তিনি শুধু প্রগতিশীল সমাজের সেনাপতিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশি চিন্তার একজন অভিভাবকও। এটা বুঝতেও আমাদের সময়ের দরকার হতে পারে। একটা ধাবমান অন্ধকার ছিল তাঁর আক্রমণের লক্ষ্যস্থল। [...]

‘সৃষ্টি করো সেই সব যা দেখে জনগণ বিদ্ধ করবে বিদ্রূপে। আর সেটুকুই হলে তুমি।’ — জাঁ ককতো

humaun_azad

আমরা কেউই আশা করিনি হুমায়ুন আজাদ (১৯৪৭-২০০৪) এত অচিরাৎ মৃত্যুকে গ্রহণ করবেন। আমরা বলতে যারা তাঁকে সেনাপতি জ্ঞান করতাম। বস্তুত পক্ষে তিনি শুধু প্রগতিশীল সমাজের সেনাপতিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশি চিন্তার একজন অভিভাবকও। এটা বুঝতেও আমাদের সময়ের দরকার হতে পারে। একটা ধাবমান অন্ধকার ছিল তাঁর আক্রমণের লক্ষ্যস্থল।

সাহিত্যের ইতিহাস মূলত অজ্ঞানতা আর অন্ধকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ইতিহাস। আর সমস্ত আবিষ্কার ভয় থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য। আগুন জ্বালানোর পর মানুষের ভয় অনেকখানি কেটে যায়। আলো সবসময় অন্ধকারের শত্রু। তবে আজাদের সময়ের সব চাইতে বড় অন্ধকার হচ্ছে অজ্ঞানের অন্ধকার। এটা প্রতিক্রিয়াশীল এবং সংক্রামক। উগ্র এবং আদেশপ্রবণ। অনেকটা দানবীয় তার স্বভাব। যার বিরুদ্ধে তিনি লড়েছিলেন। ভাবি যে হুমায়ুন আজাদ কি জানতেন না তাঁর শত্রুর অপশক্তি ও দেহকাঠামো সম্পর্কে? যদি তিনি তা জানার পরও সম্মুখসমরে লড়াই করতে মনস্থির করে থাকেন এবং লড়াই চালিয়ে যান আমৃত্যু, তাহলে তাঁকে অসম্ভব সাহসী, সৎ আলোকপ্রাপ্ত শহিদ সেনাপতি হিসেবে তকমা মারা যায়। হুমায়ুন আজাদের আঘাতের প্রক্রিয়া এত সরাসরি এবং এত সঠিক ছিল যে তাঁকে একমাত্র ফরাসি চিরবিদ্রোহী দার্শনিক মহাত্মা ভলতেয়ারের সাথেই তুলনা করা চলে। আর আমার বিশ্বাস, এই যুদ্ধে নামার আগেই তিনি মৃত্যুকে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সক্রাতেসকে জানতেন, জানতেন ভলতেয়ারকে, জানতেন গ্যালিলিওকে, জানতেন হাইপেশিয়াকে। তাঁর স্থান অন্ধকারের বিরুদ্ধে এই সব সৈনিকদের কাতারে খোদাই হয়ে গেছে।

যদিও তাঁর প্রায় উপন্যাসে তিনি যৌনতাকে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন আধুনিকতার নাম করে, তবুও মনে হয় তিনি মেজাজে মার্ক্সীয় ছিলেন। সমগ্র পৃথিবী জুড়ে যেখানে লেখক-সাহিত্যিকরা নব্য সিনিসিজমে মেতে উঠেছেন, যখন তাঁরা পৃথিবীব্যাপী বোমার শব্দে জেগে উঠে বলেছেন, ‘অনেক ঘুমাতে চেয়েছি আমি’ এবং তারপর পাশ ফিরে শুয়ে পড়েছেন, সেখানে তিনি জেগে ছিলেন এবং নির্ভয়ে বিহার করে চলেছেন এই পোড়োজমিতে এবং হাঁকিয়ে চলেছেন সম্মুখ-রণাঙ্গনে।

তিনিও তো পারতেন প্রথম দুনিয়ার কোনো দেশের পুঁজির গোলামি করতে বা পালিয়ে যেতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে। কিন্তু তিনি তা করেননি। এ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে তিনি নিজেকে একা মনে করতেন না, তিনি নিজেকে সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার অংশ মনে করতেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ‘অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না’। তাঁর কবিতাগুলোকে দেখি বক্তব্যে ভরা আর প্রেমে মহীয়ান। যদিও মহাকালের চেয়ে কবিতায় তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সমকালের দিকে। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী দিলেন : ‘সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’। আমাদের জন্য কত সত্য তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী! কবিতাকে তিনি ব্যবহার করেছেন অন্ধকার আর অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে। এক হিসেবে সমস্ত কবিতাই তা-ই। জীবনানন্দ যখন অবিরাম মহাকালিক বেদনার দিকে তাকিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, ‘তিমির হননে তবু অগ্রসর হয়ে’ — আমরা কি তিমিরবিলাসী? বস্তুত তাও অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে যুদ্ধেরই মহামন্ত্র। তাঁর কবিতায় এক দিকে প্রেম অন্যদিকে চূড়ান্ত বিদ্রোহ। শান্তি এবং যুদ্ধ, প্রেম ও বিচ্ছেদ, জরা ও যৌবন এভাবেই এগিয়ে চলেছে পৃথিবী।

চৈতন্যে গ্রন্থিত হয়েছিলেন তিনি। এড়িয়ে যাননি কোনো দুঃসময়-দুঃশাসনকে। সামরিক একনায়কদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিনি লিখেছেন জলপাই রঙের অন্ধকার-এর মতো বই, ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল-এর মতো বক্তব্যপ্রধান উপন্যাস। লিখেছেন প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ার নিচে, সীমাবদ্ধতার সূত্র। মূলত তাঁর কবিতা এবং প্রবন্ধ (ভাষা সংক্রান্ত সম্পাদনা, প্রবন্ধাবলি বাদে) ও উপন্যাসে উঠে এসেছে তাঁর স্ব-সংস্কৃতি-প্রগতির পথে প্রধান অন্তরায়সমূহের সমালোচনা। আর তিনি শুধু বিষয়কে উপস্থাপন করেননি, সাথে সাথে বিষয়সমূহকে রক্তাক্ত করেছেন। ধারালো তলোয়ার দিয়ে সেসবকে তিনি চেঁছে ফেলে দিতে চেয়েছেন। নতুন করে তিনি সম্পাদনা করেছিলেন আধুনিক বাঙলা কবিতা, নতুন করে সম্পাদনা করেছেন রবীন্দ্রনাথের কবিতা। মূলত তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিটাই ছিল অভিভাবক সুলভ। কিন্তু তিনি চপল বা চঞ্চল ছিলেন না। তাঁর বক্তব্যে আপাতগভীরতাও কম নয়। সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক প্রথায় সিদ্ধ হয়েও তিনি ছিলেন চূড়ান্ত প্রথাবিরোধী। কিন্তু তাঁকে কখনও রাগী তরুণ সম্প্রদায়ের লোক বলে মনে হয় না। চৈতন্যের দায় তাঁকে নাড়া দিয়েছিল।

জ্ঞান যাঁরা আহরণ করেন, মনে করি, তাঁরা সাথে সাথে আরও দুটি বস্তু আহরণ করেন : একটা হচ্ছে মারাত্মক কাণ্ডজ্ঞান, অন্যটা অসার কাণ্ডজ্ঞানহীনতা। কাণ্ডজ্ঞান একজন মানুষকে দায়বদ্ধ করে আর কাণ্ডজ্ঞানহীনতা তাঁকে করে তোলে আত্মপ্রেমে মাতোয়ারা। হুমায়ুন আজাদ প্রচণ্ড কাণ্ডজ্ঞানসম্বলিত ছিলেন। তিনি সবকিছুকে ঘেন্না করতে চেয়েছিলেন সবকিছুকে ভালোবেসে। তিনি কখনওই গ্রহণ করতে পারেননি এমন সাহিত্যকে যা সমাজকে স্থূলভাবে প্রকাশ করে। তিনি গ্রহণ করতে পারেননি মাথামোটা নেতাদের। তিনি বরদাস্ত করেননি চরিত্রহীন সাহিত্যিকদের। তিনি সহ্য করেননি সামরিক একনায়কদের। তিনি ছেড়ে দেননি সুবিধাবাদী আগাছা বুদ্ধিজীবীদের। সমস্ত অসাহিত্য, অপন্যাস, অকবিতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। মনঃতুষ্টির জন্য তিনি ছুটির দিনের অপন্যাস লেখেননি। লেখেননি কোনো দায়িত্বজ্ঞানহীন কাহিনি। তবে আক্রমণের পাশাপাশি তিনি অপেক্ষাকৃত বেশি মাত্রায় ব্যবহার করেছেন যৌনতাকে। মাঝে মাঝে তাঁর চরিত্রদের প্রতি সহানুভূতি রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাদেরকে মনে হয় যৌনদানব। তবু তাদের প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্যাটায়ার। অতিমাত্রায় যৌনতার ব্যবহারও আসে এক ধরনের হতাশা থেকে, যেমন হতাশায় থাকলে মানুষ অতিমাত্রায় যৌনপ্রবণ হয়। তিনি নির্দিষ্ট কোনো মতবাদে বিশ্বাস করতেন না আগেই বলেছি, যদিও তিনি মেজাজে মার্ক্সীয় ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ পাশ্চাত্য ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের মতো নয়। কেননা তিনি দায় এড়াতে পারেননি। এড়াতে পারেননি যে-সমাজে তিনি বাস করেন সেই সমাজকে। তাঁর উদ্ধত তলোয়ার ছিন্নভিন্ন করেছে বাঙালি মুসলমানকে। সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে ক্যাথলিক আর প্রোটেস্ট্যান্টদের মতো। হুমায়ুন আজাদ জন্ম দিয়েছেন অপক্ষাকৃত ধর্মীয় উদার মনোভাবের। ধর্ম সম্পর্কে বাঙালি মুসলমানের যে-অন্ধ রক্ষণশীল মনোভাব, সেটা থেকে তিনি বাঙালি মুসলমানদের পরিত্রাণ দিতে চাইলেন। যেখানে তাঁর মৃত্যু, সেখানেই অন্যার্থে তাঁর যাত্রা শুরু। তাঁর মৃত্যুর পর এখন অনেকেই তাঁকে নিরপেক্ষভাবে বুঝতে চাইবে।

চিন্তার জয় সেখানেই — তাঁর মৃত্যু নেই। তাঁর বই অন্য অনেক জনপ্রিয় অপন্যাসিকের চাইতেও কম বিকোয় না। কারা পড়ে তাঁর বই? বিশেষ করে পড়ে তরুণরা, পিছিয়ে পড়া নারীগোষ্ঠী। তিনি চেয়েছিলেনও তা-ই। তরুণদের ভেতর তিনি তাঁর চিন্তাসূত্র ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন, সেটাই তাঁর সফলতা। হুমায়ুন আজাদ যতটুকু কর্ষণ করেছেন, অন্য যে-কেউ সেখান থেকেই শুরু করতে পারে। তিনি তরুণদের জন্য পথটি অপেক্ষাকৃত সহজ করে দিয়ে গেছেন। এমন এক সমাজের কথা ভেবে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন যে-সমাজে চিন্তার স্বাধীনতা নেই। যেন আমরা বাস করছি কতিপয় অন্ধ মানুষের ভিড়ে। প্লাতোনের সেই গল্পটার মতো। আমরা যেন সেই সব লোক যাদের দু’হাত পিছন দিকে বাঁধা। আমরা কেবল সম্মুখ দেখতে পারি। আমরা কেবল ছায়া দেখে দেখে ভাবি এটাই জগৎ, এটাই পৃথিবী। হুমায়ুন আজাদ সেই লোক যিনি বন্দিত্ব থেকে মু্ক্তি পেয়েছিলেন আর তিনি আমাদের মাঝে এসে বললেন, ‘দেখো, আমরা কেবল ছায়াকেই জগৎ ভেবেছি। আসল জগৎ অন্য রকম।’ আর আমরা দুর্ভাগারা তাঁকে সবাই মিলে হত্যা করেছি। হুমায়ুন আজাদ নিহত হননি। অনেকে বলতে পারেন, কিন্তু হুমায়ুন আজাদের সাথে যে-রকম ব্যবহার আমরা করেছি — বইমেলা প্রাঙ্গণেই মূলত তিনি মরে গেছেন চাপাতির কোপে। বাকি অর্ধেক মরেছে ধিক্কারে, ঘৃণায়; তাঁকে খুন করার প্রচেষ্টার পরও তাঁর পরিবারকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি অন্ধকারের কৃমিরা। সরকার চিহ্নিত করতে পারেনি তাঁর আপাত-আততায়ীদের। সরকার দিতে পারেনি তাঁর পারিবারিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। শত্রুরা ফের তাঁর সন্তানকে ধরে নিয়ে যায় এবং হত্যার হুমকি দেয় । শত্রুদের ভয় কেবল তাঁর কলম আর দেখার চোখ। কিন্তু যা তিনি লিখে ফেলেছেন তা কী করে রুখবে তারা? যে-চিন্তার স্রোত তিনি প্রবাহিত করেছেন, কী করে বন্ধ করবে তারা তার প্রস্রবণ? তাঁর মৃত্যুর পর তিনি তলে তলে দ্বিগুণ শক্তিশালী। তাঁর লেখা নিয়ে নতুন করে ভাবছে মানুষ। তাঁর বই নতুন করে কেনার হিড়িক পড়েছে — কী লিখেছেন এই লোক যার জন্য হঠাৎ করে মরে যেতে হয়েছে!

কবিতা-উপন্যাস-প্রবন্ধ সব মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যাও কম নয়। শুধু হুমায়ুন আজাদ কেন, কোনো চৈতন্যসমৃদ্ধ মানুষই নিরাপদ নয়, ভিনদেশি অন্ধকারের কৃমিদের কাছে। আহত হওয়ার পর বিষক্রিয়ায় কোন পর্যায়ে তিনি ছিলেন তা আমাদের দ্বারা অনুমান করাও দুঃসাধ্য। তিনি ছিলেন মূলত হেমলক পান করার পর সক্রাতেস যে-অবস্থায় ধীরে ধীরে মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করে চলেছিলেন সেই অবস্থায়। তবু তাঁর জার্মানিতে যাওয়াটা বেঁচে থাকার এক ধরনের তৃষ্ণা বলা যায়। শেষপর্যন্ত পান করা হেমলকের অনন্ত বিষাদের আরকক্রিয়া থেকে নিস্তার মেলেনি তাঁর। তিনি ঢলে পড়লেন। তাঁকে আমরা নিহত হওয়া বলতে পারি। বলতে পারি আত্মহত্যাও। তাঁকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। এই দায়ভার আমাদের সবাইকে বহন করতে হবে। যারা তাঁকে খুন করতে চেয়েছিল আর আমরা যারা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি, তারা সমান অপরাধী।

হুমায়ুন আজাদ নেই; আমরা যারা আছি, এটুকু আশা নিয়ে আছি : তাঁর মৃত্যু এক ধরনের পুনর্জন্মের গান। তিনি উদাহরণ হয়ে আছেন নির্ভীক শহিদের, আত্মত্যাগকারী, মৃত্যুকে মহিমা দানকারী, প্রতিবাদী এক মহাপুরুষ হিসেবে।

১৪ comments

  1. কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২৬ অক্টোবর ২০০৯ (১১:০৬ অপরাহ্ণ)

    জাহেদ সারোয়ারের লেখাটি পড়তে পড়তে আমার একটি ব্যক্তিগত স্মৃতির কথাই মনে পড়ছে_ চট্টগ্রামের বিশদ বাঙলার এক প্রোগ্রামে আজাদের মেয়ে মৌলিকে বলেছিলাম, আপনি তো হুমায়ুন আজাদের বন্ধু নন, আমরা যারা তাকে তার আদর্শসহ ভালোবাসি তারাই তার প্রকৃত বন্ধু।
    আজাদের তেমনই আরেক বন্ধুর লেখা পড়ে তার অকৃত্রিম ভালোবাসা জানাই। লেখাটিও খুবই চমৎকার। বাক্যগঠন, চিহ্নের ব্যবহার, বাক্যের সরবতা/নীরবতা খুবই সুন্দর। তারই একটা উদ্ধৃতি দিয়ে আমার এ মতামত শেষ করছি_

    তিনি ছিলেন মূলত হেমলক পান করার পর সক্রাতেস যে-অবস্থায় ধীরে ধীরে মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করে চলেছিলেন সেই অবস্থায়। তবু তাঁর জার্মানিতে যাওয়াটা বেঁচে থাকার এক ধরনের তৃষ্ণা বলা যায়। শেষপর্যন্ত পান করা হেমলকের অনন্ত বিষাদের আরকক্রিয়া থেকে নিস্তার মেলেনি তাঁর। তিনি ঢলে পড়লেন। তাঁকে আমরা নিহত হওয়া বলতে পারি। বলতে পারি আত্মহত্যাও। তাঁকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। এই দায়ভার আমাদের সবাইকে বহন করতে হবে। যারা তাঁকে খুন করতে চেয়েছিল আর আমরা যারা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি, তারা সমান অপরাধী।

    হুমায়ুন আজাদ নেই; আমরা যারা আছি, এটুকু আশা নিয়ে আছি : তাঁর মৃত্যু এক ধরনের পুনর্জন্মের গান। তিনি উদাহরণ হয়ে আছেন নির্ভীক শহিদের, আত্মত্যাগকারী, মৃত্যুকে মহিমা দানকারী, প্রতিবাদী এক মহাপুরুষ হিসেবে।

  2. মাসুদ করিম - ২৭ অক্টোবর ২০০৯ (৭:৫৫ অপরাহ্ণ)

    যদিও তাঁর প্রায় উপন্যাসে তিনি যৌনতাকে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন আধুনিকতার নাম করে, তবুও মনে হয় তিনি মেজাজে মার্ক্সীয় ছিলেন।

    মার্ক্সীয় মেজাজের সাথে যৌনতার প্রশ্রয় দেয়া আধুনিকতার বিরোধ আছে কি না, জানি না। তবে এই যে হুমায়ুন আজাদের মধ্যে আপনি মার্ক্সীয় মেজাজ খুঁজে পেলেন, এটা কোনো মার্ক্সবাদীর কাছ থেকে একটু এনডোর্সড করে নেবেন, আর যদি এমন হয় যে আপনি নিজেই এনডোর্স করার ক্ষমতা রাখেন, তাহলে আর কোনো কথা নেই।

    • কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২৭ অক্টোবর ২০০৯ (১০:৪২ অপরাহ্ণ)

      ভাই মাসুদ করিম, সাচ্চা মার্ক্সবাদীর সাচ্চা লিস্ট কোথায় পাব বলুন তো? আজাদের মৌলিক লেখাসমূহ পাঠান্তে আপনিই সিদ্ধান্ত জানান তাকে মার্ক্সবাদী বলা যায় কিনা? তার মননশীল লেখা আর ইন্টারভিউ পড়ে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়েছে মার্ক্সের প্রতিই তার পক্ষপাত।

      • জাহেদ সরওয়ার - ২৮ অক্টোবর ২০০৯ (১০:২৭ পূর্বাহ্ণ)

        তবে এই যে হুমায়ুন আজাদের মধ্যে আপনি মার্ক্সীয় মেজাজ খুঁজে পেলেন, এটা কোনো মার্ক্সবাদীর কাছ থেকে একটু এনডোর্সড করে নেবেন, আর যদি এমন হয় যে আপনি নিজেই এনডোর্স করার ক্ষমতা রাখেন, তাহলে আর কোনো কথা নেই।

        জনাব মাসুদ করিমের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীর ভাইয়ের মন্তব্যের পর আর কোনো কথা হয় না। দেরীতে মন্তব্যটা দেখেছি বলে জবাব দিতেও দেরি হয়ে গেল। হুমায়ুন আজাদের শেষের দিকের দুএকটা উপন্যাস ছাড়া প্রায় সব লেখাই পড়েছি। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সাথে আড্ডার কথা বাদ দিলাম। তাঁর সব লেখার কোথাও মার্ক্সের ব্যাপারে উল্লেখ আছে কিনা মনে পড়েনা। কিন্তু আমি মেজাজে শব্দটা ব্যবহার করেছি। আজাদের পাঠক মাত্রেই জানেন তিনি সমস্যাটাকে দেখান রক্তাক্ত করেন কিন্তু সমাধান দেননা। সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মীয় কুপমন্ডুকতা, পুঁজিবাদ, বুর্জোয়াজিদের আইন ব্যবস্থা, সামরিক একনায়কতন্ত্র ইত্যাকার বিষয়ে তিনি ছিলেন সচেতন ও সোচ্চার। সমস্যাগুলোকে তিনি পাকিয়ে তোলে এমন অবস্থায় নিয়ে আসেন যে তিনি না বললেও বেশ বোঝা যায় তাঁর অবস্থানটা অনেকটা র‌্যাডিকেল বিপ্লবীদের মতোই। এ থেকেই কথাটা বলা।
        কিন্তু মাসুদ করিম সাহেবের ফয়সালা শোনে আমার কেন জানি মনে হল স্কুলের মাস্টার তাঁর কোনো ছাত্রকে বলছেন এই অংকটা হয়নি । অমুক টিচারকে দেখিয়ে আন। একজন লেখকের জন্য এটা অপমানজনক বৈকি? আমাদের সমালোচনার সংস্কৃতি সুস্থির ভাবে গড়ে না উঠার এটাও একটা উদাহরণ বটে। বিশেষ করে ব্লগে সমালোচনার ক্ষেত্রে বড় বেশী অস্থিরতা বিরাজ করে হয়তো ভার্চুয়াল জগত বলে। তবে জাহাঙ্গীর ভাইয়ের মতো আমিও বলব অন্য কারো কাছে এনডোর্স করতে যাবার দরকার কি। যখন গলদটা স্যার আপনিই আবিস্কার করলেন। শুভেচ্ছা মাসুদ করিম আর জাহাঙ্গীর ভাইকে।

        • মনজুরাউল - ১ নভেম্বর ২০০৯ (১২:৫২ পূর্বাহ্ণ)

          ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সাথে আড্ডার কথা বাদ দিলাম। তাঁর সব লেখার কোথাও মার্ক্সের ব্যাপারে উল্লেখ আছে কিনা মনে পড়েনা। কিন্তু আমি মেজাজে শব্দটা ব্যবহার করেছি।

          মাকর্সবাদী মেজাজ শব্দটাই নতুন মনে হলো!

          সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মীয় কুপমন্ডুকতা, পুঁজিবাদ, বুর্জোয়াজিদের আইন ব্যবস্থা, সামরিক একনায়কতন্ত্র ইত্যাকার বিষয়ে তিনি ছিলেন সচেতন ও সোচ্চার। সমস্যাগুলোকে তিনি পাকিয়ে তোলে এমন অবস্থায় নিয়ে আসেন যে তিনি না বললেও বেশ বোঝা যায় তাঁর অবস্থানটা অনেকটা র‌্যাডিকেল বিপ্লবীদের মতোই। এ থেকেই কথাটা বলা।

          হুমায়ূন আজাদের সাথে, তাঁর লেখার সাথে মাকর্সবাদের বা মাকর্সবাদী মেজাজের কোন দূরবর্তী সম্পর্কও নেই। কোন কালে ছিলও না।

          • জাহেদ সরওয়ার - ১ নভেম্বর ২০০৯ (১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ)

            ১/মাকর্সবাদী মেজাজ শব্দটাই নতুন মনে হলো
            ২/হুমায়ূন আজাদের সাথে, তাঁর লেখার সাথে মাকর্সবাদের বা মাকর্সবাদী মেজাজের কোন দূরবর্তী সম্পর্কও নেই। কোন কালে ছিলও না

            প্রিয় মনজুরাউল
            শুধুমাত্র তর্কের খাতিরে তর্ক করার জন্য আমি এই লেখা লিখিনি। চেষ্টা করছিলাম একজন মানুষকে তার লেখনির কাছে আমার যে কর্জ। সেটার স্বীকৃতি দেবার চেষ্টা করার।
            যাইহোক আপনার মন্তব্যটা যে কেবল তর্ক করার ছলে করা সেটা আপনার মন্তব্যের স্ববিরোধীতাই প্রমাণ করে।
            পহেলা নম্বরে আপনি বলছেন মার্কসবাদী মেজাজ শব্দটা আপনার কাছে নতুন। মানে হল এটাতো আপনি মানছেনই না তদোপরি শব্দটা আপনি শোনেন নাই পর্যন্ত আগে।

            আবার দুই নম্বরে আপনি বলছেন
            আজাদের সাথে মার্কসবাদী মেজাজের দূরবর্তী কোনো সম্পর্কও ছিলনা।
            তর্কবিদ নই সাধারণ পাঠকের দৃষ্টিতে ২য় নম্বর মন্তব্যে বুঝা যায় আপনি মার্কসবাদী মেজাজ শব্দটাকে নিজের করে ব্যবহার করেছেন। তার মানে হয়তো শব্দটা আপনি মেনে নিয়েছেন নয়তো আপনি শব্দটা আগে থেকে জেনে শুধুমাত্র তর্কের খাতিরে লেখাটাকে হেয় করার মানসে আপনার পহেলা নম্বর বাক্যগঠনটা ব্যবহার করেছেন।
            আপনি নিজেই বিবেচনা করে দেখুন।

            আপনার ২য় বাক্য গঠনে সম্পর্ক এবং ছিল’র সাথে ‘ও’ যুক্ত করে লেখাটার অনিবার্যতা এতবেশী বাড়িয়ে দিয়েছেন যে লেখাটার দুইটি অনুভুতি প্রকাশ পাচ্ছে।
            প্রথমত এটা শিশুসুলভ, হাস্যকর।
            ২য় হুমায়ূন আজাদ আপনার ব্যক্তিগত সম্পদ। যেন হুমায়ূন আজাদ সম্পর্কে আপনি যে রায় ঘোষণা করেবন তাই আমাদের মতো আম-জনতাকে মেনে নিতে হবে।

            যাইহোক মুল মন্তব্যের উদ্দেশ্য আপনি নিজেই জানেন। আপনি নিজেই এর আসল-সুদ বহন করেন। অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ।

  3. সুদীপ্ত শর্মা - ২৭ অক্টোবর ২০০৯ (১০:২৪ অপরাহ্ণ)

    ‘তিনি সবকিছুকে ঘেন্না করতে চেয়েছিলেন সবকিছুকে ভালোবেসে। তিনি কখনওই গ্রহণ করতে পারেননি এমন সাহিত্যকে যা সমাজকে স্থূলভাবে প্রকাশ করে। তিনি গ্রহণ করতে পারেননি মাথামোটা নেতাদের। তিনি বরদাস্ত করেননি চরিত্রহীন সাহিত্যিকদের। তিনি সহ্য করেননি সামরিক একনায়কদের। তিনি ছেড়ে দেননি সুবিধাবাদী আগাছা বুদ্ধিজীবীদের। সমস্ত অসাহিত্য, অপন্যাস, অকবিতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। মনঃতুষ্টির জন্য তিনি ছুটির দিনের অপন্যাস লেখেননি। লেখেননি কোনো দায়িত্বজ্ঞানহীন কাহিনি।’
    ‘বস্তুত পক্ষে তিনি শুধু প্রগতিশীল সমাজের সেনাপতিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশি চিন্তার একজন অভিভাবকও। এটা বুঝতেও আমাদের সময়ের দরকার হতে পারে।’

  4. মুক্তাঙ্গন - ২৯ অক্টোবর ২০০৯ (১:৪৮ পূর্বাহ্ণ)

    @ জাহেদ সরওয়ার

    লেখকরা মুক্তাঙ্গনের সাধারণ নীতিমালা ভঙ্গ করে একই পোস্ট একাধিক ব্লগ প্লাটফর্মে প্রকাশ করেছেন কিনা এ ধরণের বিব্রতকর তদন্ত থেকে এই প্লাটফর্মের মডারেটররা সাধারণত বিরত থাকার চেষ্টা করেন। লেখকরা নিজেরাই দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে ব্লগের নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন এটাই হল আমাদের আশাবাদ। মুক্তাঙ্গনের আর সব নীতির মতো এই নীতিটি প্রণয়নেও ব্লগারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে, যার অংশ আপনি নিজেও। দ্রষ্টব্য: ৭ নং নীতি

    আমাদের মনযোগ আকর্ষিত হয়েছে যে এই একই পোস্ট আপনি অন্য আরেকটি ব্লগেও প্রকাশ করেছেন অথচ আপনার পোস্টের কোথাও সেটা উল্লেখ করেননি বা পূর্বানুমোদন গ্রহণ করেননি। এসব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ব্যতিক্রমগুলোর মধ্যে আপনার পোস্টটি পড়ে না বলেই আমরা মনে করি। তাই, রিপোস্ট নীতির লঙ্ঘনের কারণে আপনার পোস্টটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হল, নিতান্ত বাধ্য হয়ে। আশা করবো ভবিষ্যতে মুক্তাঙ্গনের নীতিমালার প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল হবেন। এখানকার সব ব্লগারই তা করছেন, আপনার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হওয়ার কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই।

    ধন্যবাদ।

    • জাহেদ সরওয়ার - ৩০ অক্টোবর ২০০৯ (৮:৫৭ অপরাহ্ণ)

      সুপ্রিয় মুক্তাঙ্গন পরিচালক মশাইরা
      শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। বাসনা করি সকলে ভাল থাকুন। তথাকথিত নিয়ন্ত্রক ও রাষ্ট্র ও অন্যান্য কোনো আইনকে ঠিকমতো শ্রদ্ধা না করার কারণে আপনাদের নোটিশ বোর্ডটা আমার নজরে পড়েনি। আমার কিছু বলার নাই কারণ আপনাদের আইনে এটা সিদ্ধ। এটা সর্ম্পকিত কিছু বাতচিত হল মুক্তাঙ্গনকে আমি অন্যান্য বাংলা ব্লগ এর মত মনে করিনা। আমি মনে করি অন্যান্য ব্লগে চিন্তার যে অর্ধাঙ্গ বা সুত্র দিয়ে শটকার্ট মারার প্রবণতা সে সবকে পুর্ণাঙ্গ করেই কেবল মুক্তাঙ্গনে একটা লেখা দেবার কথা ভাবি। সেই হিসাবে আজাদের ওপর লেখাটাকেও সেরকম বলা যায়। এটার কেবল সামান্য অংশ অন্য একটা ব্লগে ছাপা হয়েছিল। লেখাটা কেবল পুর্ণাঙ্গ করেই মুক্তাঙ্গনে দিয়েছি। তা না হলে আমিতো অন্য ব্লগের লেখাটা ডিলিট করতে পারতাম তাই নয় কি। যাইহোক বর্তমান মুক্তাঙ্গনের পহেলা নম্বর লেখাটা একটু আগে সামহোয়ারে পড়লাম। ইচ্ছে হলে পড়তে পারেন। এ বিষয়ে আপনাদের আইন কি বলে। নাকি আপনাদের আইনও রাষ্ট্রীয় আইনের মতো কালা।

      • মুক্তাঙ্গন - ৩১ অক্টোবর ২০০৯ (১২:২৮ পূর্বাহ্ণ)

        জাহেদ সরওয়ার,

        প্রথমেই বলে নিই, আপনার এই লেখাটা মান এবং বিষয়বস্তুর দিক থেকে মুক্তাঙ্গনে ইতোমধ্যে প্রকাশিত বহু লেখার চেয়ে কোনভাবেই মানের দিক থেকে পিছিয়ে নেই। লেখার মান নির্ধারণের বিষয়টা সবসময়ই গোলমেলে, সেটা মেনে নিয়েই সাধারণভাবে বলতে পারি – ভাল লেখা বলতে সচরাচর আমরা যা বুঝে থাকি, এটি তেমনই একটি লেখা। এমন লেখা প্রথম পাতায় রাখতে পারলে আমরাই সবচেয়ে খুশী হতাম।

        আমার কিছু বলার নাই কারণ আপনাদের আইনে এটা সিদ্ধ।

        মুক্তাঙ্গন এর রি-পোস্ট সংক্রান্ত নিয়মটি কিন্তু কোন আইন না, এটি একটি নীতি (policy)। আর এই নীতির প্রণেতা কিন্তু এখানকার ব্লগাররা নিজেরাই, মডারেটররা নন। সুতরাং, এই “আইনটি” আপনারও! ওয়ার্কগ্রুপের একজন সদস্য হিসেবে আপনার ভালভাবেই জানা আছে এখানে নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো কিভাবে স্থির করা হয়। সমষ্টির দ্বারা প্রণীত এই নিয়মগুলোকে বাস্তবায়ন করতে মডারেশন টিম দায়বদ্ধ। বলা বাহুল্য এই মডারেশন টিমও সমষ্টির দ্বারাই মনোনীত, সবার পক্ষ হয়ে ব্লগটার প্রশাসনিক বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য।

        ন্যস্ত দায়িত্বগুলো মডারেশন টিমের সদস্যরা যথাসম্ভব সুষ্ঠভাবে পালন করার চেষ্টা করেন। এই বিষয়ে শুরু থেকেই টিমের দৃষ্টিভঙ্গী ছিল যতটা পারা যায় কম হস্তক্ষেপের (non-interventive), সেটা আপনিও লক্ষ্য করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হল, বেশ অনেক দিন পর্যবেক্ষণ করার পর টিম এই উপলদ্ধিতে আসতে বাধ্য হয়েছে যে এখানে এমন অনেকেই আছেন যাঁদের স্পষ্টভাবে মনে না করিয়ে দিলে তাঁরা নিজে থেকে এই নিয়ম-নীতিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে অক্ষম। বলে রাখা ভাল, এই অক্ষমতা কিন্তু সমষ্টির সিদ্ধান্তের প্রতি অবজ্ঞারই নামান্তর, যা এমন একটি মুক্ত প্লাটফর্মের প্রাপ্য নয়।

        এসব কারণে বেশ কিছু দিন হল – এই নিয়মগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আমাদের। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, তা প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রয়োগ করতে হবে আমাদের এখন থেকে (অনুমোদিত ব্যতিক্রম সাপেক্ষে)। এর যৌক্তিকতা তো আপনার না বোঝার কথা না। আর রি-পোস্ট নীতিরও যৌক্তিকতা রয়েছে, যা ব্লগমন্ডলের পুরনো সদস্য হিসেবে আপনার অজানা থাকার কথা না।

        যাইহোক বর্তমান মুক্তাঙ্গনের পহেলা নম্বর লেখাটা একটু আগে সামহোয়ারে পড়লাম। ইচ্ছে হলে পড়তে পারেন। এ বিষয়ে আপনাদের আইন কি বলে। নাকি আপনাদের আইনও রাষ্ট্রীয় আইনের মতো কালা।

        আপনি সম্ভবত ফারুক ওয়াসিফের পোস্টটির (‘বাহের দেশের ভাওয়াইয়া নারীর ব্যথা’) কথা বোঝাতে চেয়েছেন। যত দূর জানি সেটি প্রথম আলো পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে। আপনি যদি অন্য কোন ব্লগেও সেটা দেখে থাকেন তাহলে অনুরোধ করবো তার লিন্ক আমাদেরকে লিখে জানানোর। আগেই আপনাকে জানানো হয়েছে, পারতপক্ষে এ ধরণের গোয়েন্দাগিরি আমরা করতে চাই না, কারণ, তা লেখক-মডারেটর উভয়ের জন্যই সমান বিব্রতকর।

        ওয়ার্কগ্রুপের সদস্য হিসেবে আপনার কাছে এই ব্লগ আরও দায়িত্বশীলতা এবং সহযোগিতা আশা করে। কারণ, আপনি এর অবিচ্ছেদ্য অংশ, অন্তত আমরা তাই ভাবতে চাই। নিয়মের বাস্তবায়নে সহায়তা বলুন, সার্বিক মানোন্নয়নে সহায়তা বলুন, আর বাংলা ব্লগ জগতে স্বীয় স্বাতন্ত্র্য নিয়ে বিকাশ বলুন – এর কোনোটাই আপনার এবং সবার সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব না। কোন ধরণের ফ্যাসিস্ট নীতি তো আমরা ব্লগারদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার কথা বলছি না। আবার মডারেশন করা না করা বিষয়ে শিশুসুলভ (এবং যৌক্তিক ভিত্তিহীন) কোন স্বেচ্ছাচারী দায়িত্বহীন দর্শন আঁকড়ে ধরারও পক্ষপাতি আমরা নই।

        অন্তত দু’বার লক্ষ্য করা গেছে, মডারেশন টিমের সাথে আদান প্রদানে আপনি কিছুটা শ্লেষাত্মক/ব্যাঙ্গাত্মক ভাষা (“মশাই”, “কালা”) বেছে নিয়েছেন। শব্দের এমন অসতর্ক-অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ কতটা প্রয়োজনীয়, তা বিবেচনার ভার আপনার ওপরই ছেড়ে দেয়া গেল। মুক্তাঙ্গনের লেখক মন্তব্যকারীগণ মন, মনন এবং তার প্রকাশে পরিণত মানসিকতার এবং পরিপক্ক্বতার পরিচয় দেবেন , তাই আমাদের প্রত্যাশা। আর মুক্তাঙ্গন মূলত লেখক, শিল্পী, কবি, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী, পেশাদার এবং গবেষকদের ব্লগ। সুতরাং, অন্য অনেক বাংলা ব্লগে মডারেশন ইত্যাদি নিয়ে যে ধরণের বিতর্ক কিংবা বাদানুবাদে সময় দেয়া হয় (ব্লগের পরিবেশ উষ্ণ রাখতেই সম্ভবত) এখানকার কারোরই সে সবে সময় দেয়ার মতো অতিরিক্ত সময় নেই। এই যে এতো সময় নিয়ে আপনাকে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা হল, মূলতঃ লেখকদের প্রতি শ্রদ্ধার নীতিবশতই, সেই সময়টুকুও কিন্তু মডারেশন টিমের কর্মীদের অন্য আরও জরুরী কোন চলমান প্রকল্প থেকে ধার করে এনে দিতে হল।

        ভাল থাকুন।

  5. মুক্তাঙ্গন - ৩১ অক্টোবর ২০০৯ (৩:০৫ পূর্বাহ্ণ)

    মডারেশন টিমের একজন এই মাত্র আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে সামহোয়ার ইন এর লিন্কে আপনার পোস্টটি এখন আর নেই। সেটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সে বিবেচনায় আপনার এই পোস্টটি পুনরায় প্রথম পাতায় ফিরিয়ে আনা হল।
    ধন্যবাদ।

  6. মনজুরাউল - ২ নভেম্বর ২০০৯ (১:১১ পূর্বাহ্ণ)

    আপনার ২য় বাক্য গঠনে সম্পর্ক এবং ছিল’র সাথে ‘ও’ যুক্ত করে লেখাটার অনিবার্যতা এতবেশী বাড়িয়ে দিয়েছেন যে লেখাটার দুইটি অনুভুতি প্রকাশ পাচ্ছে।
    প্রথমত এটা শিশুসুলভ, হাস্যকর।
    ২য় হুমায়ূন আজাদ আপনার ব্যক্তিগত সম্পদ। যেন হুমায়ূন আজাদ সম্পর্কে আপনি যে রায় ঘোষণা করেবন তাই আমাদের মতো আম-জনতাকে মেনে নিতে হবে।

    প্রিয় জাহেদ সরওয়ার।
    আপনার বিশাল প্রতিউত্তর থেকে এটুকু মনগ্রাহ্য হলো। ধন্যবাদ আপনাকে। শব্দের বিভিন্নমূখিনতা নিয়ে যে গবেষণাকর্ম করে বসলেন সেটি দোষের কিছু নয়। কারো কারো এমন হয়, প্রয়োজনীয় কথাটি অল্পে শেষ করতে পারেন না। এটি হয় অতিপঠনজনিত অথবা উল্টোটা। যাই হোক আপনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাহাসে যাচ্ছিনা। শুধু একটি বিনীত প্রশ্নঃ

    তবুও মনে হয় তিনি মেজাজে মার্ক্সীয় ছিলেন।

    এই ব্যাপারটি একটু বিশদে বলবেন কি? আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানভান্ডারের সব টুলস নেড়ে-চেড়ে দেখলাম, তার পড়া বইগুলো মনে মনে আউড়েও নিলাম, কিন্তু “মেজাজে মাক্সীয়” আলামতটি খুজেঁ পেলামনা!আশা করি এই নাদানের ভ্রান্তিমোচন করবেন। শুভেচ্ছা।

  7. নির্ঝর নৈঃশব্দ্য - ২ নভেম্বর ২০০৯ (১:৪৩ পূর্বাহ্ণ)

    দাদা, আপনার এই লেখাটি আজ পড়লাম।
    জার্মানিতে জ্ঞানী হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করা হয়েছে। কেননা মদ খেয়ে মরে যাওয়ার মতো দায়িত্বহীন মানুষ তিনি ছিলেন না। যারা তাঁকে দেশে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছিলো তাদের জন্যে দেশের বাইরে তাঁকে হত্যা করা অনেক সহজ।
    শুভকামনা।

  8. সবাক - ৭ নভেম্বর ২০০৯ (১১:০৮ অপরাহ্ণ)

    শেষপর্যন্ত পান করা হেমলকের অনন্ত বিষাদের আরকক্রিয়া থেকে নিস্তার মেলেনি তাঁর।

    এখানে হেমলক কি রূপক অর্থে ব্যবহৃত, নাকি জ্ঞাত অর্থে?

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.