরের দায়িত্ব গ্রহণের পর ‘রওশনপন্থি’ হিসেবে পরিচিত নেতারা নাখোশ মনোভাবও দেখিয়েছেন বিভিন্ন সভায়।

    বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জি এম কাদেরও সেই শীতল সম্পর্কেরই আভাস দিয়েছিলেন।

    এর আগে ২০১৬ সালেও ভাই কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করলে দলের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পরে জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যানে পদ সৃষ্টি করে তাতে স্ত্রী রওশনকে বসান এরশাদ।

    তার আগে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব করেছিলেন এরশাদ। রওশন সমর্থক হিসেবে পরিচিত বাবলুকে কটাক্ষ করে এক মন্তব্যের জন্য তখন একবার ভাই কাদেরকে সতর্ক করে নোটিস পাঠিয়েছিলেন এরশাদ।

    দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের সঙ্গেও জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব পুরনো। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নানা বৈঠকে দুজন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে স্বীকার করেছিলেন খোদ জি এম কাদের।

    এই দ্বন্দ্ব নিয়ে জানতে চাইলে খালেদ আখতার সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, “রওশন ম্যাডাম এখন দলে অ্যাকটিভ আছেন। “

    এরশাদ বিভিন্ন বলেছেন, তাকে ‘স্বাধীনভাবে’ রাজনীতি করতে দেওয়া হচ্ছে না।

    খালেদ আখতার বলেন, “স্যারকে ফ্রিলি রাজনীতি করতে দেওয়া হচ্ছে না। চাপের মুখে পড়েও তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন।”

    জি এম কাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, “যে ভাইয়ের পরিচয়ে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন, সেই ভাইকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ জি এম কাদেরের নেই। স্যার সম্পর্কে নানা সময়ে উল্টাপাল্টা কথাও তিনি বলেছেন।”

    জাতীয় পার্টিতে সদস্য হয়ে হুট করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা বনে যাওয়া, দলের পুরনো নেতাদের টপকে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এখতিয়ার পেয়ে যাওয়া নিয়ে দলে দেখা দিয়েছে কোন্দল। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর উপস্থিতিতে এ নিয়ে বাহাসে জড়িয়ে পড়েছিলেন নেতারা।

    একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ওয়ান ইলেভেনের আলোচিত সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়েও নাটক কম হয়নি। প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে তিনি ভেড়েন জাতীয় পার্টিতে। পরে তিনি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টাও বনে যান।

    তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে পারেন এ গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে খালেদ আখতার বলেন, “তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে কে কখন আসল, কে কার লোক, ভেতরে ভেতরে কি প্ল্যান আছে, কে জানে? স্যার (এরশাদ) তো আমাদের কারও কথা শোনেন না।”

    • মাসুদ করিম - ৫ এপ্রিল ২০১৯ (৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ)

      ভাইকে পদ ফিরিয়ে দিলেন এরশাদ

      ভাই জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দুই সপ্তাহ না গড়াতেই তাকে ওই পদ ফিরিয়ে দিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

      নিজের সিদ্ধান্ত বারবার পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বরাবরই আলোচিত এরশাদ বৃহস্পতিবার জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেন।

      দলের গঠনতন্ত্রের ২০/১ (ক) ধারার ক্ষমতাবলে চেয়ারম্যান এরশাদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

      গত ২২ মার্চ কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে ভাইকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এরশাদ। পরদিন সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকেও কাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

      সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদের দলে জি এম কাদেরের উপরে জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যানের পদে রয়েছেন তার স্ত্রী রওশন এরশাদ। রওশনের সঙ্গে কাদেরের বিবাদ জাতীয় পার্টির মধ্যে বরাবরই আলোচিত।

      দলে ‘বিভেদ’ তৈরি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে ‘ব্যর্থতার’ অভিযোগ তুলে গত ২২ মার্চ ভাই জি এম কাদেরকে কো চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেন এরশাদ।

      তবে গত মঙ্গলবার জাতীয় যুব সংহতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভাবি রওশনকে পাশে রেখে ঐক্যের কথা বলেছিলেন কাদের।

      তার দুই দিনের মধ্যে দলীয় পদ ফিরে পেলেন জি এম কাদের।

      তাকে পদ থেকে সরানোর পর জাতীয় পার্টির রংপুরের নেতারা গণপদত্যাগের হুমকিও দিয়েছিলেন।

      ভাইকে অন্য পদগুলোও এরশাদ ফেরত দিতে যাচ্ছেন বলে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

      ৯০ বছর পেরুনো অসুস্থ এরশাদ গত ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টিতে তার উত্তরসূরি হিসেবে ভাই কাদেরের নাম ঘোষণা করেছিলেন।

      এরপর এরশাদের অনুপস্থিতিতে জি এম কাদেরের দায়িত্বভার গ্রহণের পর ‘রওশনপন্থি’ বলে পরিচিত নেতারা নাখোশ মনোভাবও দেখিয়েছেন বিভিন্ন সভায়।

      এর আগে ২০১৬ সালেও ভাই জি এম কাদেরকে কো চেয়ারম্যান করলে দলের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পরে জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যানে পদ সৃষ্টি করে তাতে স্ত্রী রওশনকে আসীন করেছিলেন এরশাদ।

      তার আগে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব করেছিলেন এরশাদ। রওশন সমর্থক হিসেবে পরিচিত বাবলুকে কটাক্ষ করে এক মন্তব্যের জন্য তখন একবার ভাই কাদেরকে সতর্ক করে নোটিস পাঠিয়েছিলেন এরশাদ।

  28. মাসুদ করিম - ২৮ জুন ২০১৯ (৭:১৭ পূর্বাহ্ণ)

    এরশাদের চিকিৎসার অর্থ ‘জোগাড় করতে পারেনি’ জাপা

    অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকা দলীয় চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে না পারার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ।

    তিনি বলেছেন, “অসুস্থ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সিএমএইচে আছেন। এরশাদ সাহেব আজ মৃত্যুশয্যায় আছেন। উনার চিকিৎসার জন্য যে টাকার প্রয়োজন, সেই সংস্থান আমরা এখন পর্যন্ত করতে পারিনি।”

    বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট আলোচনায় দাঁড়িয়ে দলের চেয়ারম্যানের শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি নিজেদের অক্ষমতার কথা বলেন সংসদে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ রাঙ্গাঁ।

    সেনাপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর নয় বছর বাংলাদেশ শাসন করে গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ তার সমুদয় সম্পত্তি সম্প্রতি ট্রাস্টে জমা দিয়েছেন।

    ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এরশাদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার নগদ টাকার পরিমাণ ২৮ লাখের মতো লিখেছিলেন।

    হলফনামায় এরশাদ বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬ টাকা জমা রয়েছে। বিভিন্ন শেয়ারে তার বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৪ কোটি ১০ হাজার টাকা। তার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও এফডিআর ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা; ডিপিএস রয়েছে ৯ লাখ টাকার।

    এরশাদ লিখেছিলেন, গুলশান ও বারিধারায় তার দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার দাম এক কোটি ২৪ লাখ টাকার কিছু বেশি। এর বাইরে ৭৭ লাখ টাকা দামের একটি দোকান রয়েছে তার।

    গত বছর একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে সুস্থতা নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে ৯০ বছর বয়সী এরশাদকে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বপ্লতার সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি, লিভারসহ আরও নানা জটিলতাও রয়েছে।

    নির্বাচনের আগে সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসার পর থেকে বাসায়ই থাকছিলেন তিনি, দলীয় কর্মসূচিতে যাচ্ছিলেন না।

    গত বুধবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সকালেই জানিয়েছিলেন তার ভাই ও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

    এরশাদকে বিদেশে নেওয়ার অবস্থাও নেই বলে সংসদে জানান রাঙ্গাঁ।

    তিনি বলেন, “আমরা উনাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাব, সেই অবস্থাটাও উনার নেই। যদি বাইরে নেওয়ার মতো অবস্থা হয়, তাহলে আমরা তার উদ্যোগ নেব। আমরা আশা করি, তিনি সুস্থ হয়ে আবার সংসদে বসবেন।”

    এরশাদকে নিয়ে কটাক্ষ করায় বিএনপির সমালোচনাও করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব।

    তিনি বলেন, “অসুস্থ এরশাদ সাহেব সিএমএইচে, যমে-মানুষে টানাটানির অবস্থা বলতে পারেন, বিএনপি তাকে নিয়ে কটাক্ষ করছে ‘এই বৃদ্ধ-এই বুড়ো আর কতদিন বাঁচবে’। এ ধরনের অশালীন ভাষা বিএনপির মতো লোকেরা ব্যবহার করতে পারে?

    “যে মানুষটি নয় বছর দেশ শাসন করেছে। মানুষের জন্য এক বুক পানিতে নেমে যিনি ত্রাণ বিতরণ করেছেন। তার সম্পর্কে এই অশালীন ব্যবহার করে, অসৌজন্যমূলক আচরণ করে।”

    বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য কারাগারে দেওয়া গৃহকর্মীকে প্রত্যাহার করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান রাঙ্গাঁ।

    “এরশাদ সাহেব যখন জেলে ছিলেন, তখন তার বাথরুমেও সিসিটিভি দিয়েছিল। যেন উনি লাফ দিয়ে জেল থেকে পালিয়ে যাবেন। মনে হত আহম্মকের স্বর্গে বাস করছে। ওই আহম্মকের স্বর্গের প্রধানমন্ত্রী জানতেন না, তাকেও জেলে যেতে হবে। এরশাদ সাহেবকে দেখভালের জন্য কোনো লোক দেওয়া হয়নি। তাহলে মেইড সার্ভেন্ট প্রত্যাহার করা উচিৎ।”

    বিএনপির সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব আরও বলেন, “সংসদে আসলেন তবে দেরি করে। সেই তো নথ খসালি, তবে কেন লোক হাসালি। তারা (বিএনপি) সংসদে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমার কাছ থেকে সময় নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন!”

  29. মাসুদ করিম - ১৪ জুলাই ২০১৯ (৩:৪৭ পূর্বাহ্ণ)

    এরশাদ আর নেই

    গত ১০ দিন ধরে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। হাসপাতালটির চিকিৎসকরা রোববার সকাল পৌনে ৮টায় তার মৃত্যুর ঘোষণা দেন।

    এরশাদের রাজনৈতিক ও প্রেসসচিব এবং জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুনীল শুভ রায় এ খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।

    ৯০ বছর বয়সী এরশাদ মাইডোলিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন, রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতায়ও ভুগছিলেন তিনি; সেই সঙ্গে তার ফুসফুসে দেখা দিয়েছিল সংক্রমণ, কিডনিও কাজ করছিল না।

    ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার কথা জানাতে গিয়ে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের শনিবার বলেছিলেন, এরশাদের কোনো অঙ্গ আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না।

    “প্রতিদিন ডাকলে চোখে মেলে তাকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আজ তা করেননি। আসলে তার বয়স হয়েছে। বয়সের কারণে যে উন্নতি হওয়ার কথা তা হচ্ছে না।”

    বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত-সমালোচিত চরিত্র এরশাদ সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় আশির দশকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আট বছর দেশ শাসন করে গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন।

    আওয়ামী লীগের আগের সরকারে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বপালনকারী এরশাদ বর্তমান সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্বে ছিলেন।

    এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে সিএমএইচে ছুটে যান। তার সঙ্গে ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদও (শাদ এরশাদ) ছিলেন।

    এরশাদের আরেক ছেলে এরিক এরশাদ রয়েছেন বারিধারায় তার বাড়ি প্রেসিডেন্ট পার্কে। এরিকের মা বিদিশার সঙ্গে প্রায় দেশ দশক আগে এরশাদের বিচ্ছেদ ঘটে।

    এরশাদের জানাজা ও দাফনের বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, লাশ বারিধারার বাস ভবনে প্রথমে নেওয়া হবে, পরে নেওয়া হবে বনানীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে।

    গত কয়েক বছর ধরেই স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যায় ছিলেন এরশাদ। গত বছরের শেষ ভাগে সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসার পর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে খুব একটা দেখা যায়নি তাকে। এই সময়ে নিজের সম্পত্তি ট্রাস্টে দিয়ে যান তিনি।

    অসুস্থতার কারণে ভাই জি এম কাদেরকে উত্তরসূরি ঘোষণা করে তাকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও বসিয়ে যান এরশাদ; যা নিয়ে দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশনের সমর্থকরা রুষ্ট ছিলেন বলে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।

    গত ২২ জুন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এরশাদকে সিএমএইচে নেওয়া হলে রাখা হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে।

    অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলসহ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতিবাচক অনেক ধারা সৃষ্টির জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত এরশাদ। ৯০ এর গণআন্দোলনের সময় তাকে নিয়েই ‘বিশ্ব বেহায়া’ চিত্রকর্মটি এঁকেছিলেন শিল্পী কামরুল হাসান।

    আর্থিক কেলেঙ্কারি, নারী কেলেঙ্কারি, রাজনীতিতে একের পর এক ‘ডিগবাজি’ দিয়েও আলোচিত ছিলেন তিনি।

    তবে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের কাছে এরশাদ ছিলেন নায়কসম; তারা ‘পল্লীবন্ধু’ হিসেবেই ডাকতেন তাকে।

    এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে। অবিভক্ত ভারতে শিশুকাল কুচবিহারে কাটে তার। ভারত ভাগের পর তার পরিবার চলে আসে রংপুরে; পেয়ারা ডাকনামে পরিচিত এরশাদের পড়াশোনার শুরু রংপুরেই।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এরশাদ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় পশ্চিম পাকিস্তানেই ছিলেন এরশাদ। তার ভাষ্য, তিনি বন্দি হিসেবে সেখানে ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে অনেকে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

    পাকিস্তান থেকে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে ফেরার পর মামা রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়ার (বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী) সুপারিশে এরশাদকে সেনাবাহিনীর চাকরিতে ফেরত নেওয়া হয় বলে সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম তার বইয়ে লিখেছেন।

    বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হন তিনি; তখন তার পদমর্যাদা ছিল কর্নেল।

    ১৯৭৫ সালে এরশাদ ভারতের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে প্রতিরক্ষা কোর্সে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। ওই বছরের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি সেখানেই ছিলেন।

    ওই ঘটনার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হওয়ার পর তার উদ্যোগে ভারত থেকে এনে এরশাদকে করা হয় সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান, মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে।

    পাকিস্তান প্রত্যাগত এরশাদকে জিয়ার এই পদোন্নতি দেওয়া তখন ভালো চোখে দেখেননি মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তারা।

    জিয়া রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে ‘নির্বিষ’ এরশাদকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে সেনাপ্রধান করেন; কিন্তু সেই এরশাদই তার জন্য ‘কাল’ হয়ে দাঁড়ান বলে বিএনপি নেতারা এখন বলছেন।

    ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে যে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হন, তার পেছনে এরশাদই কলকাঠি নেড়েছিলেন বলে জিয়ার স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অভিযোগ।

    ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নেতা মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে তখন হত্যা করা হয়েছিল, সেই হত্যার মামলা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বইতে হয়েছে এরশাদকে, যদিও রায় হয়নি।

    জিয়া নিহত হওয়ার পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এরশাদ। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। নিজেকে সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে সামরিক শাসন জারি করেন তিনি, স্থগিত করেন সংবিধান। প্রথমে বিচারপতি এ এফ এম আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির পদে বসিয়েছিলেন এরশাদ। কিন্তু সব ক্ষমতা ছিল এরশাদেরই হাতে, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এরশাদের অনুমোদন ছাড়া কোনো ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ ছিল না আহসানউদ্দিনের।

    তার এক বছর পর আর রাখঢাক না রেখে আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে সরিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসেন এরশাদ; যার এই ক্ষমতারোহণ অবৈধ বলে পরে রায় আসে আদালতের।

    ক্ষমতায় বসার পর প্রথমে জনদল নামে একটি দল এরশাদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল, যা ছিল তার রাজনীতিতে নামার প্রথম ধাপ। এরপর বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় পার্টি’, মৃত্যু পর্যন্ত এই দলটির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতেই।

    এরশাদের নয় বছরের শাসনকালে অবকাঠামোর উন্নতির দিকটিই তার সমর্থকরা বেশি করে দেখান, তবে অবাধ দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরিতে এরশাদের সেদিকে আগ্রহ ছিল বলে সমালোচকরা বলেন।

    উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য কৃতিত্ব নেন এরশাদ; কিন্তু তাও তার রাজনৈতিক অভিলাষ বাস্তবায়নের ধাপ হিসেবেই দেখেন সমালোচকরা।

    এরশাদ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী এনে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যুক্ত করেন, যা বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র বদলে দেয় বলে সমালোচনা করলেও এরপর সংবিধান সংশোধন হলেও স্পর্শকাতর এই বিষয়টি কেউ স্পর্শ করতে চাননি।

    ঢাকার বাইরে হাই কোর্টের বেঞ্চ স্থাপনসহ আরও নানা পদক্ষেপে বিতর্কিত ছিল এরশাদের ক্ষমতার যুগ। তখন গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাও ছিল সীমিত।

    এর মধ্যেও এরশাদের সময়ে স্বাস্থ্য নীতি প্রশংসা পায় সমালোচকদেরও; তার গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্প ও পথশিশুদের জন্য পথকলি ট্রাস্টও ছিল আলোচিত।

    এরশাদের সময়েই ১৯৮৫ সালে গঠিত হয় দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক, তবে ভারত-পাকিস্তান টানাপড়েনে তা কখনই কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে একের পর এক বিদেশ সফর নিয়েও সমালোচিত ছিলেন এরশাদ।

    নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় দিতে চাইতেন এরশাদ; ক্ষমতায় থাকার সময় তার তার লেখা কবিতা-গান রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে শোনানো হত, তবে সেগুলো আদতে তার লেখা ছিল কি না, তা নিয়ে ছিল মানুষের সন্দেহ।

    দমন-পীড়ন দিয়ে নিজের শাসন বজায় রেখেছিলেন এরশাদ; তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ১৯৯০ সালে প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে হয় তাকে।

    ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ বন্দি হন তখন, তার বিরুদ্ধে হয় অনেকগুলো দুর্নীতির মামলা। কিন্তু তার মধ্যেই চমক দেখিয়ে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৫টি আসন থেকে বিজয়ী হন এরশাদ।

    এরপর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টিতে জনধিকৃত এরশাদই একটি অবস্থান পেয়ে গিয়েছিলেন।

    ওই সময় ৪২টির মতো মামলা হয়েছিল এরশাদের বিরুদ্ধে; তাকে বাগে আনতে এই সব মামলাগুলোর ব্যবহারও পরে দেখা গেছে। ওই সব মামলার একটিতে কেবল তার সাজা হয়েছিল।

    এরশাদকে ‘পুনর্বাসনে’ ক্ষমতায় যাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকায় মনোবেদনা প্রকাশ করে শহীদ শামসুল আলম মিলনের মা সেলিনা আখতার বলেছিলেন, “সারাবিশ্বে স্বৈরশাসককে দেশ ছাড়তে হয় নতুবা বিচারের মুখোমুখি করে কঠোর শাস্তি দিতে দেখা যায়। অথচ আমাদের এখানে স্বৈরশাসককে ছুড়ে না ফেলে ক্ষমতাসীন দলে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এটা কেবল বাংলাদেশে সম্ভব হয়েছে।”

    ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের শাসনামলে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান এরশাদ; দলের নেতৃত্বভার নেন স্ত্রী রওশন এরশাদের কাছ থেকে।

    এরপর বিভিন্ন সময় নানা ভাগ হয় এরশাদের দল। মূল দল নিয়ে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেন তিনি। এরপর টানাপড়েন ও নানা অনুযোগ করলেও আওয়ামী লীগের কাছাকাছিই থেকেছিলেন এরশাদ।

    ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসেন তিনি। নিজে হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতার আসনে বসেন তিনি। এই পদে থেকেই পৃথিবী থেকে চিরপ্রস্থান ঘটেছে তার।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.